• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

উপজাতিদের আদিবাসী বলা বন্ধ করতে হবে

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সদরদপ্তর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ৬১তম অধিবেশনে the United Nations declaration on the rights of indigenous peoples অর্থাৎ ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার’ বিষয়ক ঘোষণাপত্র জারি হওয়ার পর বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর লোকেরা বাংলাদেশে নিজেদের আদিবাসী দাবি করে আদিবাসী দিবস পালন শুরু করেছে। দেশের সমতলের বিভিন্ন উপজাতীয় ও তফসিলী জনগোষ্ঠীকেও এতে শামিল করে মোট ৪৫টি মতান্তরে ৭৫টি জনগোষ্ঠীকে একত্রে আদিবাসী আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে স্বীকৃতি দাবি করে। 

কিন্তু বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর এই আদিবাসী দাবি শুরুতেই দেশের মধ্যে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করে। যেখানে এ ঘোষণাপত্রের আগে তারা নিজেদেরকে আদিবাসী পরিচয়ে পরিচয় করাতে চায়নি। তাদের হঠাৎ এমন আদিবাসী পরিচয় দেয়াটা বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের উপর বড় ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। কারণ, আদিবাসীর দাবি এমন একটা জনগোষ্ঠী থেকে উচ্চারিত হচ্ছে যারা ৪২ বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। 

বিশ্বের সকল ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কেউই বাংলাদেশে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস করছে না। তাদের সকলেই বহির্বিশ্ব বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বিভিন্ন সময়ে। এই অনুপ্রবেশও স্মরণাতীত কাল পূর্বে ঘটে নাই। মাত্র কয়েকশ’ বছর পূর্বে ভারত ও মিয়ানমার থেকে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উপরন্তু বাংলাদেশের এই উপজাতীয় জনগোষ্ঠী তাদের আদিনিবাস ভারত ও মিয়ানমারেও আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত নয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় মানব বসতির যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে তা খৃস্টপূর্ব ১৬০০-৫০০ সালের পুরাতন। সে কারণে উপজাতিদের আদিবাসী আখ্যাদানকারী গবেষকগণ এখন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) কনভেনশন-১৬৯’র আদিবাসী বিষয়ক সংজ্ঞার অপব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তফসিলী সম্প্রদায়কে আদিবাসী দাবি করছেন ও দাবি করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত প্রধানত: তিনটি চার্টারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এগুলো হলো: ১৯৫৭ সালের ৫ জুন অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৪০তম অধিবেশনে প্রদত্ত- Indigenous and Tribal Populations Convention, 1957 (No. 107), আইএলও’র ১৯৮৯ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ৭৬তম অধিবেশনে প্রদত্ত-Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169), এবং ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৬১তম অধিবেশনে The United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples.

এখানে আইএলও’র প্রথম চার্টার দুটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চার্টার দুটির শিরোনাম হচ্ছে- Indigenous and Tribal Populations Convention. অর্থাৎ আদিবাসী ও উপজাতি জনগোষ্ঠী বিষয়ক কনভেনশন। অর্থাৎ এই কনভেনশনটি আদিবাসী ও উপজাতি বিষয়ক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। কনভেনশনে পাস হওয়া ধারাগুলো একই সাথে আদিবাসী ও উপজাতি নির্ধারণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে, শুধু আদিবাসীদের নয়। অথচ বাংলাদেশে এই চার্টারকে আদিবাসীদের জন্য এক্সক্লুসিভ করে উপস্থাপন করা হয়।

এখানে উপজাতি ও আদিবাসীদের জন্য আলাদা সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169)- এর আর্টিকল ১ এর (a)-তে ট্রাইবাল বা উপজাতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘tribal peoples in independent countries whose social, cultural and economic conditions distinguish them from other sections of the national community, and whose status is regulated wholly or partially by their own customs or traditions or by special laws or regulations’. অর্থাৎ একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্নতর যারা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আইন দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচলিত তাদেরকে উপজাতি বলা হয়। এখন আইএলও’র এই সংজ্ঞাটি যদি আমরা বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও অন্যান্য সাবস্পেসিসসমূহের সাথে বিচার করি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় তারা উপজাতি। কেননা, ট্রাইব শব্দের বাংলা অর্থ উপজাতি। কিন্তু বাংলাদেশের এক শ্রেণির মতলববাজ বুদ্ধিজীবী আইএলও কনভেনশনের আর্টিকেল ১-এ উপস্থাপিত ট্রাইবাল ডেফিনেশনটি সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে শুধু ইনডিজিন্যাস পিপলের সংজ্ঞাটি উপস্থাপন করে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ আব্দুর রবের অভিমত, এক শ্রেণীর মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলে ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। এক কথা বললে এরা মূর্খ। এদের কারো অ্যানথ্রোপলজি ,সোসিওলজি, ইতিহাস, ভূগোল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, আদিবাসী ও উপজাতি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। আর যারা জেনে বুঝে এ কাজ করছে তারা বিভিন্ন পারিতোষিক, বৃত্তি, উচ্চ বেতনের চাকরির লোভে করছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর প্রভাবশালীরা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এমন মিথ্যাচার করছে। কাজেই আমাদের সকলকে এই বিষয়টিতে সতর্ক হতে হবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী বলা বন্ধ করতে হবে।

এদেশের সকল নাগরিকের মত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের অল্প কিছুদিন আগে থেকে দাবিকৃত আদিবাসী হওয়ার প্রবল ইচ্ছা আসলে জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন ধারা থেকে ভবিষ্যতে ফায়দা লোটার কৌশল। এ কৌশলের ফাঁদে পা দেয়া ভয়ঙ্কর এবং বিপদজনক। কারণ, তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তার এক দশমাংশ ভূমির মালিকানা হারাতে পারে। যার সাথে আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। আমাদের সকলকে সতর্ক হতে হবে এদেশের বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী বলা বন্ধ করতে হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here