• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

ঈমান মানসিক শক্তির অন্তহীন উৎস

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

মানবসভ্যতা এখন আধুনিকতা ও সাফল্যের শীর্ষচূড়া স্পর্শ করেছে। তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, কাঙ্ক্ষিত প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি নেই মানুষের মনে। সমাজের বিপুলসংখ্যক মানুষ নানা ধরনের দুঃখ ও দুশ্চিন্তার শিকার। কোনো কিছুতেই অন্তরের অশান্তি ও অস্থিরতা দূর হয় না। সমাজ আধুনিক সভ্যতার গতি-প্রকৃতিতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে এবং নেশাগ্রস্তের মতো বিনোদন উপকরণগুলো গ্রহণ করছে, অন্যদিকে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি নিয়ে মনোবিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। 

সহস্র বছর আগে মানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী (সা.) মানসিক ব্যাধির পরীক্ষিত ও অকাট্য চিকিৎসা বাতলে দিয়েছেন। তা হলো ঈমান বা বিশ্বাস। ঈমান মানব হৃদয়ে প্রশান্তি সৃষ্টি করে, ভয় ও শঙ্কা দূর করে, সন্দেহ ও সংশয় নিঃশেষ করে। আর এসব কিছু হয় মহাপবিত্র এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে। যিনি সৃষ্টিজগেক অস্তিত্ব দান করেছেন এবং নবী-রাসুলদের মাধ্যমে মানবজাতিকে পথনির্দেশ দিয়েছেন। যিনি উম্মতে মুহাম্মদিকে দান করেছেন কোরআন, যাতে রয়েছে সব দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার আরোগ্য। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত :  ১১)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তার অন্তরে বিশ্বাসের পথনির্দেশ দেন। ফলে বুঝতে পারে বিপদের কারণে সে ভুল করেনি এবং তার ভুলের কারণে বিপদ হয়নি।’ বরং তা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ছিল। এভাবে মুমিন অনুতাপ, অনুশোচনা ও মানসিক কষ্ট থেকে বেঁচে যায়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

যখন কেউ মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী হয় তখন সে বিপদে ধৈর্য ও প্রশান্তি খুঁজে পায় এভাবে—সে চিন্তা করে এতে মহান স্রষ্টার প্রজ্ঞা ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তিনি আবশ্যই কোনো কল্যাণ রেখেছেন। ফলে অশান্ত ও অস্থির হৃদয় প্রশান্ত হয়, স্বস্তি খুঁজে পায়। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমরা যখন পথনির্দেশক বাণী শুনলাম, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনে তার কোনো ক্ষতি ও কোনো অন্যায়ের আশঙ্কা থাকবে না।’ (সুরা জিন, আয়াত : ১৩)

আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘যারা ঈমান আনে আল্লাহর স্মরণে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়, নিশ্চয় আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)

পবিত্র কোরআনে এমন বহু আয়াত আছে, যেগুলোর মধ্যে ঈমানের পার্থিব পুরস্কার হিসেবে মানসিক প্রশান্তি ও নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ঈমানের সম্পদ থেকে বঞ্চিত সে বহু ক্ষেত্রে মানসিক প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত। বৈরী পরিস্থিতি তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে। এমনকি বাহ্যিক সব উপায়-উপকরণ থাকার পরও তাদের অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও ভয় দূর হয় না। ভয়ে আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে বসে, মা-বাবা সন্তানকে এবং সন্তান মা-বাবাকে পর্যন্ত হত্যা করে। শুধু সাধারণ শ্রেণির মানুষই আত্মহননের পথ বেছে নেয় না; বরং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত লোক, পদস্থ ব্যক্তি, ধনাঢ্য ও সম্পদশালী ব্যক্তিরাও তাতে লিপ্ত হয়। অথচ তাদের পার্থিব জীবনে উপায় উপকরণের কোনো অভাব ছিল না। স্বনির্ভর ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের আত্মহননের কারণ হলো তারা এমন অবিনশ্বর কোনো সত্তার ওপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করতে পারেনি, যিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান, যিনি সব প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূল করতে পারেন। তারা এ কথা ভাবতে পারেনি, আমাদের স্রষ্টা আমাদের জন্য এতেই কল্যাণ রেখেছেন। তিনি হয়তো এ অবস্থা বদলে দেবেন অথবা দুনিয়া ও আখিরাতে এর চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করবেন। যেহেতু আমরা আল্লাহর প্রজ্ঞা, রহস্য ও অনাগত দিন সম্পর্কে জানি না, তাই ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পবিত্র কোরআনে মুমিনের মানসিক শক্তির কথা এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে, ‘যারা ভালো কাজ করে মুমিন হয়ে, তাদের কোনো আশঙ্কা নেই অবিচারের এবং অন্য কোনো ক্ষতির।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১১২)

আর পার্থিব জীবনের বিপদ-আপদ, সংকট ও তার প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা হলো, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয় আর এরাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬-১৫৭)

সুতরাং মুমিন পার্থিব জীবনের বিপদ-আপদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করে এবং ধৈর্যের সঙ্গে তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো যখন সে বিপদগ্রস্ত হয়, তখন ধৈর্যধারণ করে এবং যখন আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে, তখন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কত চমৎকার। তার জন্য কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। যদি তার জন্য কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে তবে সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্য ধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

কল্যাণের এই বিশ্বাসই মুমিন জীবনে এক অন্তহীন উজ্জীবনী শক্তি, মানসিক দৃঢ়তার জায়গা। আল্লাহ সবাইকে ঈমানের সুধা দান করুন। আমিন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here