• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

নিয়ন্ত্রণের পথে বাংলাদেশ!

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

গত ডিসেম্বর থেকেই দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। কমছে পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হারও। গত ১০ দিন ধরে এ হার কমে পাঁচ শতাংশের ঘরে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চার দিনই এ হার ছিল পাঁচ শতাংশের ঘরে। সেখান থেকে সংক্রমণ কমে গত দুদিন ধরে এ হার পাঁচের নিচে নেমে আসে। বিশেষ করে গতকাল এ হার কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২৩ শতাংশে, অর্থাৎ গত ৯ মাস ১৮ দিনের মধ্যে গতকালই প্রথমবারের মতো শনাক্ত হার কমে দাঁড়ায় চার শতাংশের ঘরে।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে করোনার তথ্য দিতে শুরু করে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩-৪ এপ্রিল রোগী শনাক্তের হার ছিল দুই শতাংশ। তখন পরীক্ষা হয়েছিল পাঁচশোরও কম। পরে রোগটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়লে পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হয়। সে হিসাবে দেশে ব্যাপকহারে পরীক্ষা শুরুর পর গতকালই শনাক্তের হার ছিল সর্বনিম্ন।

পাশাপাশি একই সময়ে দেশে রোগটির সংক্রমণ হারও (আর-নট রেট বা রি-প্রোডাকশন রেট) কমেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ হার দশমিক ৮৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, এ হার একের নিচে থাকলে সে দেশে মহামারী নিয়ন্ত্রণের দিকে বলা যায়।

দেশে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার চার শতাংশে এবং সংক্রমণ হার একের নিচে নেমে আসাকে করোনা নিয়ন্ত্রণে ‘ভালো লক্ষণ’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, কোনো দেশে শনাক্তের হার চার সপ্তাহ পাঁচের ঘরে স্থির থাকলে সে দেশে সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে বলা যায়।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা এমন সতর্কতাও দিয়েছেন যে, অনেক দেশে শনাক্তের হার শূন্যের ঘরে আসার পরও আবার বেড়েছে। তখন সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও নতুন করে লকডাউন দিতে হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে শৈথিল্য দেখানো যাবে না। বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অব্যাহত রাখতে হবে বলেও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে দেশে করোনা মোকাবিলায় গঠিত সরকারের জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের পথে যাচ্ছে কি না, সেটার জন্য আরও অন্তত সপ্তাহখানেক দেখতে হবে। তবে লক্ষণটা খুব ভালো। তার মানে আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি।

সংক্রমণ কমছে কেন জানতে চাইলে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, শীতকালে সংক্রমণ ঘটায় এমন কতগুলো ভাইরাস আছে, যেগুলো আমাদের শরীরে ঢুকে গেছে। সর্দি, কাশি, শিশুদের নিউমোনিয়া এ ধরনের রেসপেরেটরি ভাইরাসগুলো শরীরের রেসপেরেটরি ট্র্যাকগুলো দখল করে আছে। সেখানে আর করোনাভাইরাস ঢুকতে পারে না। তবে গরম এলে রেসপেরেটরি সিস্টেম পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু ততদিনে হয়তো আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে। সেটা একটা আশার কথা। কিছু কিছু সংক্রমণ হচ্ছে। সেটাতে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। এভাবে হয়তো আমরা উদ্ধার পেয়ে যাব।

মাসখানেক যদি এরকম অবস্থা থাকে, তাহলে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত বলে ধরে নেওয়া হবে জানান এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, শনাক্তের হার যদি আরও অন্তত তিন সপ্তাহ এরকম থাকে, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তাদের অভিমত জানাবে। তখন বাংলাদেশ সরকারও স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়াসহ নানা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো দেখা যাচ্ছে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।

করোনার বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, নিঃসন্দেহে এখন সংক্রমণ কম। সংক্রমণ মাত্রা আগের চেয়ে কম। এভাবে যদি পরপর আরও তিন সপ্তাহ থাকে, তাহলে আমরা বলতে পারব নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। তখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াসহ নানা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সরকার। এখন করোনার সংক্রমণ হার ওঠানামা করছে। যদি আর না ওঠে তাহলে ভালো। সহনশীল পর্যায় না বলে আমরা বলছি এই মুহূর্তে কম। গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে।

সংক্রমণ কমার পেছনে কারণ কী জানতে চাইলে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। তার সে কথাকে গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। মানুষের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে জোরালোভাবে মাস্ক কর্মসূচি পালন করা হয়। বেশি সংখ্যক মানুষের মেলামেশা হয় এমন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়নি, বইমেলা হচ্ছে না, বিজয় মেলাও হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো বড় বড় সম্মেলন করে, সেগুলো হয়নি। সাধারণত শীতকালে এসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এসব না হওয়ার কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারেনি। তবে এগুলো যদি আবার হয়, মানুষের মধ্যে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালাভাব চলে আসে, তাহলে আবার বেড়ে যাবে। করোনার সংক্রমণের সঙ্গে শীত-গরমের সম্পর্ক নেই। যখনই মানুষের মেলামেশা বেড়ে যাবে, তখনই সংক্রমণ বাড়বে।

দক্ষিণ এশিয়াসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সংক্রমণ হার পাঁচের ঘরে আসতে কেমন সময় লেগেছিল জানতে চাইলে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে শনাক্ত হার জিরো হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই সেখানে আবার বেড়ে গেলে তখন লাখ লাখ মানুষকে টেস্ট করে ও লকডাউন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় জিরো হয়ে এসেছিল। আবার সেখানে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জাপানে নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। সেখানে এখন আবার কেস বেশি। থাইল্যান্ডে প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে সেখানে বেড়ে যায়। এখন আবার কমছে। কাজেই কোনোভাবেই শিথিল হওয়া চলবে না। যেখানেই নিয়ন্ত্রণে আসার পর শৈথিল্য দেখিয়েছে, সেখানেই কমে গিয়ে আবার দেখা দিয়েছে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন আক্রান্তদের আইসোলেশন ও চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। বাসায় বা হাসপাতালে যেখানেই হোক, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যাবে। শনাক্ত হওয়ার হার কম, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা সে তুলনায় কমছে না। মৃত্যুর ব্যাপারটা উদ্বেগজনক। এমন হতে পারে, অনেক দিন হয়ে গেছে, মানুষ এখন আর শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে আসছে না। বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। কিন্তু যখন খারাপ অবস্থায় পড়ছে, তখন হাসপাতালে এনেও বাঁচানো যাচ্ছে না। কাজেই বাসায় থাকলেও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরা অব্যাহত রাখে, তাহলে সংক্রমণ কমের দিকেই থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আবার যদি শৈথিল্য আসে, তাহলে আবার বেড়ে যাবে। সে কারণে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না।

পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণে দিকে যাচ্ছে জানতে চাইলে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা তো জানি না পরিস্থিতি এখনকার মতোই থাকবে কি না। সুতরাং এখনই বলা যাবে না। আমরা যদি আগামী এক মাস এ অবস্থা ধরে রাখতে পারি, তাহলে করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। কিন্তু যেহেতু শীত এখনো যায়নি, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অব্যাহত রাখতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার অর্থাৎ রি-প্রোডাকশন রেট (আর-নট রেট) কমেছে বলে জানান এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সর্বশেষ এ হার ছিল দশমিক ৮৭। এর মানে বর্তমানে দেশে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি একজনেরও কম দেহে রোগটি ছড়াচ্ছে। এ হার একের নিচে থাকলে মহামারী নিয়ন্ত্রণের দিকে। আমাদের দেশে অনেক দিন ধরেই আর-নট রেট একের নিচে রয়েছে।

মৃত্যু কমছে না : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যতটা কমে এসেছে মৃত্যু সেভাবে কমেনি। এখনো দৈনিক গড়ে ২০ জনের বেশি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। তবে শেষ এক মাসে আগের মাসের চেয়ে মৃত্যু প্রায় ২৭ শতাংশ কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুয়ায়ী, গত এক মাসে (গত বছর ১৮ ডিসেম্বর থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত) দেশে করোনায় মারা গেছে ৬৮৯ জন। তার আগের এক মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৯৪২ জন। অর্থাৎ শেষ এক মাসে আগের মাসের তুলনায় ২৫৩ জনের মৃত্যু কম হয়েছে, শতকরা হিসাবে যা ২৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এছাড়া শেষ এক মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৩ জন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আগের মাসে মারা গিয়েছিল গড়ে প্রায় ৩১ জন করে।

অধিদপ্তরের গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৩ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদিন মৃতদের মধ্যে ২২ জনই পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের এবং ১৬ জন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এছাড়া মৃতদের ১৬ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৫৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের এ সংখ্যা গত আট মাস ২০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে গত বছর ২ মে ২৪ ঘণ্টায় এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এদিন ১৩ হাজার ৪৪৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here