• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

বাস-মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাস–মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা—ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন থেকে এ দুটি বিষয়েই বেশি জোর দেবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর মধ্যে সংস্থাটির অধীনে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে।

গত সোমবার থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সীমিত আকারে বাস–মিনিবাস চালু হয়েছে। প্রতিটি বাস–মিনিবাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এর জন্য যাত্রী অধিকার কর্মীদের প্রতিবাদ–সমালোচরার পরও বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। একসঙ্গে এত ভাড়া বাড়ানোর নজির নেই বলে বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত দুই দিনে সরেজমিন তথ্য বলছে, অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার বিষয় ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে অনেকটাই মানা হয়েছে। যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কাজটা সহজ হয়েছে। কিন্তু সরকার যে ভাড়া হার নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা মানছেন না অধিকাংশ পরিবহনমালিক–শ্রমিকেরা।

রাজধানী ঢাকায় শতভাগ কিংবা এরও বেশি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন পরিবহনমালিক–শ্রমিকেরা। বিশেষ করে সর্বনিম্ন ভাড়া দ্বিগুণের বেশি আদায় করা হচ্ছে। গবেষণা অনুসারে, ৮০ শতাংশের বেশি যাত্রী স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করেন। সর্বনিম্ন ভাড়া বেশি বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে যাত্রীরা ক্ষিতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ঢাকায় মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা। আর বাসে সাত টাকা। কোনো যাত্রী একবার উঠে সাড়ে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবেন। অর্থাৎ সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে যেকোনো দূরত্বে সর্বনিম্ন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।

বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাড়তি ভাড়া আদায় রোধে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কলে সংসদ ভবন এলাকার বাসা থেকে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। এরপর বিআরটিএ কর্মকর্তারা সংস্থাটির অধীনে থাকা ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এখন থেকে শুধু ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে কি না এবং অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে বাস চালানো হচ্ছে কি না—এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। ঢাকার বাইরে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বিআরটিএর উপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) আবদুর রাজ্জাক বলেন, এখন যেহেতু ভাড়া এবং স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি বেশি জরুরি, সে জন্য এ দুটি বিষয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

বিআরটিএ সূত্র বলছে, এত দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোটরযান আইন অমান্য করার দায়ে মামলা–জরিমানা করা হতো। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগেই সরকার যানবাহনের ফিটনেস জুন হালনাগাদের সময়সীমা জুন পর্যন্ত বর্ধিত করে। এমনকি মোটরযানের চালকদের লাইসেন্স–সংক্রান্ত ধারার অপরাধে মামলা দেওয়ার কার্যক্রমও স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে মোটরযান আইনের প্রয়োগের খুব বেশি পরিস্থিতি নেই। এ জন্যই করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাস পরিচালনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বাস–মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া তিনবার করে বৃদ্ধি করে সরকার। প্রতিবারই পরিবহনমালিক–শ্রমিকেরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া হার মেনে চলার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাস্তবে সরকার–নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় করা হয়। এবার অনেক সমালোচনার পর ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির পরও তা না মেনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস–মিনিবাসে নতুন ভাড়ার তালিকা নেই। শ্রমিকেরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতোই ভাড়া আদায় করছেন। মতিঝিল থেকে সাভারের পথে চলা ওয়েলকাম পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া আগে থেকে নেওয়া হতো ১০ টাকা। অথচ এই বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা ছিল পাঁচ টাকা। এখন করোনা পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা। যাত্রাবাড়ী–গাবতলী পথের লোকাল বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকাই আদায় করা হতো। এখন তা ১০ টাকা হয়ে গেছে। গুলিস্তান–আবদুল্লাহপুর পথের বাসে মাঝপথে নেমে গেলেও শুরু থেকে সর্বশেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ঢাকায় কিছু কিছু অভিযোগ আসছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। দূরপাল্লার পথে ভাড়া নিয়ে তেমন সমস্যা নেই বলে তিনি দাবি করেন।

সরকারের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধি এবং বাসের আসন অর্ধেক ফাঁকা রেখে চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পর তা মানা হচ্ছে কি না, দেখার জন্য প্রতিটি বাস টার্মিনালে তদারক কমিটি গঠনের কথা বলেছিল বিআরটিএ। কিন্তু গতকালও এ ধরনের কোনো কমিটির তৎপরতা দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অতীতে কোনোবারই সরকার–নির্ধারিত ভাড়া মেনে বাস চলাচল নিশ্চিত করতে পারেনি। এ জন্যই তারা এবার করোনার মতো কঠিন পরিস্থিতিতে ভাড়া না বাড়াতে দাবি করেছিলেন। কিন্তু সরকার তড়িগড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই ভাড়া হারও মানানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here