• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

বিশ্বকাপে ভালো কিছু করবো : জাহানারা

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

একদিকে ক্রিকেটার, অন্য দিকে অভিনেত্রী। দুইটাতেই তিনি সমান পারদর্শী । কেবল বিশ্ব ক্রিকেটেই নয়, বিশ্বসুন্দরীদের সাথেও দিয়েছেন টক্কর।

২০১৫ সালে বিশ্বসুন্দরীদের মধ্যেও ছিলেন ছয় নম্বরে। তার অভিনয়, মডেলিং করা, মূলত শখের বশে বা সময় কাটানোর জন্য। বিষয়টা বেশ উপভোগও করেন তিনি।

অভিনয় না ক্রিকেট, এই দুইটার মধ্যে তার কাছে প্রধান হচ্ছে ক্রিকেট। দুইটার একটা বেছে নিতে বললে, তিনি ক্রিকেটকেই বেছে নেবেন। ক্রিকেটকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়ার। তিনি নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম এক ভরসার নাম। তিনি হলেন জাহানারা আলম। ভবিষ্যতে নারী ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করার ইচ্ছা তার।

জাহানারা আলমের অভিষেক হয় ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাধ্যমে । খেলেছিলেন আয়ারল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে। আর টি টুয়েন্টি আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে ২০১২ সালের ২৮ আগষ্ট, ভারত মহিলা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার চলতে চলতেই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে দেখতে চান র‍্যাংকিংয়ের পাঁচ কিংবা ছয় নম্বরে। জাতীয় দলের হয়ে একাধিকবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম।

 

 

1.বিশ্বকাপে ভালো কিছু করবো : জাহানারা

ক'দিন আগে খাদিজা-তুল-কুবরা ও ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা আহমেদের সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন ‘ওমেন্স ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট’ একাদশে। তিনি ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার এবং ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। বলতে গেলে একজন পুরোদস্তর অলরাউন্ডার। ক্রিকেটের এই তারকার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক রংপুর এর স্পোর্টস রিপোর্টার সুমনা আহমেদ। তুলে এনেছেন তার বলা না বলা অনেক কথা।

কেমন আছেন?

জাহনারা: এইতো ভালো।

প্রথম যেদিন বল হাতে মাঠে নামলেনকেমন লাগছিল?

জাহানারা: ক্রিকেটটাকে ওভাবে চিন্তা করিনি কখনো। যখন হ্যান্ডবল, ভলিবল খেলতাম তখনও ভাবিনি আমি ক্রিকেটার হব। তাই অনুভূতিটা অভাবে আসেনি আমার ভিতরে।

হ্যান্ডবলভলিবল বাদ দিয়ে ক্রিকেটকে কেন বেছে নিলেন?

জাহানারাআসলে ক্রিকেট খেলতে খেলতে ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা জন্মেছে আমার। আর এখন ক্রিকেট আমার রক্তে মিশে আছে। আমি মনে করি হ্যান্ডবল বলেন বা ভলিবল বলেন, ওটা আমার আগের অধ্যায়। ক্রিকেটই আমার বর্তমান।

ক্রিকেটের শুরুতে কোনো বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন ?

জাহানারা: বাঁধা আসলে ভাল বা মন্দ সকল ক্ষেত্রেই থাকে। সব কাজেই কোন না কোন বাঁধা আসে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম বলব। আমি সম্পূৃর্ন বাঁধাহীন ভাবে এসেছি। আমার পরিবার আমাকে অনেক উৎসাহিত করেছে। তবে প্রতিবেশিরা দুই একজন খারাপ কটুক্তি করলেও এখন সবাই অন্যরকম ভাবে দেখে। আসলে একটা সাফল্য পাবার পর তারা সাপোর্ট করেছে। এটেই আমার জন্য যথেষ্ট।

ক্রিকেটারদের মধ্যে আপনার পছন্দের খেলোয়াড় কে ?

জাহানারাক্রিকেটারদের মধ্যে পছন্দের তালিকায় অনেকেই আছেন। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পছন্দ মাশরাফি বিন মুর্তজা ভাইকে। আমি বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দলের এই ওয়ানডে অধিনায়ককে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের আদর্শ মনে করি। এছাড়া ভালো লাগে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।

দেশের বাইরে বলব ভারতের ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ, ইংল্যান্ডের সারা টেলরের মতো ক্রিকেটাররাও আমার পছন্দের তালিকায় পড়ে।

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কী পরিকল্পনা করছেন? জাহানারা: বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমাদের অনুশীলন চলছে।সম্প্রতি আমাদের ক্যাম্প শুরু হয়েছে। প্রথম ১সপ্তাহ আমরা খুব কঠিনভাবে ফিটনেস করেছি। এবং আমাদের উন্নতিও চোখে পড়ছে। পুরো তিন মাস পাচ্ছি হাতে। এটা খুব কম সময় বা বেশি সময় বলব না। এই সময়ে আমাদের যে ছোট ছোট ভুলগুলো আছে, আগে যে ভুলগুলো করেছি সেগুলো ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্বকাপে ভালকিছু করব আশা করি।

ক্রিকেটকে ঘিড়ে আপনার আনন্দময় কোনো ঘটনা যদি আমাদের বলতেন?

জাহানারা: এরকম অনেক ঘটনা আছে। যেমন, ঈদের সময় সালামি দেওয়া নেওয়া নিয়ে খুব খুনসুটি হয়। সালামি দেও বা এখনো দেওনি কেন? এক্ষুনি দেও। আবার আমরা যখন কারো বার্থডে সেলিব্রেশন করি সেখানে গান নাচ অনেক ধরনের মজাই করা হয়। বিশেষ করে দেখা যায় কোনো ম্যাচ জেতার পরে আমরা যখন হোটেলে ফিরি বা বাসের মধ্যে তখন অন্যরকম আনন্দ হয়। এরকম সবসময় আমরা মজা করতেই থাকি।

২০১৫ সালে বিশ্বসুন্দরীদের মধ্যে ৬নম্বরে ছিলেন। কেমন ছিল আপনার অনুভূতি?

জাহানারা: যখন আমি প্রথম দেখেছিলাম সত্যি খুব অবাক হয়েছি। ক্রিকেট বিশ্বে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে তার মধ্যে ৬ নম্বর হওয়া একটা বিশাল ব্যাপার। তবে আমি মনে করি নিজেকে ভালোভাবে গুছিয়ে রাখলে, ফিটনেস টা ঠিক থাকলে, তার সঙ্গে যদি সুস্থ থাকা যায়। পাশাপাশি কিছু ছোট ছোট কাজও আছে যেগুলো ঠিক মত করলে স্মার্টও হওয়া যায়। মূলত খেলার জন্য যদি নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করা যায়, তাহলে সে এমনি সুন্দরীদের মধ্যে পড়ে।

ক্রিকেট মাঠে বা মাঠের বাইরে গ্ল্যামারের ব্যপারটা কিভাবে মুল্যায়ন করবেন? জাহানারা: সবকিছুতেই ভাল বা মন্দ আছে। তেমনি দর্শকদের মধ্যেও ভাল খারাপ আছে। দেখা যায় কেউ পছন্দের খেলোয়ারকে সাপোর্ট করবে আবার অপছন্দের খেলোয়াড়কে দেখে বলবে ও চলে না। তাদের দিকে কান দিলে আমাদের খেলা থেকে মনোযোগ কিন্তু সরে যায়। আমি মনে করি ভাল পারফর্ম করলে যারা অপছন্দ করে তাদের পছন্দের খেলোয়াড় হওয়া সম্ভব। তাই ওইদিকটা চিন্তা করে আমি কখনো আশেপাশের কথায় কান দেই না।

মডেলিং করেছেনছোট পর্দায়ও আপনাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এগুলাকে কেমন উপভোগ করেন?

জাহানারা: খেলার পাশাপাশি আসলে মডেলিং বা অভিনয় করছি একটু মজা করা বা অন্যভাবে সময় পার করার জন্যই। ওই সময়টা বেশ মজা পেয়েছি। বিষয়টা আমি অনেক উপভোগ ও করেছি।

আবার যদি কোন কাজের সুযোগ আসে তাহলে কি করবেন?

জাহানারা: ভবিষ্যতে এটাকে নিয়মিত পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ইচ্ছা নেই। আগের কাজটা মূলত অনেক অনুরোধের পর করেছিলাম। তবে আমাকে দিয়ে কারো যদি কাজ করানোর আশা বা ইচ্ছা থাকে। যদি সেরকম পরিস্থিতিতে পড়ি তাহলে হয়ত করব। কিন্তু আমার মেইন ফোকাস থাকবে আমার ক্রিকেট।

একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠার অন্যতম মাধ্যম ঘরোয়া ক্রিকেট লীগ।  ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?

জাহানারা: একটা খেলোয়াড় তৈরীর পেছনে অবশ্যই ঘরোয়া লীগের অনেক ভূমিকা আছে। আসলে যতবেশি খেলা হয় ততবেশি অভিজ্ঞতা বাড়ে। আমাদের যে পরিমান ঘরোয়া লীগ হচ্ছে যদি এটা আরো বাড়ানো যায় এবং পাশাপাশি যেসকল অভিভাবকরা আছেন তারা যদি ক্রিকেটের প্রতি তাদের মেয়েদের উৎসাহিত করেন তাহলে পাইপ লাইনে খেলোয়াড় বাড়বে। এখানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিসিবির কাছ থেকে কোনো চাওয়া পাওয়া আছে কি?

জাহানারা: না, একদমই নাই। বিসিবি আমাদের অভিভাবক। তারা আমাদের যথেষ্ট দিয়েছে, দিচ্ছে বা আগামীতেও দিবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এটাই যথেষ্ট আমাদের জন্য।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে? জাহানারা: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা আসছে। যারা বাংলাদেশকে সবার সামনে তুলে ধরবে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। শুধু খেলাধুলা নয়। সকল কাজের ক্ষেত্রেই তাদের অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সৎ থাকতে হবে নিজের কাজের প্রতি এবং হাল ছাড়লে চলবে না। যতই ফেল করি না কেন ধৈর্য ধরে কাজটা করে যেতে হবে। জয় আসবেই ইনশাআল্লাহ্‌।

ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলেন। এটি দলের জন্য বড় এক অর্জন। কেমন লাগছে?

জাহানারা: এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, কারণ এটা আমাদের ১ম বড় কোন অর্জণ। সেটার একটা বড় অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। শেষ মুহূর্তটা যে আমার কাধে ছিল এবং আমি সফলভাবে করতে পেরেছি। সে মুহুর্তে জয়ের আনন্দটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।

সেক্ষেত্রে একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন ফাহিম স্যার। তিনি আমাদের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে এনেছেন। এছাড়া দলের একাত্বতা, সাহস, কোচের সাপোর্ট, টিম ম্যানেজমেন্ট, ফিজিও, ট্রেইনার আবার কোচিং স্টাফ থেকে ভাল ভাল পরামর্শ এই সবকিছুই এতো ভালোভাবে কাজ করেছে যার জন্যই এসব কিছু সম্ভব হয়েছে।

নারী ক্রিকেটে নাকি মিডিয়া কাভারেজ কম। এ ব্যাপারে কি বলবেন? জাহানারা: অবশ্যই মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে বলব।আসলেই ছেলেদের থেকে মেয়েদের ফোকাস কম হয়। তবে আগের থেকে একটু বেড়েছে এখন। তবু এই ডেইলি বাংলাদেশের মাধ্যমে আমি সকল প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া বা ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াকে অনুরোধ করব, তারা সকলে যদি আরেকটু বেশি বেশি কাভারেজ দেয় তাহলে প্রমিলা ক্রিকেটের প্রতি অনেকের আগ্রহ বাড়বে। তখন নতুন নতুন অনেক ভাল খেলোয়াড়ও উঠে আসবে।

আমাদেরকে সময় দেবার জন্য দৈনিক রংপুর -এর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

জাহানারা: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং ধন্যবাদ দৈনিক রংপুরকেও।

Place your advertisement here
Place your advertisement here