• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

গাইবান্ধার ৩৩ পয়েন্টে ভাঙন শুরু: নদীর পেটে শতাধিক ঘরবাড়ি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

নদীবেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, কাটাখালী, ঘাঘট, বাঙ্গালী, করতোয়া, আলাইসহ কয়েকটি নদ-নদী। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদীগুলো জেলার মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। গত ১৫ দিন আগেও নদীবেষ্টিত বেশির ভাগ চরাঞ্চল ছিল ধু ধু মরুভূমির মতো। এখন নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার প্রায় ৩৩টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার নদীবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩৩টি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত বেলকা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ উপজেলার ১০টি পয়েন্টে গত দুই মাস ধরে নদী ভাঙনের ফলে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

বেলকা ইউনিয়নের আব্দুল মালেক জানান, ভাঙন প্রতিরোধে নাম মাত্র বালুভর্তি ব্যাগ ফেলানো হয় আর সান্ত্বনা দেয়া হয় । এভাবে নদী ভাঙনের ফলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়েনের পাঁচটি পয়েন্টে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে । ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র নদে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে এখনও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ শুরু করেনি।

কামারজানী ইউনিয়নের কলেজছাত্র শামীম মিয়া জানান, কামারজানী ইউনিয়নে গত ২ বছরে সরকারি স্কুল, মসজিদ, মাদরাসাসহ কয়েক হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকার যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় আগামীতে এই ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হবে।

অপরদিকে ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী ও খাটিয়ামারী এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে এ উপজেলার মানচিত্র পাল্টে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশে গেছে। ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারি চরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই চরটি নদীগর্ভে বিলীন হবে। এতে সহস্রাধিক পরিবার গৃহহীন হবে।

ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, দুই বছরে খাটিয়ামারী বাজারের শতাধিক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চরের কারণে এই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ করে না।

সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের বড়নতাইড় গ্রামে যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে এই ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

সাঘাটার ভরতখালী ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আজাদ শীতল বলেন, যখন শুকনো মৌসুম তখন বাধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কাজ চোখে পড়ে না। যখন বর্ষা মৌসুম আসে বা নদী ভাঙন দেখা দেয় ঠিক তখননি শুরু হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৌড়-ঝাঁপ ।

নদী ভাঙনের শিকার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার যে গ্রামগুলোতে আমরা অবস্থান করেছিলাম সেই গ্রামগুলো নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে । বড়নতাইড় গ্রামে জন্মগ্রহণের স্মৃতি হারিয়ে নিজেকে নদীর কাছে পরাজিত সৈনিক মনে হচ্ছে।

এই উপজেলার বাঙ্গালী নদীর ওপর রয়েছে মেলান্দহ সেতু। এই সেতুর দক্ষিণে বাঙ্গলী নদীর ভাঙনের কবলে চর পাড়া গ্রাম নদীগর্ভে বিলীনের পথে। নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা স্থানীয় রাজু মিয়া অভিযোগ করেন, এই স্থানে ভাঙন ঢেকাতে বার বার কাজ করার কথা বললেও কোনো কাজ করছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, এ উপজেলায় গত ২ বছরে হলদিয়া ইউনিয়নের দুটি মসজিদ, একটি কবরস্থান, ৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তাসহ তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করছে। এখনও হুমকির মুখে রয়েছে একটি তিন তলা মাদরাসা, চারটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুটি ঈদগাহ মাঠসহ আরও কয়েক হাজার পরিবার। ভাঙনের কবল থেকে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র সরাতে ব্যস্ত এলাকার মানুষ। তারা এখন অসহায় হয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন বলেন, বাঙ্গালী নদীবেষ্টিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ, রাখাল বুরুজ, আদর্শগ্রাম ও সাঘাটা উপজেলার কচুয়া, রামনগর, গুজা এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই বছরেও এসব এলাকার পাঁচ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে গাইবান্ধা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ অব্যাহত আছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে যে সব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সে সব এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুস শহিদ জানান, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনের বাস্তব চিত্র নীতি-নির্ধারক মহলে প্রেরণ করে নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here