• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

দরিদ্র মাদরাসাছাত্রী এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

বাবা-মা, চার ভাই, দুই বোনসহ আট জনের সংসারে বসবাস করতেন পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান খাদিজা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। তবে অভাবের সংসারের সদস্য খাদিজার শিক্ষা জীবনের পথচলা মসৃণ ছিল না। তবে কঠোর পথ পাড়ি দিয়ে আজ তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের প্রভাষক। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খাদিজা খাতুন ওই বিভাগে যোগদান করেন।

খাদিজার বাড়ি ফুলবাড়ীয়া সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৩০কিলোমিটার অদূরে। তার বাড়িটি এনায়েতপুর বাজার ভায়া রাজঘাট কাঁচা সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত। তার বাড়িতে তিনটি টিনশেড ঘর দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাদিজার ভাই সোহাগ কৃষি পেশায় কর্মরত, বোন তাসলিমা ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী, আনোয়ার হোসেন মুঞ্জু আনন্দ মোহন কলেজের সম্মান শ্রেণির ছাত্র, আজহারুল ইসলাম (শারীরিক প্রতিবন্ধী) দাখিল পরীক্ষার্থী ও ছোট ভাই তারিকুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

মেধাবী খাদিজা খাতুনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার এনায়েতপুর ইউপির এনায়েতপুর গ্রামের মহিষেরচালায়। তার বাবার নাম মো. রুহুল আমিন ও মায়ের নাম হালিমা খাতুন।

প্রভাষক খাদিজা খাতুনের বাবা বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়ার সময় মেয়ে দোয়া নিয়েছিল। ওই দিন আমি কেঁদেছিলাম। অবশেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। এছাড়া শিক্ষক, এলাকাবাসীসহ অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ রয়েছি। এখন প্রভাষক মেয়ের সহায়তা পেলে বাকি সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারব।

মা হালিমা খাতুন বলেন, মেয়ে প্রভাষক হওয়ার পর বাড়িতে আত্মীয়দের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বাড়িতে এসে যখন কেউ প্রশ্ন করে খাদিজার মা কে? তখন আমার বুক গর্বে ভরে উঠে। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।

খাদিজার মামা মোশারফ জানান, এনায়েতপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা বাড়ির পাশে থাকায় সেখানে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। ফলে সেই মাদরাসায় খাদিজাও তার সঙ্গে যাওয়া শুরু করেন। খাদিজা অষ্টম শ্রেণিতে উদ্দীপনা পুরস্কার পেয়ে উপজেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে তার বাবাকে মাদরাসার পরিচালনা কমিটিতে স্থান দেয়া হয়। পরে তার ভাগনি দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস অর্জন করেন। সেই মাদরাসায় বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় তাকে শাহাবুদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করা হয়।

এনায়েতপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ এ.কে.এম হাবিবুল্লাহ ফকির জানান, অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে খাদিজা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। পরে নিয়মিত শ্রেণি পাঠদানের পাশাপাশি তাকে নবম-দশম শ্রেণিতে আবাসিক ফ্রি পাঠদান করাতেন শিক্ষকরা।

শাহাবুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন জানান, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর খাদিজার লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি ভাবতেন, খাদিজা দেশের বিশিষ্টজনদের মধ্যে একজন হবে। তিনি তাকে নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের প্রভাষক খাদিজা খাতুন বলেন, অজোপাড়া গায়ের সন্তান আমি। এখন অবহেলিত ও অশিক্ষিত সমাজের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার প্রত্যাশিত আশা পূরণ হয়েছে। তবে এখনো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here