• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

কুড়িগ্রামে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

উজানের ঢল এবং অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল। দশদিনের বেশি সময় ধরে পানির নিচে ডুবে থাকা এসব ফসল বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমের আউশ ধান, কাউন, চিনা, তিলসহ সবধরনের সবজি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পাট অর্ধনিম্মজিত থাকায় আংশিক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। 

 কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বন্যাকবলিত এলাকায় আগত আমন মৌসুমের  বীজতলা ৪৩৫ হেক্টর, শাকসবজি ৪২৫ হেক্টর, তিল ২৪০ হেক্টর, কাউন ৫ হেক্টর, চিনা ৮০ হেক্টর, মরিচ ৫৮ হেক্টর পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং ৩৫৯০ হেক্টর পাট অর্ধনিম্মজিত অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যে, গত ১৭ জুন থেকে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গাধরের পানির বৃদ্ধি তখন থেকেই চলমান ছিল। ফলে এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের ফসল আগেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসব চরাঞ্চলের বেশিরভাগ ফসল দশদিনের অধিক সময় ধরেই পানির নিচেই ছিল। ফলে সম্পূর্ণরূপে এসব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। 

এই আগাম বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি চাষিরা। পটল, ঢেঁড়স, চিচিংগা, ঝিঙ্গা, বেগুন, চালকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফসলের মাত্র ফলন আসা শুরু হয়েছিল। তলিয়ে যাওয়া এসব ক্ষেতের ফসল মরে নষ্ট হচ্ছে। ফলে কৃষক সকল বিনিয়োগ হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। 

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ভিতরবন্দ, খাষমহল এলাকার সবজি চাষিরা জানান, ইতোমধ্যে পানি উঠে তাদের চাষ করা পটল, ঢেঁড়স, চিচিংগা, বেগুন, চালকুমড়ার গাছ মরে গেছে। বিনিয়োগের সামান্য টাকাও ঘরে তুলতে পারেননি তারা। 

ওই এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, ঋণ করে চার বিঘা জমিতে করলা, চিচিংগা, ঝিঙ্গা, চালকুমরা লাগিয়েছিলেন, ফলন আসার প্রাক্কালে পানি উঠে সব শেষ হয়ে গেছে তার। তার দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই অবস্থা কৃষক আব্দুল করিমের। তিনিও ঋণ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছিলেন যা পানিতে তলিয়ে মরে গেছে। 

এদিকে পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় উঁচু বাঁধ এবং স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি অনেক মানুষ। এমনিতে করোনায় দীর্ঘদিন কাজহীন জেলার দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপর আগাম বন্যা। সবমিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ। 
অন্যদিকে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দিনে-রাতে বৃষ্টির কারণে জ্বালানি খড়-খড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বানভাসিদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। 

সবশেষ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, বন্যায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৫৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৫ হাজার ৬শ’ পরিবারের ৬৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছে ৫শ’ পরিবার। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে মৎস্য বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতোমধ্যে শতাধিক পুকুর প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষিরা।

জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, ইতোমধ্যে বন্যাক্রান্তদের জন্য ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং  বন্যা কবলিতদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here