• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

তেঁতুলিয়া তীব্র তাপপ্রবাহে নলকূপে মিলছে না পানি 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

তীব্র তাপপ্রবাহে ভূ-গর্ভস্থ নেমে গেছে পানির স্তর। এতে সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু এলাকার নলকূপে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পানি। সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন পানির সংকট দেখা দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু এলাকায় হস্তচালিত নলকূপে ৬০ থেকে ৮০ ফুট পর্যন্ত বডিং করা করা হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যায় পানির স্তর। প্রতি বছর তীব্র তাপদাহে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এতে তেঁতুলিয়া উপজেলার সিদ্দিক নগর, সাহেবজোত, দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়ালজোতসহ বেশ কিছু এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব অঞ্চলে পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। সুপেয় পানির সংকট দেখা দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। যাদের সাবমারসিবল পাম্প কেনার মতো সামর্থ্য নেই।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় বর্তমানে ১০ হাজার ৭৫০টি টিউবওয়েল চালু রয়েছে। সাবমারসিবলযুক্ত টিউবওয়েল (উচ্চ জলধারাসহ) রয়েছে ৯০টি। তবে সাধারণ টিউবওয়েলের সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, খরা মৌসুমে এখানকার নদীগুলোতে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানিও। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া সদরের দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়ালজোত, ডাঙ্গীবস্তি, সিদ্দিকনগর ও শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা উঁচু হওয়ায় গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে করে অচল হয়ে পড়ে নলকূপ। সংকট দেখা দেয় পানির। হাজারো পরিবারে পানি সংকটে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে দূরদূরান্তে।

চৈত্র-বৈশাখের কাঠফাটা রোদে মাঠ-ঘাট, পথ, খাল-বিল ও প্রান্তর ফেটে চৌচির। বৃষ্টির অভাবে ফসলি ক্ষেতও ক্ষতির সম্মুখীন। পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে খরতাপে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ ও প্রাণিকুল।

সিদ্দিক নগরের নুরনেহার, জাহানারা ও শহিদাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুই মাস ধরে ঠিকমতো টিউবওয়েলের পানি উঠছে না। পাম্প বসিয়েও মিলছে না পানি। যারা মাটির গভীরে বডিং করে পাম্প বসিয়েছেন, তারা কিছুটা পানি পাচ্ছেন। তাদের বাড়ি থেকে পানি আনতে গেলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা পানি দিতে চাচ্ছেন না। কাপড়, থালাবাসন ধোয়া ও রান্নাবান্না করতে যে পানি দরকার তা মিলছে না।

একই কথা বলেন দর্জিপাড়া গ্রামের আছমা বেগম ও ফিরোজা আক্তার। তারা বলেন, এ সময়টাতে পানি পান না তারা। মোটর পাম্প লাগিয়েও পানি মিলছে না। অনেকে টিউবওয়েলের ধারে ৮ থেকে ১০ ফুট গভীরে গর্ত করে নিচে মোটর পাম্প বসিয়ে কিছুটা পানি পাচ্ছেন।

যাদের সামান্য সামর্থ্য রয়েছে তারা টিউবওয়েলের সাথে মোটর পাম্প সেট করলেও পানি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পাইপের কাছে ১০ ফিট গভীরে গর্ত করে মোটর পাম্প বসিয়ে নিচ্ছেন। তবে যাদের এ খরচ করার সামর্থ্য নেই তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অন্যের বাড়িতে পানি আনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন।

নলকূপমিস্ত্রি তরিকুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড় জেলার মধ্যে তেঁতুলিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকায় এই সময়ে পানির সংকট দেখা দেয়। অনেক টিউবওয়েলে পানি থাকে না। আমরা এখানে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে নলকূপ স্থাপন করে থাকি। তারপরেও জানুয়ারি থেকেই পানির লেয়ার নামতে শুরু করে। ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নিচে নেমে যাওয়ায় এসব অঞ্চলে সাধারণত হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। যাদের অর্থ আছে, তারা সাবমারসিবল বসাচ্ছেন। তবে, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে পুকুর-ঘাট, খাল-বিল ও নদ-নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। পানি নিম্নস্তরে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে অনেক স্থানে অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি কম উঠছে। ৮-১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে শ্যালো মেশিনগুলো সেখানে বসানো হচ্ছে। ইঞ্জিন গর্তে বসানোর পরেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে না। কম পানি উঠছে। এতে করে বোরো আবাদসহ অন্যান্য আবাদেও সেচ খরচ অনেকগুণে বেড়েছে।

তেঁতুলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য আমরাও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে এ সমস্যা উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মিঠুন কুমার রায় বলেন, এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। গত বছর আমরা সিদ্দিকনগর এলাকায় সার্ভে করেছিলাম, তখন পানির প্রথম লেয়ার ২০ ফুট নিচে নেমে যেতে দেখেছিলাম। বিশেষ করে বরেন্দ্রসহ অনেক গভীর নলকূপ স্থাপন হওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠে না। এখন পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

পঞ্চগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, এই সময়ে মাটির গভীরে পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় পানির কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়। জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে পানির লেয়ার ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া উপজেলার সিদ্দিকনগর, তেলিপাড়া ও মমিনপাড়া তিনটি গ্রামে পানির লেয়ার ৩৫ এর নিচে নেমে যাওয়ায় ওই এলাকাগুলোর মানুষজন টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছেন না। তবে উচ্চ জলধারা সাবমারসিবলযুক্ত টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। যে-সব এলাকায় এই সাবমারসিবলযুক্ত টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে সেসব এলাকায় এই সমস্যা নেই।

Place your advertisement here
Place your advertisement here