• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতো পাপিয়া

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জাল নোট সরবারহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত শামিমা নূর পাপিয়া। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে কম বয়সী মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতো পাপিয়া। যাদের অধিকাংশই চাকরি দেয়ার কথা বলে ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হতো। এসব অনৈতিক কাজে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।

রোববার বিকেলে র‍্যাবের কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। তিনি বলেন, গতকাল শনিবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- শামিমা নূর পাপিয়া, তার স্বামী মফিজুর রহমান, তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা।

শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নারী সংক্রান্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবারহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, জাল নোট ২৫ হাজার ৬০০ টাকা, ভারতীয় রুপি ৩১০, শ্রীলংকান মুদ্রা ৪২০, ইউএস ডলার ১১ হাজার ৯১ ও ৭টি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীর দেয়া তথ্যমতে, রোববার হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিংকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট রুম থেকে ও ফার্মগেট এলাকার ২৮নং ইন্দিরার ‘রওশন’স ডমিনো রিলিভো’ নামক ভবনে তাদের দু’টি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা/এটিএম ১০টি উদ্ধার করা হয়।

সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সম্পর্কে সিও বলেন, তাদের বর্তমান সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সম্বন্ধে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছে। ফার্মগেট এলাকার ২৮ ইন্দিরা রোডে তাদের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, তেজগাঁও এফডিসি এলাকায় অংশীদারিত্বে তাদের ‘কার একচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুমে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। 

এ ছাড়া নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি, জেলার বাগদী এলাকায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ২টি প্লট, ও ‘কেএমসি কার ওয়াস এন্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক এ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমান অর্থ গচ্ছিত আছে। এ ব্যাপারে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

র‍্যাবের অনুসন্ধানে আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় তাদের রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতে দেখা যায়। সর্বশেষ গত বছরে ১২ অক্টোবর থেকে চলতি মাসের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন হোটেল ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল রুমে অবস্থান করে এবং আনুষঙ্গিক খরচসহ ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা পরিশোধ করে। তাদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রকৃত উৎস জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে র‍্যাব জানতে পারে, শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, আসামিরা পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার নামে মোট ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে বলে জানা যায়।

সর্বশেষ পাপিয়া তার ও স্বামী সুমনের আধিপত্য বিস্তারের সম্পর্কে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় ‘কিউ এন্ড সি’ নামক একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। যাদের মাধ্যমে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সব ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তাদের এই ক্যাডার বাহিনীকে গ্রেফতারের লক্ষে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here