• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

একজন ওয়াজেদ মিয়া: ক্ষমতার মোহ যাকে টানেনি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

খায়রুল আলম

বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। বাঙালি জাতির এক গর্বিত ও আলোকিত মানুষের নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন এই পরমাণু বিজ্ঞানী। ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও তার নির্মোহ জীবনযাপন তাকে জাতির কাছে করেছে চির অমর।

ব্যক্তিজীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্থ এই বিজ্ঞানীর দুই সন্তান। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত ৮টায় প্রথম সন্তান তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম। একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল বিশ্বের একজন খ্যাতনামা মনোবিজ্ঞানী। বঙ্গবন্ধুর জামাতা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামী হওয়া সত্ত্বেও ড. ওয়াজেদ মিয়াকে কখনও ক্ষমতার কাছাকাছি দেখা যায়নি।

সমাজের চিরচেনা মানুষের গতানুগতিক মানসিকতার সঙ্গে তার ছিল বরাবরই একটু তফাত। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়েও, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর সবচেয়ে কাছাকাছি থেকেও কোনোদিন তিনি ক্ষমতাচর্চায় আগ্রহী হননি। ক্ষমতার উত্তাপের বিপরীতে তিনি ছিলেন স্থির, অচঞ্চল, নিভৃতচারী ও নিষ্কলুষ একজন। নিজের মেধা, শ্রম ও যোগ্যতায় তিনি ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠেছেন সত্যিকার আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি। তার ডাক নাম সুধা মিয়া। তিনি ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল কাদের মিয়া এবং মাতা ময়েজুন্নেসা। তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।

তিনি চককরিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য তাকে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশনসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৬ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকেই ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট হতে শুরু করেন রাজনীতির সাথে। ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদশের্র প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন।

১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেফতারও হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন জেনারেল আজম খান। যার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং জোরদার হতে থাকে। আন্দোলন শুরু হওয়ার তৃতীয় দিনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিকেল ৬টায় বলেন, ‘ওয়াজেদ, তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর মধ্যে একমাত্র নির্বাচিত সহ-সভাপতি, মুজিব ভাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে চান। তুমি এখনই আমার সঙ্গে চলো।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়িতে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার এটাই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ।

ওই সময় ছাত্র আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার ১১ দিন পর ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসেন তার বন্ধু আঞ্জুমান। সাক্ষাৎ শেষে ফেরার পথে জেলগেটেই দেখা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবগের্র সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময় এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেন তার পরিবারের সকলের সঙ্গে। শেখ হাসিনার সঙ্গে ওয়াজেদ মিয়ার এটাই ছিল প্রথম দেখা। এরপর তিনি ১৯৬৩ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তিকেন্দ্রে যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালের আগস্টে পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করেন তিনি।

সময়টা ১৯৬৭ সাল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ। ছয় দফা আন্দোলনের কারণে গোটা দেশে তখন বিরাজ করছে ভীতিকর পরিস্থিতি। এ রকম পরিস্থিতিতে ১৭ নভেম্বর পবিত্র শবেবরাতের রাতে বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের পছন্দের পাত্র, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেধাবী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা। বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাবা শেখ মুজিব জেলে থাকায় তাদের বিয়ের আয়োজনটি ছিল খুব সাদামাটা। বিয়ের পরদিন জেলগেটে ওয়াজেদ-হাসিনা নবদম্পতিকে দোয়া করেন বঙ্গবন্ধু। নতুন জামাইকে সে সময় তিনি একটি রোলেক্স ঘড়ি উপহার দেন। এই উপহার আজীবন সযত্নে রেখেছিলেন ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। এই সুখ-স্মৃতি নিয়ে ওয়াজেদ মিয়া নিজেই বলে গেছেন, ‘নিরানন্দ ও আলোকসজ্জাবিহীন পরিবেশে বিয়ের পরদিন বঙ্গবন্ধুর দেয়া রোলেক্স ঘড়ি এবং স্ত্রীর জন্য নিজের কেনা বিয়ের শাড়িটি এখনও যত্নে রেখে দিয়েছি।’

১৯৭১ সালে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আগে-পরের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তার উপস্থিতি ছিল। তিনি সর্বদা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ড. ওয়াজেদ মিয়াকে বিজ্ঞানী হিসেবেই তাকে দেখতে চেয়েছেন। রাজনীতিতে তাকে কখনোই জড়ানোর চেষ্টা করেননি। ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান।

৪০ বছরের বিবাহিত জীবনে ড. এম এ ওয়াজেদের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি তার পরিবারের পাশে থেকে যে ধৈর্য, সাহস ও সেবার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, তা অসাধারণ। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৩ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগদান করেন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের ডিপ্লোমা অব ইমপেরিয়াল কলেজ কোর্স কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন।

১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। এ সুবাদে তিনি ১৯৬৯, ১৯৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ছয় মাস গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ইতালির ট্রিয়েস্টস্থ আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ কেন্দ্রে ছয় মাস গবেষণাকর্ম শেষে ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বিশেষ আমন্ত্রণে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ তার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলকে নিয়ে জার্মানির রাজধানী বন সফর করেন। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরবয়ে শহরের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তির দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যকাণ্ডের সময় ড. ওয়াজেদ মিয়া জার্মানিতে ছিলেন। তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার বইয়ে এভাবেই বর্ণনা করেছেন তখনকার ঘটনাপ্রবাহ। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত বইটির শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’। স্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্যালিকা শেখ রেহানা যেভাবে পিতা, মাতা আর ভাইদের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন, তা নিয়ে লিখেছিলেন পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

এ নিয়েই বিবিসি বাংলার বিশেষ এক প্রতিবেদনে এভাবেই জানানো হয় সে সময়ের দিনগুলোর কথা:

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি ছিল শুক্রবার। ভোর ৬টার দিকে ওয়াজেদ মিয়ার ঘুম ভাঙে বেলজিয়ামে তখনকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের স্ত্রীর ডাকে- কারণ জার্মানির বন থেকে সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী টেলিফোনে জরুরি কথা বলতে চান। মি. চৌধুরীর সাথে কথা বলার জন্য ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দুই-এক মিনিট পর শেখ হাসিনা ফিরে তার স্বামীকে জানান যে, রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ওয়াজেদ মিয়ার সাথেই কথা বলতে চান। ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে তখন ভীষণ চিন্তিত এবং উৎকণ্ঠিত দেখাচ্ছিল। টেলিফোন ধরার জন্য ওয়াজেদ মিয়া দ্রুত নিচে নামেন। তখন সেখানে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় মাথা নিচু করে পায়চারি করছিলেন সানাউল হক।

ফোনের রিসিভার ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ ভোরে বাংলাদেশে ক্যু-দে-টা হয়ে গেছে। আপনারা প্যারিস যাবেন না। রেহানা ও হাসিনাকে এ কথা জানাবেন না। এক্ষুনই আপনারা আমার এখানে বনে চলে আসুন।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে নিয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়ার ব্রাসেলস থেকে প্যারিস যাওয়ার কথা ছিল। টেলিফোনে কথা বলার পর ওয়াজেদ মিয়া যখন বাসার উপরে যান তখন শেখ হাসিনা অশ্রুজড়িত কণ্ঠে ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জানতে চান রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে তার কী কথা হয়েছে। তখন ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রীকে জানান যে, রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তাদের প্যারিসযাত্রা বাতিল করে সেদিনই জার্মানির বনে ফিরে যেতে বলেছেন।

শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা- দুজনই কাঁদতে কাঁদতে বলেন যে নিশ্চয়ই কোনো দুঃসংবাদ আছে যেটি ওয়াজেদ মিয়া তাদের বলতে চাইছেন না। আর তখন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বলেন যে প্যারিসের যাত্রা বাতিল করার কারণ পরিষ্কারভাবে না বললে তারা সে বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন না। বাধ্য হয়ে ওয়াজেদ মিয়া বলেন যে বাংলাদেশে ‘কী একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে যার জন্য আমাদের প্যারিস যাওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না। এ কথা শুনে তারা দুই বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের কান্নায় ছেলেমেয়েদেরও ঘুম ভেঙে যায়।’

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা ব্রাসেলস ছেড়ে জার্মানির বনের উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বাসায় গিয়ে পৌঁছান তারা। সেদিন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন যুগোশ্লাভিয়া সফর শেষে বাংলাদেশে ফেরার পথে ফ্রাঙ্কফুর্টে যাত্রাবিরতি করেন এবং পরে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর বাসায় ওঠেন। ড. কামাল হোসেন, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী - এ তিন জন মিলে কান্নায় ভেঙে পড়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ধরাধরি করে বাসার ভেতর নিয়ে যান। তখন ড্রইং রুমে বসে ড. কামাল হোসেন, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এবং ওয়াজেদ মিয়া উৎকণ্ঠিত অবস্থায় বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও অন্যান্য রেডিও স্টেশন থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এরই এক ফাঁকে হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীকে ঘরের বাইরে নিয়ে ওয়াজেদ মিয়া ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

নিরাপদ স্থানে না পৌঁছানো পর্যন্ত শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে কোনো কিছু জানানো হবে না, এই শর্তে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ওয়াজেদ মিয়াকে বলেন, ‘বিবিসির এক ভাষ্যানুসারে রাসেল ও বেগম মুজিব ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই এবং ঢাকায় ব্রিটিশ মিশন কর্তৃক প্রচারিত এক বিবরণীতে বলা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ বেঁচে নেই।’ এমন অবস্থায় মি. চৌধুরী- যিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় সংসদের স্পিকার হয়েছিলেন- মনে করেছিলেন, একমাত্র ভারতে আশ্রয় নেয়াটা তাদের জন্য নিরাপদ হবে। ১৬ আগস্ট রাত ১১টার দিকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ওয়াজেদ মিয়াকে সাথে নিয়ে বাইরে যান। উদ্দেশ্য ছিল ওয়াজেদ মিয়াকে ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।

নির্ধারিত স্থানে ভারতীয় দূতাবাসের সেই কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী সেখান থেকে চলে যান। তখন ভারতীয় দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা ওয়াজেদ মিয়াকে রাষ্ট্রদূতের বাসায় নিয়ে যান। তখন জার্মানিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন একজন মুসলমান সাংবাদিক। আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রদূত ওয়াজেদ মিয়াকে বলেন যে ভারত সরকারের কাছে তারা ঠিক কী চান, সেটি লিখে দিতে। এ কথা বলে রাষ্ট্রদূত একটি সাদা কাগজ ও কলম এগিয়ে দেন ওয়াজেদ মিয়ার দিকে। সে কাগজে ওয়াজেদ মিয়া যা লিখেছিলেন সেটি ছিল এ রকম, ‘শ্যালিকা রেহানা, স্ত্রী হাসিনা, শিশুছেলে জয়, শিশুমেয়ে পুতুল এবং আমার নিজের কেবলমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং প্রাণ রক্ষার জন্য ভারত সরকারের নিকট কামনা করি রাজনৈতিক আশ্রয়।’

সেই কঠিন সময়ে ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার হাতে কোনো টাকা ছিল না। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দুজনই ২৫ ডলার সাথে নিয়ে দেশ থেকে এসেছিলেন। রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ওয়াজেদ মিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাদের কোনো টাকা-পয়সা লাগবে কি-না? শেখ হাসিনার সাথে কথা বলে ওয়াজেদ মিয়া জানান, হাজার খানেক জার্মান মুদ্রা দিলেই তারা মোটামুটি চালিয়ে নিতে পারবেন। ১৮ আগস্ট বন শহর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে কার্লসরুয়ে শহরে যান ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। সেখানে গবেষণা সংক্রান্ত কিছু কাগজ এবং বই ছিল ওয়াজেদ মিয়ার। এছাড়া আরও কিছু কাজ সম্পন্ন করার প্রয়োজন ছিল। ২৩ আগস্ট সকালে ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ওয়াজেদ মিয়াকে টেলিফোন করে জানান যে ভারতীয় দূতাবাসের একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি কার্লসরুয়েতে তাদের সাথে দেখা করবেন।

সেদিন দুপুর ২টার দিকে ওই কর্মকর্তা ওয়াজেদ মিয়ার সাথে দেখা করে বলেছিলেন, পরের দিন অর্থাৎ ২৪ আগস্ট সকাল ৯টায় তাদের ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা ২৪ আগস্ট তাদের ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তবে তাদের গন্তব্যের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে করে ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ রেহানা, শেখ হাসিনা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান জয় ও পুতুল। কিন্তু বিমানবন্দরে নামার পর তাদের প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

ভারত সরকারের দুই কর্মকর্তা দুপুরের দিকে তাদের বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যান নয়াদিল্লির ডিফেন্স কলোনির একটি বাসায়। ওই বাসায় ছিল একটি ড্রইং-কাম-ডাইনিং রুম এবং দুটি শয়নকক্ষ- যার প্রত্যেকটির সাথে একটি করে বাথরুম। ওই বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সেখানকার কারও কাছে তাদের পরিচয় না দেয়া এবং দিল্লির কারও সাথে যোগাযোগ না রাখা- ভারতের কর্মকর্তারা তাদের এই তিনটি পরামর্শ দিয়েছিলেন। ভারতে তখন জরুরি অবস্থা চলছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোনো খবরাখবর ভারতের পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না। কাজেই তখনকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলেন ওয়াজেদ মিয়া, শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। এভাবেই তাদের কেটে যায় প্রায় দুই সপ্তাহ। ইতোমধ্যে ভারত সরকারের একজন যুগ্ম-সচিব শেখ হাসিনা এবং ওয়াজেদ মিয়াকে জানান যে তাদের একটি বিশেষ বাসায় নেয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ এক সাক্ষাৎকারের জন্য। সেদিন রাত ৮টায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে ওয়াজেদ মিয়া এবং শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসায় পৌঁছান।

এর প্রায় ১০ মিনিট পর ইন্দিরা গান্ধী কক্ষে প্রবেশ করে শেখ হাসিনার পাশে বসেন। এরপর ইন্দিরা গান্ধী ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জানতে চান, ১৫ আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে তারা পুরোপুরি অবগত রয়েছেন কি-না। জবাবে ওয়াজেদ মিয়া রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর বরাত দিয়ে 'রয়টার্স' পরিবেশিত এবং ঢাকায় ব্রিটিশ মিশন কর্তৃক প্রচারিত দুটো ভাষ্যের কথা উল্লেখ করেন। তখন ইন্দিরা গান্ধী সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তাকে ১৫ আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য জানাতে বলেন। তখন ওই কর্মকর্তা ইন্দিরা গান্ধীকে জানান যে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কেউ-ই বেঁচে নেই। এই সংবাদ শুনে শেখ হাসিনা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইন্দিরা গান্ধী তখন শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনাকে সান্ত্বনা দেয়ার সময় ইন্দিরা গান্ধী যে কথাগুলো বলেছিলেন সেটি ওয়াজেদ মিয়া তার বইয়ে বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘তুমি যা হারিয়েছো, তা আর কোনোভাবেই পূরণ করা যাবে না। তোমার একটি শিশু ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। এখন থেকে তোমার ছেলেকেই তোমার আব্বা এবং মেয়েকে তোমার মা হিসেবে ভাবতে হবে।’

‘এছাড়াও তোমার ছোট বোন ও তোমার স্বামী রয়েছে তোমার সঙ্গে। এখন তোমার ছেলেমেয়ে ও বোনকে মানুষ করার ভার তোমাকেই নিতে হবে। অতএব, এখন তোমার কোনো অবস্থাতেই ভেঙে পড়লে চলবে না।’ ওই মেয়াদে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে এটাই ছিল শেখ হাসিনা এবং ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর একমাত্র সাক্ষাৎ। ১৯৭৫ সালের ৩ অক্টোবর পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভারতীয় আণবিক শক্তি কমিশনের অধীনে আণবিক খনিজ বিভাগে দিল্লি কেন্দ্রে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে ১ অক্টোবর সাময়িক ও দৈনিক ভিত্তিতে ভারতীয় আণবিক শক্তি কমিশন থেকে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জন্য একটি পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপের বন্দোবস্ত করা হয়। ওই ফেলোশিপের শর্তানুসারে বাসা ও অফিসে যাতায়াতের সুবিধাদির অতিরিক্ত দৈনিক ভাতা প্রদান করা হতো ৬২ রুপি ৫০ পয়সা মাত্র।

১৯৭৭ এর গোড়ার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোরারজী দেশাই ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পরিবারের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ ও হয়রানিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী ও মেয়ে পুতুলসহ শেখ হাসিনাকে ঢাকা পাঠান। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়া। ১৯৯২ সালে ৫ জুন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুত্র জয়কে নিয়ে সৌদি যান সেদেশের বাদশার অতিথি হিসেবে। এরপর ৯ জুন পবিত্র হজব্রত পালন করেন।

জ্ঞানতাপস ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বঙ্গবন্ধু শিক্ষা গবেষণা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে তিনি পরপর দুবার বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩, ৮৪ ও ৮৫ সালে তিনি পরপর তিনবার ওই বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চার বছর তিনি বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে দুই বছর মেয়াদের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে দুই বছর মেয়াদের জন্য একই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পরপর দুটি মেয়াদকালের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৪ থেকে '৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি পরপর দুটি মেয়াদকালের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯১-৯২ সালে তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘেরও সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৮৯ থেকে ’৯৩ সাল পর্যন্ত পরপর তিনটি মেয়াদকালের জন্য তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন। ২০০৯ সালের ৯ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরমাণু বিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার অন্যতম গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ৪৬৪ পৃষ্ঠার সুপরিসর এই গ্রন্থে বাংলাদেশের বহুল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র যা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রাণপুরুষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে তার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানাগার, এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিজ্ঞান নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন ওয়াজেদ। প্রথিতযশা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বিশ্বমাঝে বাংলাদেশ বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার নিরলস পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছিলেন আমৃত্যু। তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয় ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।

এ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন স্কুলে ‘বিজ্ঞান চর্চা করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ি’- এ স্লোগান নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সেমিনার, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ও বিজ্ঞানবিষয়ক গণসচেতনমূলক অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক ডিজিটাল রাষ্ট্রে পরিণত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। নিভৃতচারী এই বিজ্ঞান গবেষককে স্মরণকরি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে।

লেখক : বার্তা সম্পাদক, স্বদেশ প্রতিদিন; যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

সূত্র: জাগোনিউজ

Place your advertisement here
Place your advertisement here