• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

দেশের প্রথম ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে খুলছে ১২ মার্চ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

দেশের প্রথম ট্রাফিক বিরতিহীন সড়ক (এক্সপ্রেসওয়ে) ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ লেনের এই মহাসড়কটি খুলে দেয়া হবে আগামী ১২ মার্চ। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মহাসড়কটি উদ্বোধন করবেন বলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়।

এই সড়কটি চালুর ফলে বাংলাদেশ এক্সপ্রেসওয়ের আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন মহাসড়কে প্রবেশ করবে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত এই মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে দুটি অংশে ভাগ করে। প্রথম অংশে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড়ের মোড় থেকে কেরানীগঞ্জের ইউকুরিয়া বাজার হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় অংশে মাদারীপুরের পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ৪ লেনের মহাসড়কের পাশাপাশি স্থানীয় ধীরগতির যানবাহনের জন্য ২ লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এই ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ৫টি ফ্লাইওভার, ৪টি রেলওভার পাস ও ৪টি বড় সেতুসহ ২৯ গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এতে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। মুজিববর্ষে দেশবাসীর জন্য এই মহাসড়কটি উপহার হিসেবে ঘোষণা করবে প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্রিগেটের তত্ত্বাবধায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপদ অধিদফতর (সওজ)।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এই মহাসড়কটি দুই অংশে ভাগ করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (কেরানীগঞ্জে ইউকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া ৩৫ কিলোমিটার অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্যাকেজে পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশ নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৮০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই মহাসড়কে ২৯টি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ধলেশ্বরী-১, ধলেশ্বরী-২, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদীতে ৪টি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আবদুল্লাহপুর-তেঘরিয়া-বাবুবাজার লিংক রোড, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার ও সুদারপুর এলাকায় ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। মহাসড়কের জুরাইন, কুচিয়ামোরা, শ্রীনগর ও আতাদি এলাকায় রেল লাইনের উপর ৪টি রেল ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯টি আন্ডারপাস, ৫৪টি কালভার্ট ও ২টি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের মে মাসে নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তিন মাস আগেই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের প্রথম ৬ লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক মার্চে উদ্বোধন করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে একেবারে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীকে সশরীরে এটি উদ্বোধনের অনুরোধ জানিয়ে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তিনি যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই উদ্বোধন করা হবে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের দুলাইপাড় র‌্যামের একটু সামনে থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক। মহাসড়কের মুখে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ফলক। দুলাইপাড় থেকে একটু সামনেই শুরু হয়েছে জুরাইন রেলওভার পাস। এর দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ধীরগতির যান চলাচলের সড়ক। রেল ওভারপাসটি পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এভার বুড়িগঙ্গা সেতু পার হয়ে কেরানীগঞ্জের ইউকুরিয়া বাজার হয়ে ঢাকা জেলা ও মুন্সীগঞ্জ জেলা হয়ে মাওয়ায় পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর পদ্মা সেতু পার হয়ে মাদারীপুরের পাঁচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ৫৫ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ে। মহাসড়কের মূল কাজ প্রায় শেষ দিকে। এখন চলছে ননস্টপ এই এক্সপ্রেসওয়ের উভয়পাশের কংক্রিটের ঢালাই, ওভারপাস, আন্ডারপাস ও সৌন্দর্য বর্ধনসহ শেষ দিকের কাজ। এই সড়কের কিছু অংশ বাদ দিলে মূল সড়কের উপর দিয়ে বর্তমানে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। মহাসড়কের পাশেই ২ লেনের সড়ক ব্যবহার করে ধীরগতির যানবাহন এলজিইডি’র রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এই মহাসড়কের পাশে ২ লেনের সার্ভিস সড়ক নির্মাণের ফলে যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

এ বিষয়ে ইউকুরিয়া বাজার এলাকায় সালাম বেপারী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই সড়ক নির্মাণের ফলে শুধু কেরানীগঞ্জ নয় পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসীর যোগাযোগ সহজ হয়েছে। আগের ইউকুরিয়া থেকে গুলিস্তান যেতে সময় লাগতো ১-২ ঘণ্টা। এখন সময় লাগে মাত্র ১৫-২০ মিনিট। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ফলে খুলনা ও বরিশালের আন্তঃজেলা বাসে দুর্ঘটনা কম হবে। আগে প্রায়ই এই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটতো। তবে সতর্ক থাকতে হবে ধীরগতির যানবাহন যাতে মহাসড়কে উঠে না পড়ে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সওজ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দীন খান বলেন, মুজিববর্ষে দেশবাসীর জন্য উপহার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৬ লেন মহাসড়ক। মার্চে এই মহাসড়কটি খুলে দেয়া হবে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ৪ লেন এই মহাসড়কের পাশাপাশি ২ লেনের ধীরগতির সড়ক রয়েছে। স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য এই সড়ক নির্র্মাণ করা হয়েছে। তেঘরিয়া এলাকায় সার্ভিস সড়কের কিছু কাজ বাকি আছে। এটা নির্মাণ হয়ে গেলে স্থানীয়দের যাতায়াতের কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর সোয়া ৬ কিলোমিটার যোগ হয়ে মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৬১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ের কোন স্থানেই ট্রাফিক সিগন্যাল থাকবে না। ফলে কোন যানবাহনকে রাস্তায় থামতে হবে না। সময়ও নষ্ট হবে না। যানবাহনের গতিও অনেক বাড়বে। স্থানীয় পর্যায়ের যানবাহন চলাচলের জন্য প্রকল্পের ভেতরে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মহাসড়কের উভয়পাশে ৫ ফুটের বাড়তি ২টি লেন রাখা হয়েছে। এই লেন ব্যবহার করে স্থানীয় যানবাহন চলাচল করবে। স্থানীয় গাড়িগুলো বক্স কালভার্টের নিচ নিয়ে চলাচল করবে। উপরের এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলবে দূরপাল্লার গাড়ি। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সড়কের উপর যানবাহনের চাপ বহুগুণ বেড়ে যাবে। স্থানীয় পর্যায়েও যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে। এ কারণে মূল এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাশের ২ লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। দু’দিকে সার্ভিস সড়কসহ মহাসড়কটির প্রশস্ততা ৪১ দশমিক ২০ মিটার। এর মধ্যে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত (এক্সসেস কন্ট্রোল) ৪ লেনের প্রশস্ততা ১৪ দশমিক ৬০ মিটার। উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রভিশন হিসেবে মহাসড়কের মাঝে মিডিয়ান রাখা হয়েছে ৫ মিটারের। এছাড়া ব্রেক ডাউন লেন (মূল মহাসড়ক থেকে বের হওয়ার পথ) দু’দিকে ৩ মিটার, সার্ভিস রোড দু’দিকে ১১ মিটার ও বাকিটায় অন্য ব্যবস্থা (সোল্ডার, বেরিয়ার ইত্যাদি) রাখা হয়েছে।

এর বাইরে মহাসড়কটিতে অবস্থিত রেলপথের উপর নির্মিত ওভারব্রিজের প্রশস্ততা ৩৬ দশমিক ৫০ মিটার। আর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনগুলোয় (মোড়) নির্মিত ফ্লাইওভারের প্রশস্ততা ২০ দশমিক ৭০ মিটার। এছাড়া ফ্লাইওভারের দুই পাশে অতিরিক্ত ২৬ দশমিক ১০ মিটার সার্ভিস সড়ক ও অন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক থেকে রাজধানীতে প্রবেশপথ হিসেবে বিবেচিত প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর প্রশস্ততা মাত্র ১৭ দশমিক ৬০ মিটার। এর মধ্যে যান চলাচলের অংশ ১৪ মিটার ও দু’দিকে ফুটপাত ৩ দশমিক ৬০ মিটার। অর্থাৎ মহাসড়কের অর্ধেকেরও কম প্রশস্ত সেতুটি। তাই প্রথম বুড়িগঙ্গার পাশে পৃথক আরেকটি সেতু নির্মাণে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শতভাগ সরকারি অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা দুই দফা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এরপরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এতে প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেয়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফলে ২ প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ৬ লেন বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here