• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

পিতার প্রতি সন্তানের ভালবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়।
আজ ২১ জুন বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার দিবসটি পালন করা হয়। পবিত্র কোরআনুল কারিমে পিতা-মাতার সম্মান প্রসঙ্গে বলা আছে, তাদের সঙ্গে উহ! শব্দ পর্যন্ত করো না। হাদিসে আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত।’

‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন। এর অর্থ পিতা স্বর্গ, পিতাই ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা। পিতাকে খুশি করলে দেবতা খুশি হন।

কোরআন হাদিসে পিতার প্রতি সন্তানের মর্যাদা:

আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,رِضَى الرَّبِّ فِى رِضَى الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِى سَخَطِ الْوَالِدِ ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার ক্রোধে আল্লাহর ক্রোধ’।  (তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭; সহিহাহ হা/৫১৬)। আবুদ্দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি শামে তার নিকটে এসে বলল, আমার মা, অন্য বর্ণনায় আমার পিতা বা মাতা (রাবীর সন্দেহ) আমাকে বারবার তাকীদ দিয়ে বিয়ে করালেন। এখন তিনি আমাকে আমার স্ত্রীকে তালাক দানের নির্দেশ দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমি কি করব? জবাবে আবুদ্দারদা বলেন, আমি তোমার স্ত্রীকে ছাড়তেও বলব না, রাখতেও বলব না। আমি কেবল অতটুকু বলব, যতটুকু আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন,الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبوابِ الْجَنَّةِ، فَحَافِظْ إِنْ شِئْتَ أَوْ ضَيِّعْ ‘পিতা হলেন জান্নাতের মধ্যম দরজা। এক্ষণে তুমি চাইলে তা রেখে দিতে পার অথবা বিনষ্ট করতে পার’। (শারহুস সুন্নাহ হা/৩৪২১; আহমাদ হা/২৭৫৫১; তিরমিযী হা/১৯০০; ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯; মিশকাত হা/৪৯২৮; সহিহাহ হা/৯১৪)।

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) বলেন, আমার স্ত্রীকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা তাকে অপসন্দ করতেন।  তিনি তাকে তালাক দিতে বলেন। আমি তাতে অস্বীকার করি। তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হলে তিনি বলেন, أَطِعْ أَبَاكَ وَطَلِّقْهَا، فَطَلَّقْتُهَا ‘তুমি তোমার পিতার আনুগত্য কর এবং তাকে তালাক দাও। অতঃপর আমি তাকে তালাক দিলাম’। (হাকেম হা/২৭৯৮; সহিহহ ইবনু হিববান হা/৪২৬; সহিহাহ হা/৯১৯)।

ঈমানদার ও দূরদর্শী পিতার আদেশ মান্য করা ঈমানদার সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু পুত্র ও তার স্ত্রী উভয়ে ধার্মিক ও আনুগত্যশীল হলে ফাসেক পিতা-মাতার নির্দেশ এক্ষেত্রে মানা যাবে না। একইভাবে সন্তান সহিহ হাদিসপন্থী হলে বেদাতী পিতা-মাতার ধর্মীয় নির্দেশও মানা চলবে না। কারণ সর্ব ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসের বিধান অগ্রাধিকার পাবে।

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ : دَعْوَةُ الْوَالِدِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ ‘তিনটি দোয়া কবুল হয়। যাতে কোনরূপ সন্দেহ নেই। পিতার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও মজলূমের দোয়া’ (আবুদাউদ হা/১৫৩৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَدَعْوَةُ الْوَالِدَيْنِ ‘পিতা-মাতার দোয়া’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩২)। আরেক বর্ণনায় এসেছে,وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ ‘পিতার বদদোয়া তার সন্তানের বিরুদ্ধে’ (তিরমিযী হা/১৯০৫)।

এক কথায় সন্তানের জন্য বা সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার যেকোনো দোয়া বা বদদোয়া নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব, এ ব্যাপারে পিতা-মাতা ও সন্তানদের সর্বদা সাবধান থাকতে হবে। যেন সন্তানের কোনো আচরণে পিতা-মাতার অন্তর থেকে ‘উহ্’ শব্দ বেরিয়ে না আসে। অথবা সন্তানের প্রতি রুষ্ট হয়ে পিতা-মাতা যেন মনে বা মুখে কোন বদদোয়া না করে বসেন। যেকোনো অবস্থায় উভয়কে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং সর্বদা উভয়ে উভয়ের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল থাকতে হবে।

পিতার বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা:

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) বলেন,إِنَّ مِنْ أَبَرِّ الْبِرِّ صِلَةَ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْدَ أَنْ يُوَلِّىَ- ‘সবচেয়ে বড় সদ্ব্যবহার হলো পিতার অবর্তমানে তার বন্ধুদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।’ (মুসলিম হা/২৫৫২ (১৩); মিশকাত হা/৪৯১৭)। এতে বুঝা যায় যে, পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারী সন্তান পিতার বন্ধুর কাছেও সদ্ব্যবহার পেয়ে থাকে। আর পিতার বন্ধুও তাকে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করে থাকেন। এভাবেই সে সমাজে সম্মানিত হয়।

পিতা হলেন পরিবারের আমির:

ইসলামি সমাজ হলো নেতৃত্ব ও আনুগত্যের সমাজ। যা আল্লাহর বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে ইমামের আনুগত্যের মাধ্যমে যার দৈনন্দিন প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। এর দ্বারা মুসলমানদের জামাতবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। পরিবার হলো সমাজের প্রাথমিক সংস্থা। যা পিতা-মাতা ও সন্তানাদি নিয়ে গঠিত। এই সংস্থা বা সংগঠন পরিচালিত হয় মূলত: পিতার মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন, الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ ‘পুরুষেরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল’ (সূরা: নিসা ৪/৩৪)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ ‘পুরুষ হলো তার পরিবারের দায়িত্বশীল।’ (বুখারি হা/৭১৩৮; মুসলিম হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫)।

অতএব, পিতা হলেন তার পরিবারের আমির। তার প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। শিরক বা শরীয়াত বিরোধী আদেশ ব্যতীত অন্য সব ব্যাপারে পিতা-মাতার সাঙ্গে সদ্ব্যবহার ও সদাচরণ করতে হবে। তার আদেশই সর্বদা শিরোধার্য হবে এবং পিতা-মাতার অবাধ্যতা আল্লাহর ক্রোধের কারণ হবে।

পিতা হবেন পরিবার প্রধান এবং মা হবেন গৃহকত্রী। প্রয়োজন মতো পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে তারা পরিবার পরিচালনা করবেন। কেননা আল্লাহ বলেন,وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ জরুরি বিষয়ে তুমি তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা কর।’ (সূরা: আলে ইমরান ৩/১৫৯)।

পরিবার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাথমিক ধাপ। পরিবার যত আনুগত্যশীল ও পরস্পরে শ্রদ্ধাশীল হবে, সমাজ ও রাষ্ট্র তত সুন্দর ও শান্তিময় হবে। পরিবার যত উদ্ধত ও উচ্ছৃংখল হবে, সমাজ তত বিশৃংখল ও বিনষ্ট হবে। অতএব, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের প্রাথমিক পারিবারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল সুন্দর সমাজ গঠনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতাকেও আল্লাহভীরু এবং সন্তানের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য হতে হবে। 

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমাদেরকে যথাযত ভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

Place your advertisement here
Place your advertisement here