• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

পরিশ্রমী নারী, কৃষিতেও এগিয়ে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

এক সময় ঘরে বসেই অলস সময় কাটতো তাদের। দারিদ্রতা ছিল নিত্য সঙ্গী। নিজেদের প্রয়োজনেই ঘর থেকে বের হন তারা। বেছে নেন কষ্টের ক্ষেতমজুর পেশা। রোদ বৃষ্টি কিংবা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মানুষের কাজ করে জোটে তাদের দুমুঠো অন্ন, চলে সংসারের চাকা। আধুনিকায়নের যুগে কৃষি শ্রমিকের সংকট হলেও এখনো পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় নারী ক্ষেতমজুরদের।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার খোঁচাবাড়ি গ্রাম। কিছু বসতবাড়ি আর গাছ-পালার ফাঁকে তাকালেই দেখা যায় দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানক্ষেত। এসব ক্ষেতে আগাছা তুলছেন কিছু নারী। পুরনো শাড়ির ওপর পুরনো শার্ট পরে ধান নিড়ানি দিচ্ছেন তারা।

দলবেঁধে কাজ করায় পানির খলখল শব্দ ভেসে আসছে। তারা পেশায় নারী ক্ষেতমজুর। বছরের পর বছর এভাবেই সব ধরনের কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের বেশির ভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। 

জানা গেছে, এক সময় ঘরে বসেই অলস সময় কাটতো তাদের। মাথার ওপর দারিদ্রতা আর সংসারে অভাব অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার তাগিদে স্বামীর সঙ্গে নিজেরাও ক্ষেতমজুর পেশা বেছে নেন। ধানের চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, ধান কাটা-মাড়াইসহ সব ধরনের কৃষি কাজ করেন পঞ্চগড়ের এই নারী কৃষি শ্রমিকরা।

স্থানীয় ভাষায় তারা ক্ষেতমজুর হিসেবে পরিচিত। রোজ সকালে রান্নাবান্না সেরে সন্তানদের খাইয়ে দলবেঁধে কাজে বেরিয়ে পড়েন তারা। ১০ থেকে ১২ জনের প্রতিটি দলে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে থাকেন দু-একজন পুরুষ শ্রমিকও। পুরনো শাড়ির ওপর পরে নেন পুরনো শার্ট। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে শ্রম বিনিময়। বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে পুড়ে শ্রম দিয়ে চলে তাদের সংসারের চাকা। স্বামীর পাশাপাশি তারাও এখন উপার্জন করে সংসারের হাল ধরেছেন। মানুষের জমিতে মজুর খেটে দৈনিক আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। সেই টাকায় সংসারের খরচ মিটিয়ে শোধ করছেন ঋণ, চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ।

আধুনিকায়নের এ যুগে কৃষি শ্রমিকদের সংখ্যা কমে এলেও এখানকার নারীরা বছরের পর বছর ধরে রেখেছেন কষ্টসাধ্য এ পেশা। শুধু এই গ্রামেই নয়, পঞ্চগড়ে বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলবে নারী ক্ষেতমজুরদের। তারা এখন আর সমাজের বোঝা নয়, সমাজের সফল শ্রমজীবী মানুষ। তাই তাদের মনে কোনো কষ্ট নেই, আছে গর্ব করে বলার মতো সাহস।

দেবীগঞ্জ উপজেলার খোঁচাবাড়ি এলাকার নারী ক্ষেতমজুর প্রমিলা রাণী বলেন, আমি ২০ বছর ধরে ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করছি। শুরুতে মানুষজন নানা কথা বলতেন। কিন্তু এখন আর কিছু বলেন না। আমরা মজুর দিয়ে দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাই। সেই টাকা আমাদের সংসারের কাজে লাগে। গরু ছাগল কিনে পুষি। ঘর সংসার সামলে আমরা এভাবেই বছরের পর বছর এই পেশা ধরে রেখেছি।

গীতা রাণী নামে আরেক নারী ক্ষেতমজুর বলেন, অভাবী সংসার তাই এই কষ্টসাধ্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন মাঠে ফসল থাকে আমাদের কাজ ততদিন থাকে। ধানের চারা রোপণ, নিড়ানি দেয়া ও কাটা-মাড়াই, বাদাম, আলু, পাট, গম, ভুট্টাসহ সব ধরনের কৃষি কাজ করি। স্বামীর পাশাপাশি আমরা এই কাজ করে সংসারটা সুন্দরভাবে চালাচ্ছি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। এনজিও থেকে নেয়া ঋণ শোধ করছি। কষ্ট হলেও পরিবারের জন্য কিছু করতে পারছি এটাই আনন্দের।

তার মতো মিনিবালা নামের আরেক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কৃষকের ফসলের পরিচর্যাসহ মাড়াইয়ের কাজ করি। দারিদ্রতা আর ভাগ্য আমাদের এই পেশায় নিয়ে এসেছে। দলবেঁধে গল্প গুজব করে কাজ করি। রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রম দিয়ে আবার রাতে রান্নাবাড়া করে খেয়ে ঘুমাই। আমাদের কথা কেউ বলে না। সবাই ছোট করে দেখে। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আমাদের ভাগ্যে মেলে না।

সুরেশ চন্দ্র রায় নামে এক শ্রমিক বলেন, আমাদের দলে ১০-১২ জন নারী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তাদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন কৃষকের কাজ চুক্তিতে করে থাকি। তারা এখন আর সমাজের বোঝা নয় কাজ করে খান।

কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম মানিক বলেন, বিশ বছর আগে এই এলাকায় এসেছিলাম। তখন এ এলাকার মানুষরা চরম অভাবে দিন পার করতেন। কিন্তু সেই চিত্র বদলে গেছে। স্বামীর পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন কৃষি খামারসহ মজুর হিসেবে কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন। তাদের আর আগের মতো অভাব নেই।

পরস্পর এনজিওর নির্বাহী পরিচালক ও পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সদস্য আখতারুন্নাহার সাকী বলেন, নারীরা তাদের প্রয়োজনেই ঘর থেকে বের হয়েছেন। তারা মাঠে কাজ করে উপার্জন করছেন। আমাদের এলাকায় তেমন শিল্প কারখানা না থাকায় কৃষি শ্রমিকের কষ্টসাধ্য পেশা বেছে নিয়েছেন। ঘর সংসার সামলেও দৈনিক মজুরবৃত্তি করছেন। তারা আমাদের গর্ব।

Place your advertisement here
Place your advertisement here