• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৭১ সনের ৬ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধীর চিঠি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

Find us in facebook

Find us in facebook

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৬ ডিসেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনেই বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় মিত্র দেশ ভারত। এ দিনে পরাজিত হয়ে যশোর সেনানিবাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে চিঠি পাঠিয়ে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন।

দিনটি ছিল সোমবার। এদিন বেলা এগারোটার সময় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ মারফত ঘোষণা করা হয় যে, ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ভারতের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপন করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ এবং সেই সংগ্রামের সাফল্য এটা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট করে তুলেছে যে তথাকথিত মাতৃরাষ্ট্র পাকিস্তান বাংলাদেশের মানুষকে স্বীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সম্পূর্ণ অসমর্থ। বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা সম্পর্কে বলা যায়, গোটা বিশ্ব এখন সচেতন যে তারা জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটায়, জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক সরকারই যেমনটা দাবি করতে পারবে না। গভর্নর মরিসের প্রতি জেফারসনের বহু খ্যাত উক্তি অনুসারে বাংলাদেশের সরকার সমর্থিত হচ্ছে ‘পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত জাতির আকাঙ্খা বা উইল অব দ্য নেশন’ দ্বারা। এই বিচারে পাকিস্তানের সামরিক সরকার, যাদের তোষণ করতে অনেক দেশই বিশেষ উদগ্রীব, তারা এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণেরও প্রতিনিধিত্ব করে না।’

লোকসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আরো বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা আজই বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে জ্ঞাত করা হবে।’ 

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুগ্মভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ জানিয়ে একটি পত্র প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ সরকারের ৪ ডিসেম্বরের পত্রের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে যে পত্র প্রেরণ করেন তার বঙ্গানুবাদ নিম্নরূপ :

মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আপনি ৪ঠা ডিসেম্বর আমাকে যে পত্র প্রেরণ করেছেন তাতে আমি ও ভারত সরকারের আমার সহকর্মীবৃন্দ গভীরভাবে অভিভূত হয়েছি। এ পত্র পাবার পর আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে পরিচালিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ ভারত সরকার পুনরায় বিবেচনা করেছে। আমি সানন্দে জানাই যে, বর্তমানে বিরাজিত পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি একটি অনুলিপি সংযুক্ত করছি।

বাংলাদেশের মানুষ অনেক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছে। আপনার যুবসমাজ স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের জন্য একটি আত্মত্যাগমূলক সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। ভারতের লোকজনও একই কারণে যুদ্ধ করেছে। আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, মহৎ এ প্রচেষ্টা এবং ত্যাগের সাহচর্য আমাদের আত্মত্যাগকে আরো শক্তিশালী করবে এবং দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বকে দৃঢ় করবে। তবে এ পথ অনেক দীর্ঘ এবং ভবিষ্যতেও এমন ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হতে পারে। আমি নিশ্চিত সেক্ষেত্রেও আমরা বিজয়ী হবো।

আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে জানাতে এই সুযোগটি গ্রহণ করেছি। একইসঙ্গে আপনার সহকর্মী এবং বাংলাদেশের বীর জনতার প্রতি আমার শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা। 

আমি আপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকেও সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাতে চাই। 

আপনার একান্ত
ইন্দিরা গান্ধী

Place your advertisement here
Place your advertisement here