• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

করোনা টেস্টে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে হলে পড়ুন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

করোনা পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরিকৃত কিট গ্রহণ না করায় সোশ্যাল মিডিয়া সরকারের সমালোচনায় মুখর । কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত যে জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থের কথা চিন্তা করেই, সেটা বিবেচনায় আনা হচ্ছেনা ।

যদি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই কিট সরকার গ্রহণ করে তা ব্যবহার শুরু করতো, সেটা কি বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতো? উত্তর হচ্ছে “না” । এই কিট ব্যবহার শুরু করলে আমাদের করোনা টেস্ট করার গতি এবং খরচ দুটোই বেড়ে যেত । কারণ হচ্ছে এই কিট শতভাগ নিশ্চিত ফলাফল দিতে পারেনা এবং অনেক ক্ষেত্রেই “ফলস নেগেটিভ” অর্থাৎ করোনা পজিটিভ রোগীকে করোনামুক্ত হিসেবে ফলাফল দিবে । যার কারণে শতভাগ নিশ্চিত হতে আবার পিসিআর টেস্ট করতেই হবে ।

জেনে রাখা ভালো, করোনার ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোথাও এ ধরণের র‍্যাপিড টেস্ট কিট সফল হয়নি । ব্রিটেন, নেদারল্যন্ড এর মত দেশ চায়না থেকে এ ধরণের কিট কিনেও পরবর্তীতে ভুল ফলাফলের কারণে ব্যবহার করতে পারেনি । এই র‍্যাপিড কিট হস্তান্তরের দুইদিন আগে এন্টিবডি টেস্ট এর কথা বলে দুইদিন পরে যদি বলা হয় এটি এন্টিজেন টেস্ট করবে তখন এই ধরণের ভিত্তিহীন টেস্ট কিট ব্যবহার কি সরকারের দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে?  

এ ধরণের একটি ডায়াগনিস্টিক কিট প্রস্তুত করার জন্য যেসকল নিয়ম মানতে হবে তার থোরাই কেয়ার করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র । নিচের চারটি নিয়ম এ ধরণের পণ্য প্রস্তুতে অবশ্যই মেনে চলতে হবে

১। কিটটির প্রটোটাইপের কার্যকারিতা কিভাবে পরীক্ষা করা যায় সেটি নিয়ে একটি প্রটোকল লিখতে হবে এবং সেটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি Bangladesh Medical Research Council [BMRC]).

২। প্রটোকল এপ্রুভ হলে তারা বা থার্ড পার্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিটটির কার্যকারিতা নিয়ে একটি এপিডেমিওলজিকাল গবেষণা করবে।

৩। গবেষণার সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে Directorate General Drug Administration (DGDA) এর কাছে জমা দিতে হবে

৪। DGDA সকল তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে অনুমতি দিলে সেই কিটটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করা যাবে

 

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য উপরের চারটি নিয়মের একটিও পালন করেনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র । বরং DGDA এর অনুমতি ব্যতিত যেখানে যেকোন ঔষধ জাতীয় পণ্য বাজারজাতকরণ দন্ডনীয় অপরাধ সেখানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বৈজ্ঞানিক ভিত্তিবিহীন একটি কিট দেশে বিদেশে হস্তান্তর করা শুরু করে দিয়েছে কোনো অনুমতির তোয়াক্কা না করেই । শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের যেকোন দেশে এই ধরণের অনুমোদনবিহীন কার্যক্রম বেআইনী এবং দন্ডনীয় ।

সরকারের কোনো অনুমতি ছাড়াই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বিদেশ থেকে চুপিসারে করোনা পজিটিভ রোগির রক্ত নিয়ে আসে । এই কিট তৈরিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আসলে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে নাকি নিজেদের বানিজ্যিক প্রাপ্তিই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য, তা পরিস্কার হয় এই ঘোরতর অনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে।

করোনার মত ভয়াবহ মহামারীর সময় এ ধরণের কিট আবিস্কারের প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং অতীতে বাংলাদেশ এ ধরণের আবিস্কারে ব্যপক সফলতা দেখিয়েছে । কিন্তু অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে পুরোপুরি অনুমান নির্ভর, মান প্রমানহীন একটি পণ্য এই করোনাকালীন সময়ে জনগণের উপর প্রয়োগ কি আদৌ আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনতো? নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখুন, DGDA সহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এই কিট ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ এবং জনকল্যাণেই নয় কি?

Place your advertisement here
Place your advertisement here