• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

নদী ভাঙন: লালমনিরহাটে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা পাড়ের মানুষদের

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

একদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয় সেই সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নদী ভাঙন আতঙ্ক। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। করোনাভাইরাস দুর্যোগে নদী ভাঙন আতঙ্ক যুক্ত হয়ে মহাসংকটের শঙ্কায় চিন্তিত লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা পাড়ের মানুষদের।

জানা গেছে, ধরলার আর তিস্তা নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের দুই পাশেই দুই নদী প্রবাহিত। জেলার ৫টি উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে এই খরস্রোত দুই নদী। বালু জমে তলদেশ ভরাট হওয়ায় শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধু ধু বালু চর হলেও বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহের পথ না থাকায় বন্যা আর ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে তিস্তায়।

প্রতি বছর তিস্তার করাল গ্রাসে বসতভিটা হারিয়ে বাঁধ আর সড়কের ধারে মানবেতর জীবন যাপন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।  ভাঙনে ফসলি জমি বিলিন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে নদী খনন করে উভয় তীরে বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান দাবি করছে তিস্তা তীরের মানুষ। প্রতি বছর ভাঙনের সময় আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত দীর্ঘ দিনের এ দাবি পূরণ হয়নি তিস্তা পাড়ের মানুষের।

নদীর অনবরত ভাঙনের শিকার হওয়া পরিবারের লোকজনের মধ্যে চলছে শুধু কান্না আর কান্না। প্রিয় বসতভিটাটিও শেষ পর্যন্ত নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় কাঁদতে কাঁদতে অনেকে হয়েছেন বাকরুদ্ধ।

একের পর এক নদী ভাঙনের কারণে তিস্তা পাড়ের মানুষজন সর্বশান্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব খেটে খাওয়া মানুষগুলো একদিকে করোনার কারণে যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েছে অপরদিকে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। ফলে অনাহারে ,অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটছে।

প্রতি বছর নদী ভাঙন আর বন্যার সংকট কাটিয়ে উঠতে সঞ্চয় করে রাখলেও এবারের সেই সঞ্চয় করোনার লকডাউনে শেষ হওয়ায় মহা সংকটের চিন্তায় পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। নিজেদের প্রয়োজনে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় গোবর্দ্ধন বাহাদুরপাড়ায় স্থানীয়রা চাঁদা দিয়ে বালুর বাঁধ নির্মাণ করেছেন। তবে ওই বাঁধটি রক্ষায় সরকারিভাবে টেকসই ব্যবস্থা নিতে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান স্থানীয়রা।

এবার আগাম বর্ষার হানা দেয়ায় আগাম ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তার বাম তীরে। প্রতিদিন ভাঙনের কবলে পড়ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাগানসহ নানান স্থাপনা। ভাঙনের কবলে পড়ে অপরিপক্ক পাট, বাদাম ও ভুট্টাসহ সব ফসল ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন তীরবর্তী কৃষকরা।

কয়েক দিনের ব্যাবধানে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউপির কুটিরপাড়, চন্ডিমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া এবং সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের প্রায় অর্ধশত বসত বাড়ি তিস্তাগর্ভে বিলিন হয়েছে।

মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়েছে কুটিরপাড়, চন্ডিমারী ও চর গোকুন্ডা গ্রাম। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে জেলার তিনটি সলেডি স্প্যার বাঁধ। সংস্কারের বরাদ্ধ দেয়া হলেও কাজে মন্থরগতি এবং সেই কাজের জন্য নদীর তীরে বোমা মেশিনে বালু তোলার কারণে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা স্থানীয়দের। ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা শাহিন মিয়া, হযরত আলী, সোহরাব হোসেন জানান, কয়েকদিনের অতিবৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে ভাঙন বেড়েছে।

গত এক সপ্তাহে ফসলী জমি, বাঁশ ঝাড় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে বেশ কয়েকবার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। ভাঙন থেমে নেই। নদীতে বাঁধ দেয়া না হলে অতি দ্রুত চর গোকুন্ডা গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে।

তারা আরো বলেন, গ্রামবাসীকে রক্ষার জন্য প্রায় এক কিলোমিটারের অধিক দীর্ঘ বালুর বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা গত বছরই বন্যায় বিলিন হয়ে ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রামটি। পরে জরুরি বরাদ্ধ নিয়ে পাইলিং বাঁধ দিয়ে কিছুটা রক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এ বছর এইসব পাইলিং বাঁধের উজানে ভাঙন শুরু হলে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে ফসলি জমি বসতভিটা।

ভাঙন এলাকায় দ্রুত পাইলিং বাঁধ না দিলে আসন্ন বন্যায় ঝুঁকির মুখে পড়বে কয়েক শত পরিবার ও সলেডি স্প্যার বাঁধ এক এবং দুই। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সরকারের উচ্চমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

একই গ্রামের বৃদ্ধ বদিয়ার রহমান জানান, জীবনে তিনি ২০/২২ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এখন সড়কের পাশে কয়েকটা টিনের ছালায় কোনো রকম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবারো ভাঙনের মুখে পড়েছেন। এবার কোথায় যাবেন। করোনায় ঘরের বাইরে যাওয়া যায় না। সেই ঘর নদীতে ভেঙে গেলে থাকবেন কোথায়? সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাছে বৃদ্ধ বদিয়ারের।

সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের ভাঙনের কবলে পড়া বাদল মিয়া, শরীফ ও রহমত উল্লাহ বলেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে এ গ্রামের ২৫টি বসতভিটা, ‘কবরস্থান, ফসলি জমিসহ বিস্তৃীর্ণ এলাকা তিস্তার গর্ভে বিলিন হয়েছে। কেউ পাশে জমি ভাড়া নিয়ে মাথা গুজার ঠাঁই পেলেও অনেকেই রাস্তার ধারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় পরিদর্শন করে বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ  রোধে বাইরে বের হতে না পেয়ে অনেকেই অর্থ কষ্টে ভুগছেন। এর মাঝে নদী ভাঙন শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন অফিসার আলী হায়দার জানান, বন্যা আর নদী ভাঙনে সহায়তা দেয়ার মত কোনো ঢেউটিন মজুদ নেই। নতুন অর্থ বছরে বরাদ্ধ এলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হবে। তবে করোনা মোকাবিলায় কিছু মজুদ আছে। জরুরি প্রয়োজনে তা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট ডিসি আবু জাফর বলেন, করোনার মাঝেও বন্যা আর নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা ও স্কাউট। বাঁধগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় এলাকায় পাইলিং দেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here