• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাপী একই দিনে ঈদ সম্ভব নয়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ মে ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

ইসলামে মাসের সময় নির্ধারক হলো চাঁদ, দিনের সময় নির্ধারক সূর্য। ঈদ, রোজা ইত্যাদির সময়কাল নির্ধারিত হয় চন্দ্রোদয়ের হিসাবে। রোজা/ঈদ পালনের Natural cycle (প্রাকৃতিক চক্র) অস্বীকার করা অবৈজ্ঞানিক। কোনো স্থানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দিনের শুরু হয়, তেমনি অমাবস্যার পর চন্দ্রোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাসগণনা শুরু হয়ে যায়।

উদয়স্থলের বিভিন্নতা বেশির ভাগ আলেমের কাছেই গ্রহণীয়। ইমাম ইবনু আব্দিল বার এ বিষয়ে ‘ইজমা’ (মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত ঐকমত্য) উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে ‘দূরবর্তী শহর থেকে একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না। যেমন—স্পেন ও খোরাসানের মধ্যকার দূরত্ব বা ভৌগোলিক ব্যবধান।’

তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে একই দিনে ঈদ পালনের যুক্তি দাঁড় করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ১০০ বছর আগেও যখন উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ছিল না, তাহলে কি এক হাজার ৩০০ বছর ধরে যেদিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ, সেদিন তথা ঈদের দিনেও রোজা রাখা হতো? শুধু প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাবে এমনটা হতো? মহান আল্লাহ কি কিয়ামতের দিন মুসলিম উম্মাহর এক হাজার ৩০০ বছরের আমল ভুল ও বাতিল বলে ঘোষণা করবেন?

এবার আসুন, দেখি কোরআন-সুন্নাহ সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন সম্পর্কে কী বলে।

পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৯ নম্বর আয়াতে উদয়স্থলের বিভিন্নতা, মাসগণনার বিভিন্নতার প্রমাণ রয়েছে। আয়াতে ‘হিলাল’ বা চাঁদ শব্দের বহুবচন ‘আহিল্লা’ শব্দ দ্বারাই উদয়স্থলের বিভিন্নতা প্রমাণিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, 

‘জিজ্ঞাসে তোমারে যদি চাঁদের বৃদ্ধি ক্ষয়

বলে দিও তাহা তুমি যে কারণে হয়।

তাদেরে বলে দাও গণনার কারণে

সময় নিরূপণ হয় হজের ক্ষণ।’

(কাব্যানুবাদ, সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৯)

‘আহিল্লা’ অর্থ নবচাঁদসমূহ। অর্থাৎ চাঁদ একই সময়ে সব জায়গায় দেখা যায় না। এ জন্যই একাধিক নবচাঁদ, মাসগণনার পার্থক্য নির্দেশ করে। ফলে একই দিনে ঈদ সম্ভব নয়।

দেখুন, সাগরপারে জোয়ার-ভাটা স্থানীয় সময় অনুসারে হয়, যার সম্পর্ক চাঁদের সঙ্গে। পৃথিবীর সর্বত্র জোয়ার-ভাটা একই সময়ে হয় না। সারা বিশ্বে তো একই নিয়মে ঋতুচক্র আবর্তিত হয় না। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাকাল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে শুরু হয়। যদি বিশ্বের কোথাও চাঁদ দেখামাত্রই সারা বিশ্বে ঈদ পালন যৌক্তিক হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে চাঁদ তো পশ্চিমাকাশে প্রথম উদিত হয় বিশ্বের সর্বপশ্চিমের ভূখণ্ড আমেরিকার আলাস্কা প্রদেশে? সৌদি আরবে নয়।

আসলে তর্কের খাতিরে তর্ক নয়, আসমানি সমাধান হলো, ‘...আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

এতে পরিষ্কার বোঝা গেল, চান্দ্রমাস দেশে দেশে আলাদা এবং ঈদ, রোজাও এ জন্য একই দিনে বা একসঙ্গে হয় না বা হওয়া সম্ভব নয়।

সাহরি ও ইফতার সম্পর্কে কোরআনের আরেকটি আয়াত দেখুন—মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে উষার শুভ্ররেখা প্রতিভাত না হয়। এরপর তোমরা রাতের শুরু (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত রোজাকে পূর্ণ করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

এখানে দেখা যায়, সাহরি ও ইফতারের বিধান চাঁদকে কেন্দ্র করে। তাহলে এটা বলার সুযোগ নেই যে সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াত চাঁদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ১৮৭ নম্বর আয়াত সূর্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি তা-ই হয়, তাহলে প্রশ্ন থাকে, মানুষ কি রোজা শুরু করবে অন্য দেশের চাঁদ উদয়ের খবরে? আর সাহরি ও ইফতার করবে স্থানীয় সময় অনুযায়ী? এটা হতে পারে না।

একই দিনে ঈদ বা রোজা সম্ভব নয়—এর সমর্থনে সহিহ হাদিস আছে। কুরাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, হারিসের কন্যা উম্মুল ফাজজল তাঁকে সিরিয়ায় মুআবিয়া (রা.)-এর কাছে পাঠালেন। কুরাইব বলেন, অতঃপর আমি সিরিয়ায় পৌঁছে তাঁর প্রয়োজনীয় কাজ সমাপন করলাম। আমি সিরিয়ায় থাকতেই রমজান এসে গেল। আমি জুমার রাতে রমজানের চাঁদ দেখতে পেলাম। অতঃপর মাসের শেষ দিকে আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সিয়াম সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কখন চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, আমি তো জুমার রাতেই চাঁদ দেখেছি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজেই কি তা দেখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, অন্য লোকেরাও দেখেছে এবং তারা সিয়াম পালন করেছে। এমনকি মুআবিয়া (রা.)-ও সিয়াম পালন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তো শনিবার রাতে চাঁদ দেখেছি, আমরা পূর্ণ ৩০টি রোজা রাখব অথবা এর আগে যদি চাঁদ দেখতে পাই, তাহলে তখন ইফতার করব। আমি বললাম, আপনি কি মুআবিয়া (রা.)-এর চাঁদ দেখা ও সিয়াম পালন করাকে (রমজান মাস শুরু হওয়ার জন্য) যথেষ্ট মনে করেন না? তিনি বলেন, না, রাসুল (সা.) আমাদের এভাবেই (চাঁদ দেখে সিয়াম পালন করা ও ইফতার করার জন্য) নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৪১৮)

এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে এক দেশের চাঁদ অন্য দেশের জন্য রোজা ও ঈদের দলিল নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে দেশে চাঁদ দেখা না যায়। তাই নিজ দেশে চাঁদ না দেখে সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে রোজা রাখা বা ঈদ করার ধর্মীয় এখতিয়ার কারো নেই। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেদিন তোমরা সবাই রোজা রাখবে সেদিনই রোজা, যেদিন তোমরা সবাই রোজা ভঙ্গ করো সেদিনই হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং যেদিন তোমরা সবাই কোরবানি করো সেদিনই হচ্ছে কোরবানি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯৭)

সর্বক্ষেত্রে সৌদি আরব বা আন্তর্জাতিক অভিন্ন সময় মানা হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বেলায় কী হবে? অঞ্চলগত ব্যবধানে দেখা যায়, আমরা যখন ফজরের নামাজ আদায় করি, সৌদির মানুষ তখন ঘুমিয়ে। আমাদের দেশে যখন এশার ওয়াক্ত, তখন ওই দেশে আসরের ওয়াক্ত শেষ হয় না। মাসের ক্ষেত্রে এক-দুই দিনের পার্থক্য খুবই স্বভাবিক নয় কি?

সব শেষে ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ কমিটি’র সিদ্ধান্ত হলো, ‘বিশ্বব্যাপী একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালনের আহ্বান জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং মুসলিম দেশগুলোর দারুল ইফতা (ফতোয়া বিভাগ) ও বিচার বিভাগের ওপর চাঁদ দেখার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া উত্তম। এতে মুসলিম উম্মাহর জন্য অধিকতর কল্যাণ নিহিত আছে।’ (ইসলামী ফিকহ একাডেমি : ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১; রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী, জেদ্দা, সৌদি আরব)

Place your advertisement here
Place your advertisement here