• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বর্ষাবাস

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ আগস্ট ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

সোমবার সকাল থেকে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় আর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আষাঢ়ী পূর্ণিমা শুরু হয়েছে। আষাঢ়ী পুর্ণিমা থে‌কে শুরু করে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস পালন করবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এসময় সংযম পালনের মধ্য দিয়ে ন্যায়, সৎ পথ চলা, বুদ্ধের জীবনানুসরণ ও পরোপকার এর ম‌ধ্য দি‌য়ে তিন মাস অতিক্রম করবে প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিবার।

বর্ষাবাস-

বর্ষাবাস। বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের আত্মবিশ্লেষণাত্মক এবং অধিষ্ঠানমূলক শিক্ষাব্রতবিশেষ। এ সময় ভিক্ষুরা বিধিবদ্ধ শিক্ষা ও একান্ত ধ্যান-সমাধির চর্চা করেন। এ ব্রত জীবনকে সত্যিকার মুক্তির পথে নিয়ে যায়। 

বুদ্ধের সময় থেকেই এ ব্রত পালিত হয়ে আসছে।  বুদ্ধদেব স্বয়ং রাজগৃহে অবস্থানকালে ভিক্ষুসংঘের জন্য এই বর্ষাবাস বিধান প্রবর্তন করেন। বর্ষাবাস পালনের উদ্দেশ্য তৃণ-গুল্মাদির জীবন রক্ষা করা। বর্ষায় জলসিক্ত ও কর্দমাক্ত পথে ভ্রমণকালে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে সবুজ তৃণ, চারাগাছ এবং ক্ষুদ্র প্রাণী পদদলিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাই বুদ্ধদেব এ সময়ে সর্বাধিক পরিভ্রমণ ত্যাগ করে নিজ নিজ বিহারে অবস্থানপূর্বক অনুশীলনমূলক ধর্মীয় বিষয়াদি (শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা) চর্চা করার বিধান দিয়েছেন। 

তিনি নিজেই আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা এই তিন মাস বর্ষাবাসের সময় নির্ধারণ করেন। তবে কোনো ভিক্ষু অসুস্থতার কারণে আষাঢ়ী পূর্ণিমায় বর্ষাবাস অধিষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তিনি মধুপূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) থেকে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস পালন করতে পারেন।

বর্ষাবাস যাপনকালে ভিক্ষুগণ প্রতিটি অষ্টমী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে প্রাতিমোক্ষ আবৃত্তি, আপত্তি দেশনাসহ নানাবিধ বিনয়ভিত্তিক কর্ম সম্পাদন করেন। এ সময় তাঁরা প্রতিটি উপসথ দিবসে গৃহীদের কাছেও ধর্মদেশনা করেন এবং গৃহীদের শীলাদি প্রদানসহ ধর্মীয় জীবনাচারে উপদেশনা প্রদান করেন।

প্রত্যেক ভিক্ষুকেই বর্ষাবাস পালন করতে হয়, না করলে ‘দুক্কট’ অপরাধ হয়। বর্ষাবাস পালনের সঙ্গে অধিষ্ঠানব্রত, অর্থাৎ ধ্যান, সমাধি ও বিদ্যাভ্যাসের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়। বর্ষাবাসকালীন ভিক্ষুসংঘের পাশাপাশি বৌদ্ধ গৃহী বা উপাসক-ঔপাসিকারাও প্রতিটি উপসথ তিথিতে অষ্টশীল বা উপসথ শীল পালন করে অধিষ্ঠান ব্রত যাপন করেন এবং  শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করেন।

বর্ষাবাস,  প্রবারণা পূর্ণিমা ও  কঠিন চীবর দান এই তিনটি উৎসব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বর্ষাব্রত পালন না করলে কোনো ভিক্ষু কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারেন না, আবার কঠিন চীবর গ্রহণ করতে না পারলে ভিক্ষুবিনয় অনুসারে ভিক্ষুগণ বহুবিধ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। 

বর্ষাবাস পালনের অন্য একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তা হলো এই বর্ষাব্রত গণনা করেই ভিক্ষুজীবনের বয়স নির্ধারণ করা হয়, অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ নির্ধারিত হয়।

বর্ষাবাস পালনের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান প্রয়োজন। যেখানে উপযুক্ত দায়ক বর্তমান এবং যেখানে পড়াশোনা ও ধ্যানাভ্যাসের যথাযথ সুবিধা রয়েছে, এমন একটি স্থানই বর্ষাবাসের জন্য উপযুক্ত। বুদ্ধের সময় প্রাচীন ভারতের গয়া, উরুবেলা, রাজগৃহ, নালন্দা, পাটলিপুত্র, একনালা, শ্রাবস্তী, সাকেত, উজ্জয়িনী প্রভৃতি স্থান বর্ষাবাস যাপনের জন্য খুবই উপযোগী ছিল। বর্ষাবাসের সময় গুহাবাসের মধ্যে গৃধ্রকূট, চোরপ্রপাত, ইসিলি, সপ্তপর্ণী, সীতবন, সপ্পসোন্ডিক পভার ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল।

Place your advertisement here
Place your advertisement here