• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

তথ্য গোপন: ফেঁসে যেতে পারেন বিএনপি প্রার্থী আউয়াল

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই এবার হলফনামায় সম্পদ গোপনের অভিযোগে নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনী হলফনামায় সিঙ্গাপুরে থাকা মিলিয়ন ডলারের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এই প্রার্থী। বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে বিনিয়োগ করা অর্থের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)সহ বিশিষ্ট নাগরিকদের আহ্বানের মধ্যেই ফাঁস হয়েছে তাবিথ আউয়ালের হলফনামায় তথ্য গোপনের প্রমাণ। বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে বিএনপির হাইকমান্ডকেও।

দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের সূত্রগুলো বলছে, গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার এ ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারের বিএনপির এ প্রার্থী। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন তথ্য চলে আসায় পদক্ষেপ নেয়ার কাজও শুরু হয়েছে। তবে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও নির্বাচন পর্ববেক্ষকরা প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তির সব তথ্য দ্রুত খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তারা একই সঙ্গে বলেছেন, কমিশনের উচিত কেলেঙ্কারিতে আসা সম্পদের বিষয়ে প্রার্থীকে তাগাদা পত্র দেয়া। যে তথ্য ফাঁস হয়েছে তারও ওপর ভিত্তি করে যদি প্রার্থী গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে ব্যর্থ হন তবে আইন অনুসারে প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।

আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, সিঙ্গাপুরে ২০০৮ সালে যৌথ মালিকানায় নিবন্ধিত এনএফএম এনার্জি কোম্পানির ১০০০ শেয়ারের মধ্যে ৩৪০ শেয়ারের মালিক তাবিথ আউয়াল। এছাড়া বাকি ৬৬০ শেয়ারের মালিক তাবিথ আউয়ালের দুই ভাই তাসফির আউয়াল এবং তাজওয়ার আউয়াল। তাবিথ আউয়াল এবং তার ভাইয়েরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পরিচয়ে ওই কোম্পানিতে নিবন্ধন করেন। কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সিঙ্গাপুরের আরেকজন নাগরিক। কিন্তু তাবিথ আউয়াল নির্বাচনী হলফনামায় তার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণাধীন যে ৩৭টি কোম্পানির তালিকা দিয়েছেন সেখানে বিপিসিএল ও এনএফএম এর নাম নেই।

সিঙ্গাপুরের একাউন্টিং এবং কর্পোরেট রেগুলেটরি অথরিটি (এসিআরএ) জানায়, প্রাথমিক পণ্য উৎপাদন এবং খাবার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতে এনএফএম এনার্জি। এছাড়া বিভিন্ন জ্বালানি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতেও তারা বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের একটি বড় অংশের মালিক এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড। কোম্পানিটির সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক বিবরণী থেকে জানা যায়, কোম্পানির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৭ ডলার।

এনএফএম এনার্জি কোম্পানিটি বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের (বিপিসিএল) একটি বড় অংশের মালিক কিন্তু তাবিথ আউয়াল তার কোম্পানিটির নাম নির্বাচনী হলফনামায় অন্তর্ভুক্ত করেননি, যা নির্বাচনী আইন ও বিধির লঙ্ঘন।

এদিকে পানামার ব্যবসা নিবন্ধক সংস্থার নথি এবং প্যারাডাইস পেপার্সে মাল্টিমোড ইন্টারন্যাশনাল নামের আরেকটি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। যে কোম্পানিটির ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) ও ডিরেক্টর হিসেবে তাবিথ আউয়ালের নাম রয়েছে। মাল্টিমোড ইন্টারন্যাশনাল এসএ নামক এই কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাবিথের বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টু।

জানা গেছে, প্যারাডাইস পেপারস নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গেও যোগাযোগ করছে দুদক। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ইতোমধ্যেই বলেছেন, দুর্নীতির যে বিষয়টা, প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম এসেছে তাদের সবাই প্রাইভেট পারসন। যাদের নাম প্যারাডাইস পেপার্সে এসেছে তাদের বিষয়ে জানতে বিভিন্ন দেশে এমএলএআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট) পাঠানো হয়েছিল। এমএলএআরর জবাব এখনও আসেনি। সে কারণে অনুসন্ধান শেষ হয়ে যায়নি, অনুসন্ধানের গতি কিছু শ্লথ হয়েছে। তবে অনুসন্ধান চলছে।

এদিকে গত সপ্তাহেই প্যারাডাইস পেপারে তাবিথ আউয়ালের নাম আসা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে এই প্রার্থীর সম্পদের হিসেব যাচাই করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকার নেত্রী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, আসলে প্রার্থীদের তথ্যসহ এ সংক্রান্ত সব তথ্য খতিয়ে দেখার দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাদেরই এ বিষয়ে দেখতে হবে। কেউ তথ্য গোপন করেছেন কিনা? তা নিয়ে আমরা কথা বলেও কোন লাভ হবে না যদি না নির্বাচন কমিশন আমলে না নেয়। তাই সবার আগে যেটা দরকার নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দেয়া।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যমই এ বিষয়গুলো তুলতে হবে। গণমাধ্যম বলতে পারে এমন একটি বিষয় আছে যেটা নির্বাচন কমিশন তখন দেখতে বাধ্য হবে। এটা দরকার।

দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, কোন প্রার্থী তার সম্পদের হিসাবে, হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন কিনা তা দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এটা দেখা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পরে। এটা আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আশা করি যে, তারা বিষয়টি ভালভাবে দেখবেন। কারণ এটা তাদের দেখার দায়িত্ব।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীও এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব সময় কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় ছেড়ে দিলেতো হয় না। এনাফ হয়েছে। হ্যাঁ কেউ যদি সৎ হন ঠিন আছে। কিন্তু কেউ যদি সৎ না হন, যদি তথ্য লুকান তাহলেতো নির্বাচন কমিশনকেই তা দেখতে হবে। তাই আমার কথা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখুক।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেছেন, আমার বক্তব্য স্পষ্ট। মহামান্য আদালতের নির্দেশ অনুসারে যে আটটি তথ্য প্রার্থীরা দিয়েছেন তা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশনকে অবশ্যই দেখতে হবে। কমিশনের উচিত ‘প্যারাডাইস পেপার্স’ কেলেঙ্কারিতে আসা সম্পদের বিষয়ে প্রার্থীকে তাগাদা পত্র দেয়া। যদি প্রার্থী গ্রহণযোগ্য জবাব দিতে ব্যর্থ হন তবে অবশ্যই তার প্রার্থিতা বাতিল করা।

নিজের সম্পত্তির গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার এ ঘটনার বিষয়ে বহুবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে। তবে তার নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই বিদেশের একটি পত্রিকায় আসা তথ্য ও ডকুমেন্টের বিষয়ে তাবিথ আউয়াল ও তার বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু সিঙ্গাপুরে কথা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবেও কাজ করা হচ্ছে। এমনকি বিষয়টি লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অবগত করা হয়েছে। কোন আইনী ঝামেলা হলে কিভাবে সামাল দেয়া হবে তা নিয়েও কাজ চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে এসব বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে নেতাদের। বিষয়টির নিয়ে কথা বলার জন্য সেলফোনে কয়েকবার কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি। এরপর দুটি নম্বরে পরিচয় উল্লেখ করে মেসেজ পাঠানো হলে অপরপ্রাপ্ত থেকে তার পিএস পরিচয়ে বলা হয়, ‘তিনি (তাবিথ আউয়াল) নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত আছেন। গণসংযোগে আছেন। কিন্তু কোন বিষয়ে কথা বলবেন?

পিএসের এমন প্রশ্নে তথ্য পোপন ও বিদেশী দুটি গণমাধ্যমের রিপোর্টের বিষয়ে প্রতিক্রিয় নিতে চাই জানালে তিনি বলেন, ‘আগে একটি পত্রিকায় এসেছে সিঙ্গাপুরে সম্পত্তির কথা। তা তিনি দেখেছেন। অপর গণমাধ্যমের রিপোর্টটি হোয়াটসএ্যাপে পাঠানোর অনুরোধ করেন তাবিথ পিএস পরিচয়ের ওই ব্যক্তি। বলেন, ‘রিপোর্ট নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে সেলফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেব’। তবে রিপোর্ট পাঠিয়েও পরে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
 
যদিও ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম তাবিথ আউয়ালের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘আমার সব নথিপত্র আমার আইনজীবীরা তৈরি করেছে। তারা আইন এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝেই নথিপত্র তৈরি করেছে। এছাড়া এনএফএম বাংলাদেশের পেট্রোকেমিক্যালের অংশীদার এটিও স্বীকার করে নিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। তিনি আরও জানান, এনএফএম এনার্জি ছাড়া আর কোন বিদেশী কোম্পানিতে তার কোন শেয়ার নেই। এদিকে পানামা পেপার্সের নামের বিষয়ে জানতে চাইলে তাবিথ বলেন, আমার এই সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। আমার নাম কি সেখানে আছে?

বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিনি প্রথমবারের মতো বিষয়গুলো শুনছেন এবং বিস্তারিত না জেনে তিনি মন্তব্য করবেন না।

Place your advertisement here
Place your advertisement here