• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

বিয়ের পরে সুনীলের মাত্রাবিহীন জীবনে যতি পড়ল: স্বাতী

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

[সুনীল বিয়োগের ছয় বছর পার হলো। আজ তার জন্মদিন। ছন্নছাড়া মানুষটির পাশে থেকে শক্তি যুগিয়েছেন তার সহধর্মিনী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যে তার অবদানও কম নয়। লিটলম্যাগ কৃত্তিবাসের সম্পাদক তিনি। সুনীল ছাড়া কেমন আছেন স্বাতী? এটা সাহিত্যপ্রেমীদের পুরনো প্রশ্ন। তাই ডেইলি বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন একটি সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক অমিত গোস্বামী।]

অমিত গোস্বামী: স্বাতীদি, আগে জানতে চাই আপনি কেমন আছেন?

স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়: হাঁটুর ব্যাথা বাদ দিলে ভালোই আছি। তবে এখন আগের মত সবাই আসেন না। তাই অনেকটা সময় একা কাটে।

অমিত: সেটা ঠিক। এখন তো আর সুনীলদা নেই। তাই মরশুমী পাখিদের ভিড় নেই। পুরোনরা সারগেদরা তো আসেন?

স্বাতী: হা…হা… ভাল বললে। তা আসেন। এই তো তুমি এসেছো।

অমিত: আপনিও তো যান বেশ কিছু অনুষ্ঠানে। এটা খুব ভালো। আপনাকে পাঠকরা কিন্তু দেখতে চায়। আপনি কৃত্তিবাসের সম্পাদক। কাজেই সাহিত্যবাসরে আপনি যাবেন সেটা আমরাও চাই

স্বাতী: তাই তো যাই। এর মধ্যেও তো গেছি। আসলে সুনীলকে ছাড়া একার জীবনে অভ্যস্থ হয়ে গেছি।

অমিত: সেই সুনীলদার কবিতার লাইনের মত? ‘ভালবাসা চলে যায় এক মাস সতেরো দিন পর।’

স্বাতী: আরে না, না। ওসব কবিতার লাইন। সত্যি না। আসলে আমার কি আর করার আছে! তাই...

অমিত: আচ্ছা স্বাতীদি, সুনীলদা তো ভীষণ সরাসরি কথা বলতেন। যেমন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে বলেছিলেন যে বাংলাভাষা সম্পর্কে পৃথিবীর কম মানুষের ধারণা আছে। হিন্দি তবু জানে। কথা শুনে তার তখনকার বন্ধুরা বেশ রুষ্ট হয়েছিল।

স্বাতী: অন্য কেউ ততটা নয়। শক্তি একটু চেঁচামেচি করেছিল। কিন্তু কথাটা তো সত্যি।

অমিত: মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা, প্রেম নিয়ে প্রকাশ্যে লেখা এমন কি আত্মপ্রকাশ উপন্যাসে নায়কের মদ খাওয়াকে প্রকাশ্যে তুলে ধরা সবই তো বাংলা সাহিত্যের জগতে প্রথম ও বৈপ্লবিক ছিল। আপনার খারাপ লাগেনি?

স্বাতী: মোটেই না। আমি ওর স্পষ্টবাদিতাকে সম্মান করতাম। কাউকে ভাললাগা বা প্রেম করা অন্যায় না হলে সেটা স্বীকারোক্তির মধ্যে অন্যায় কোথায়?

অমিত: সেজন্যেই কি আপনি ডাকাবুকো সুনীলকে বিয়ে করেছিলেন?

স্বাতী: আমার সঙ্গে সুনীলের বিয়ে হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পরিবারের মেয়েকে দমদমের কলোনিতে বিয়ে দিতে কোনো বাবা-মা রাজী হয়? সুনীল আমাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিল-‘আমরা উদ্বাস্তু, খুব সাধারণ, তোমার কষ্ট হবে।’ আমার তখন সেসব শোনার মন ছিল না। আমার কানে তখন বাজছে – ভ্রু-পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে।

অমিত: তারপরে?

স্বাতী: আমার বিয়ের ব্যাপারে অদম্য মন দেখে সুনীল এগিয়ে এল। আমার আত্মীয়দের ঘোরতর আপত্তি। সুনীল একদিন এক আত্মীয়র মুখেড় ওপর বলেই বসল ‘আপনাদের মেয়ে যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু সে যদি আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমি তাকে বিয়ে করবই’।

অমিত: তারপরে বিয়ে হল?

স্বাতী: আমি অনমনীয় থাকায় আমার বাড়ি মেনে নিতে বাধ্য হল। বিয়ে হল ১৯৬৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ২০/৫ অশ্বিনী দত্ত রোডে। বৌভাত ৩২/২ যুগীপাড়া দমদমে। বিয়ের দিন বেশ সেজেছিল সুনীল। কিন্তু আমার আত্মীয় পরিজনরা ধরেই নিয়েছিলেন যে মেয়েটা অবশেষে জলে পড়ল।

অমিত: বিয়ের পরে?

স্বাতী: স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে বিয়ের পরে সুনীলের মাত্রাবিহীন জীবনে যতি পড়ল। আসলে সুনীল খুব একটা অগোছালো বাউন্ডুলে কখনই ছিল না। নিয়মাবদ্ধ জীবনই কিন্তু ওর ছিল।

অমিত: সেটা বুঝি। নাহলে শব্দসংখ্যা সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে গেলেন কিভাবে!

স্বাতী: লেখার ব্যাপারে সুনীল ভীষণ নিয়মনিষ্ঠ ছিল। সকাল থেকে বেলা একটা অবধি ছিল ওর লেখার সময়। পরে অবশ্য মধ্যরাত অবধি লিখতে হয়েছে চাপের কারণে।

অমিত: সুনীলদা, নিজে তো প্রায় সব পুরস্কার পেয়েছেন, সেটা নিয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু দিয়েছেন অনেক পুরস্কার অর্থাৎ নিজের প্রভাব খাটিয়ে বেশ কিছু কবিকে পুরস্কার দিয়েছেন যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।

স্বাতী: জানি, বিশেষত এক মহিলা কবিকে পুরস্কার দেয়া নিয়ে কুৎসিত ভাষায় সুনীলকে আক্রমণ করা হয়েছিল। সুনীল নির্বিকার। বলেছিল যে মেয়েদের কবিতাচর্চাকে উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য। মহিলা বলে ভালো লিখলেও পুরস্কার পাবে না এ কেমন কথা! পুরস্কার দেয়ার সময়ও যদি পুরুষতান্ত্রিকতা চলে তবে তো মুশকিল।

অমিত: আপনার খারাপ লাগে নি যেভাবে সুনীলদাকে আক্রমণ করা হয়েছিল...

স্বাতী: তার কোনো হ্যাংলামি ছিল না মেয়েদের নিয়ে। কোনো মেয়ের জন্য নিজের অমূল্য জীবনকে থামিয়ে দেবার মানুষ তিনি ছিলেন না। কাজেই আমি এসব সমালোচনা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।

অমিত: সুনীলদা একবার বলেছিলেন যে বাংলাদেশ যা চায়, ভারতের সবই দিয়ে দেয়া উচিত, বিনা প্রশ্নে...

স্বাতী: অবশ্যই দেয়া উচিত। একটা দেশ যারা আয়তনে ছোট এবং অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের মূল প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সব রকম সাহায্য করা উচিত।

অমিত: কথাটা কি সুনীলদা’র বাংলাদেশপ্রীতির কারণে বললেন।

স্বাতী: না, না, এটা আমারও অভিমত। সুনীলের বাংলাদেশ প্রীতি ছিল প্রথম থেকেই। সেটা শুধু দেশের টান নয়, ভাষার টানও বটে। সীমান্তবেড়ার ধার সে ধারত না। বেলাল, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, হুমায়ূন আহমেদ এরা তো ছিলেন প্রাণের বন্ধু।

অমিত: বর্তমান সাহিত্য সম্পর্কে কী বলবেন?

স্বাতী: ভালোই হচ্ছে তো। সবাই তোমরা কী সুন্দর লিখছো। সুন্দর কবিতা। সুন্দর গদ্য। সাহিত্য কি থেমে থাকে?

অমিত: আর বাংলাদেশের সাহিত্য?

স্বাতী: ওখানে হুময়ূনের পরে যারা লিখছেন তাদের সবার গদ্য এরমধ্যে কম পড়েছি। তবে কবিতাতে ওরা খুব উন্নতি করেছে। কৃত্তিবাস-এ দেখছি তো।

অমিত: স্বাতীদি, এবার শেষ করব। সুনীল দা’র জন্মদিন উপলক্ষ্যে এবার কী প্রোগ্রাম?

স্বাতী: সকাল থেকে লুচি ও পায়েস নিয়ে বসে থাকব। যারা আসবেন তাদের দেব। বিকেলে এক জায়গায় যাওয়ার কথা আছে। দেখি কী করি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here