• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

এখন সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

মুজাহিদুল ইসলাম

আমরা অনেকেই হয়ত বুঝতে পারছি না যে, আমরা একটি জাতীয় ও বৈশ্বিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করছি। যুদ্ধের সময় প্রয়োজন হয় ঐক্যের। বিভেদ শক্তিকে নষ্ট করে। অথচ আমরা ঐক্যের পথে না হেঁটে বিভেদের পথে হাঁটছি। যতটুকু শক্তি আছে, ততটুকু নষ্ট করছি। এক প্রফেশনের লোক আরেক প্রফেশনের লোকের ত্রুটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। এটি ত্রুটি খুঁজার সময় নয়। এটি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। এটি হাতে হাত রেখে যুদ্ধ মোকাবেলা করার সময়।

হ্যাঁ স্বীকার করছি, প্রশাসন ও পুলিশের কিছু সদস্য দায়িত্ব পালনে অসতর্ক ও অযাচিত আচরণ করছেন এবং তারা নিজেদের কর্মের জন্য সমালোচিতও হচ্ছেন। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে, আমরা গোটা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলবো। অযাচিত ও হিংসাত্মক ভাষায় তাদের মনোবল ভেঙ্গে দিব।

আমরা কী এটা অস্বীকার করতে পারব যে, আমরা সবাই যখন ঘরে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছি, তখন প্রশাসন ও পুলিশের হাজার হাজার সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন। প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের কী করোনার ভয় নেই? জীবনের মায়া নেই? ফ্যামিলি নেই? অবশ্যই আছে। তারা যখন কর্তব্য পালনে ঘর থেকে বের হয়, তখন তাদের ছোট বাচ্চাটি কী কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেনা-আব্বু/ আম্মু ঘর থেকে বের হয়ো না। তোমাকে করোনা ধরবে।
বলে। অবশ্যই বলে।

তারপরও তাদের সন্তান, পরিবার ও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। কর্তব্য পালনে মাঠে-ঘাটে ছুটতে হচ্ছে। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা শুধু ক্ষমতা দেখাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে। জীবনের চেয়ে নিশ্চয় তাদের কাছে ক্ষমতার মায়া বেশি নয়।

আর হ্যাঁ, কমবেশি ক্ষমতা আমরা কে না দেখাই? আমাদের ক্ষমতা নেই, তাই আমরা দেখাতে পারছিনা। কিন্তু যখনই আমাদের যৎসামান্য ক্ষমতা আসে, তখনই আমরা প্রতিযোগিতা করে ক্ষমতা দেখাতে মাঠে নেমে যায়। বৃষ্টি বা হরতালে আমাদের রিক্সাওলারা ক্ষমতবান হয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্ষমতা দেখায়। গৃহিণীরা ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ না পেয়ে কাজের মেয়েদের ক্ষমতা দেখায়। আমাদের শিক্ষকরা প্রশাসক হলে আরেক শিক্ষকের চৌদ্দগোষ্ঠী উচ্ছেদ করে ছাড়ে। ক্ষমতা দেখানো আমাদের জাতীয় রোগ। কম বেশি আমরা সবাই এ রোগে আক্রান্ত।

সমালোচনা ও দোষারোপ করলে সবারই করা যাবে। তবে এটি সমালোচনার জন্য সমালোচনা করার সময় নয়। এটি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার সময়। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। দূরে থেকে কাছে থাকার সময়। তাই, আসুন সমালোচনার জন্য প্রশাসন ও পুলিশের সমালোচনা না করে তাদের সহযোগিতা করি। একটি কঠিন বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা। দেশের এ দুঃসময়ে আমাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যদি মনোবল ভেঙ্গে যায়, তবে দেশে যে ভয়াবহ অরাজকতা, বিশৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তা আমাদের সবার জীবনকেই বিপন্ন ও বিপর্যস্ত করবে।

আরেকটি বিষয়, বিসিএস ক্যাডার ও পুলিশ মানেই খারাপ নয়। অহঙ্কারী নয়। উদ্ধত নয়। আমাদের প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীতেও অনেক মানবিক ও বিনয়ী সদস্য রয়েছে। তাদের সংখ্যাটাও একদম কম না। বরং দিন দিন মানবিক অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহারণ স্বরুপ আমি এখানে তিনজনের কথা উল্লেখ করছি।

প্রথম জনের নাম ফসিউল্লাহ। বর্তমানে তিনি সচিব পদমর্য়াদায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ পালন করছেন। সবসময় যিনি বলেন, আমি বৃটিশ প্রশাসনের অফিসার নই, আমি এ দেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। গরিব ও দুঃখী মানুষের করের পয়সায় আমার বেতন হয়। আমার কাজ হল দেশের মানুষের সেবা করা। আমি অফিসার নই, আমি সেবক। উনাকে আমি খুব কাছ থেকে চিনি। কোনোদিন কারো সাথে খারাপ আচরণ করেছেন-এমনটি শুনি নি এবং দেখি নি।

দ্বিতীয়জন রাজশাহীর বর্তমান ডিসি। নাম হামিদুল হক। আমি তাঁকে চিনি না। তিঁনিও আমাকে চিনেন না। তবে রাজশাহির অনেক মানুষের কাছে তার মানবিকতার গল্প শুনেছি। পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন পড়াতে হলে শিক্ষার্থীদের কিছু ভাল অফিসারদের গল্প শুনাতে হয়। তিনি তেমন একজন ভাল অফিসার। গতকাল এক এসিল্যান্ডের কর্মকাণ্ড আমাদের যখন হতাশ করেছে, ঠিক ঐ সময়টিকে তিনি একটি মানবিক গল্প রচনা করেন। রাস্তায় এক বৃদ্ধ পুলিশ দেখে ভয় পেলে, তিনি বৃদ্ধকে কাছে টেনে নেন। অভয় দেন। সাহস জোগান। সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঐ বৃদ্ধের দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন।

তৃতীয়জন শের মাহবুব মুরাদ। কিছুদিন আগে আমাদের ময়মনসিংহের এডিসি ছিলেন। এখন কোথায় পোস্টিং জানি না। আমি এমন বিনয়ী ও মানবিক অফিসার নয়, এমন মানবিক মানুষই জীবনে কম দেখেছি। এ লোক যেখান থেকেই বদলি হয়েছেন, সেখানের মানুষই তার জন্য আফসোস করেছেন।

পুলিশ এবং অন্যান্য ক্যাডারেও এমন অসংখ্য মানবিক ও বিনয়ী অফিসার আছেন। দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় যারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে এমন অনেক মানবিক অফিসারকে আমি চিনি। নাম বলে লেখার কলেবর বৃদ্ধি করলাম না। আশা করি এমন সজ্জন অফিসারের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। দুর্জনরা বিদায় নিবে। দেশ ও মানবতার কল্যাণে তারা নিবেদিত প্রাণ হবে।

লেখক: প্রভাষক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

Place your advertisement here
Place your advertisement here