• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

বিবাদ মীমাংসার ফজিলত ও পদ্ধতি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারি ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

সম্পর্ক নষ্ট হয়—এমন বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়া-বিবাদ কাম্য নয়। তবু এই নেতিবাচক বিষয়টি আমাদের জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম্পত্য জীবনে, আত্মীয়তার বন্ধনে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে এমনকি মা-বাবা ও সন্তানদের মাঝেও এই বিবাদ অপ্রত্যাশিতভাবে সম্পর্কে ছেদ ঘটায়।

এই দূরত্ব ও সম্পর্কহীনতা অনেক ক্ষেত্রে মারামারি ও সহিংসতায়ও রূপ নেয়। কিন্তু কোরআনের আদেশ হলো, এই বিভেদ জিইয়ে না রেখে দ্রুত মীমাংসা করে ফেলা। এতে দুই পক্ষেরই কল্যাণ।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে...।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৯)

পবিত্র কোরআনে অশান্তিময় দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো পারস্পরিক আপস-নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,  ‘কোনো নারী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা পরস্পর মীমাংসা করে নিলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আর আপস-নিষ্পত্তিই উত্তম...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৮)

যেকোনো ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে মীমাংসা না করে শুধু শুধু বিদ্বেষ ও ক্ষোভ পুষে রাখা ও সম্পর্ক ছিন্ন করা একজন প্রকৃত মুমিনের কাজ হতে পারে না। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না—এমন সবাইকে মাফ করে দেওয়া হয়। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া যারা পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদের বিষয়টি মওকুফ রাখো’ (তিন বার)। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৫)

একটা সাধারণ তর্কবিতর্ক যখন ঝগড়ায় রূপ নেয় তখন যেকোনো একজনের উচিত সংযত হয়ে যাওয়া। ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে নিজ দাবি থেকে খানিকটা সরে আসা। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি এই কাজটা করতে পারে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মাঝে একটি ঘর তৈরি করা হবে।’  (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৯৩)

কিন্তু কখনো কখনো ঝগড়া-বিবাদ এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে এর আপস নিষ্পত্তি নিজেদের সক্ষমতার বাইরে চলে যায়। একে অপরের চেহারা দেখলেই গা জ্বালা ধরে। এ ক্ষেত্রে মান্যবর কর্তাব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের মধ্যে মীমাংসার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশির ভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু দান-সদকা, সৎকাজ অথবা মানুষের মাঝে আপস করার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এ কাজ করবে আমি তাকে অতি শিগগির মহা প্রতিদান দান করব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৪)

মীমাংসার আদেশকারীর মহা প্রতিদান হলে মীমাংসাকারীর কী প্রতিদান হবে—তা সহজেই অনুমেয়। দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলোও মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। যখন স্বামী-স্ত্রী নিজেরা সমাধান করতে না পারবে তখন উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে বিচারক নিযুক্তির মাধ্যমে মীমাংসা করার ভূমিকা নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের আশঙ্কা করো, তাহলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন, স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক নির্ধারণ করো। যদি তারা উভয়ে মীমাংসার ইচ্ছা করে তবে আল্লাহ তাদের উভয়ের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সব কিছু অবহিত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত: ৩৫)

মুসলিমসমাজের কোথাও সম্পর্কের অবনতি ঘটলে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে এসে এই বন্ধন অটুট রাখতে হবে। কেননা ইসলাম মুসলমানদের বৃহত্তর ভ্রাতৃত্বের ডোরে আবদ্ধ করে রাখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহ লাভ করতে পারো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১০)

বিবাদরতদের মর্মবেদনা উপলব্ধি করে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া অনেক বড় ফজিলতের বিষয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ ও সদকা থেকেও উত্তম বিষয় সম্পর্কে বলব না? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তিনি বলেন, ‘বিবাদরতদের মধ্যে মীমাংসা করা। আর জেনে রেখো, পরস্পর বিবাদই মানুষের দ্বিন মুণ্ডিয়ে দেয়।’  (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০৯)

আসুন, পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ ও হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সম্পর্কগুলো অটুট রাখি। অন্যদের বাদ-বিবাদ নিরসনে কল্যাণময় ভূমিকা গ্রহণ করি।

আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here