• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

ঈমান জাগানো গল্প

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

নওমুসলিম আবু বকর এর সাক্ষাৎকার।

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

ওয়াআলাইকুমুস সালাম।

প্রশ্ন : সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার বংশপরিচয় জানানোর অনুরোধ।

উত্তর : রাজপুত পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। ব্যবসার উদ্দেশে আমার দাদা কলকাতায় আবাস গড়েন। আমার বাবা চাকরিজীবনে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে ছিলেন। রিটায়ার্ডের পর তিনি ভাবলেন দেশসেবা তো যথেষ্ট হয়েছে। এবার কিছু সমাজসেবা করা যাক। তিনি একদিন সন্ন্যাসী হয়ে গেলেন। তারপর একটি আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হলেন। আমাকে তার সঙ্গে নিলেন। আমিও বাবার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনকে পূজাপাঠ করাতাম। তাদের সমস্যার মনগড়া সমাধান বলে দিতাম। আমি আমার বাবার সঙ্গে অনেক আশ্রমে গিয়েছি। সেখানে থেকেছি। কলকাতা, দ্বারকা, কাশ্মীর, জম্মু, চন্ডিগড়, হরিদ্বার। আমরা এসব এলাকার বড়ো বড়ো আশ্রমগুলোতে গিয়েছি। আমার পুরোনো নাম স্বামী চিত্তানন্দ ওরফে বন্টি বাবা।

প্রশ্ন : এবার আপনার মুসলমান হওয়ার ঘটনা শোনান। কোন জিনিস আপনাকে ইসলাম কবুল করতে উৎসাহিত করলো?

উত্তর : সত্য বলতে আমি যখনই আজান শুনেছি, আজানের শব্দমালা আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাম। দেখলাম একটা ছেড়া কাগজ পড়ে আছে। আমি সেটা তুলে নিলাম। সেখানে কয়েকটি বইয়ের নাম লেখা ছিলো। কোরআন, বেহেশতী যেওর, ইকরামুল মুসলিমীন ইত্যাদি।

কাগজটা নিয়ে আমি আশ্রমে চলে এলাম। বারবার আমি মন থেকে তাগিদ অনুভব করছিলাম যে, বইগুলো আমার কেনা দরকার এবং পড়াও দরকার। আমি কাগজটা নিয়ে মুসলিম-দোকানে গিয়েছি। তাদের বলেছি এই বইগুলো আমার চাই। দোকানদার জিজ্ঞাসা করে আমি কেনো বইগুলো কিনতে চাচ্ছি। তুমি ওই বইগুলো দিয়ে কী করবে। এই সময় আমার কানে দুল ছিলো। চুল লম্বা ছিলো। গায়ে ছিলো গেরুয়া রঙের জুব্বা। আমি তার প্রশ্নে সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি।

দোকানদার আমাকে বেহেশতী যেওর দিলেন। আমি বেহেশতী যেওর নিয়ে আশ্রমে চলে আসি এবং পড়তে শুরু করি। বইয়ের ভিতর ওজু-গোসলের নিয়মসহ বিভিন্ন বিষয় লেখা রয়েছে। আমি রাত্রে জেগে উঠি। তারপর গোসল করে বেহেশতী যেওর পড়া শুরু করি। একদিন বাবা আমাকে পড়তে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন বন্টি বাবা কী পড়ছো? আমি তাকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ, সকল ধর্মের জ্ঞান থাকা দরকার। বাবা আশ্রম দর্শনে বের হলেন। দেখতে দেখতে হরিদ্বার এসে পৌঁছলেন। এখানে আসার পর বাবার স্বাস্থ্য খুব খারাপ হয়ে যায়। বাবা আমাকে ডেকে বললেন, বন্টি বাবা! আমার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব খারাপ মনে হচ্ছে। হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবো না। আমি বললাম, বাবা, আপনি তো দুর্গাজির পূজা করেন। চন্ডিপাঠ পড়েন। সেখানে লেখা আছে আয়ু ১২৫ বছর। বাবা বললেন, কথা সত্য। আয়ুষ্কাল ১২৫ বছর হবে।

বাবার স্বাস্থ্যের অবস্থা দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছিলো। আমি তাকে দিল্লি নিয়ে এলাম। হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলাম। হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসা চললো। হাসপাতালে একটি মুসলিম পরিবার ছিলো। বাবা একদিন আমাকে বললেন, তাদের জিজ্ঞাসা করো তাদের নিকট জমজমের পানি আছে কিনা। থাকলে একটু জমজমের পানি নিয়ে এসো। আমি তাদের থেকে জমজমের পানি চাই। তারা আমাকে বললো আমরা হিন্দুকে দিই না। আমি তাদের বললাম, আমি বেহেশতী যেওর পড়ছি। একদিন আমিও মুসলিম হয়ে যাবো। পরে তারা আমাকে জমজমের পানি দিলেন। আমি বাবাকে সেই পানি পান করালাম। তিনি খুব প্রশান্তি অনুভব করলেন। এর পাঁচদিন পর শুক্রবার তিনি মারা গেলেন।

আমি কলকাতায় ভাইয়ের নিকট ফোন করলাম। তিনি বললেন, লাশ নিয়ে কলকাতায় চলে এসো। আমার জানা ছিলো লাশ কলকাতায় নিয়ে গেলে তাকে পোড়ানো হবে। অথচ লাশ পোড়ানোর ব্যাপারটা বাবার পছন্দ ছিলো না। তাই আমি বাবার লাশ নিয়ে হরিদ্বারের আমার এক বন্ধুর নিকট চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে কাঠের কফিন বানিয়ে বাবার লাশটা সেখানে রাখি। আর তাকে সলীল সমাধির ব্যবস্থা করলাম। আমি সেখানে গঙ্গার সিঁড়িতে বসে ছিলাম। বসে বসে ভাবছিলাম বাবা আজ কোথায় চলে গেলেন। এরপর আত্মিক প্রশান্তির জন্য আমি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি কোথাও প্রশান্তি পাচ্ছিলাম না। তবে আমার ইসলাম ভালো লাগছিলো। কেননা আমি বেহেশতী যেওর পড়েছিলাম।

এরপর আমি অনেকের নিকটই গিয়েছি। তাদের বলেছি আমি ইসলাম কবুল করবো। আমাকে কালিমা পড়িয়ে দিন। কিন্তু কলকাতায় আমাকে কেউ কালিমা পড়ালেন না। তারপর আমি রাচি যাই। সেখানে আমার বোনের বাড়ি। বোনের বাড়ির দেড়-দুই কিলোর মধ্যে একটি মসজিদ ছিলো। আমি সেই মসজিদে গিয়েছি। ইমাম সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। ইমাম সাহেব আমাকে দেখে শংকিত হলেন। আমি এখানে আসার উদ্দেশ্য তাকে জানালাম। তিনি আমাকে দিল্লি চাঁদনিচকের একটি ঠিকানা আর একটি ফোন নম্বর দিলেন। সেখানে নাকি মাওলানা কালিম সিদ্দিকি নামে কেউ আছেন। আমি দিল্লিতে আমার এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। সেখান থেকে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে চাঁদনিচক পৌঁছে যাই।

সেখানে গিয়ে সোনালি মসজিদের খোঁজ নিই। মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তার সঙ্গেই আমার ফোনে কথা হয়েছে। তিনি বললেন, এই নম্বর তো আমারই কিন্তু এই নাম আমার না। এই নামের লোকটি অনেক বড় বুযুর্গ। আমি তাকে বললাম, আমি মুসলমান হবো। যেকোনোভাবে আমাকে তার সঙ্গে সাক্ষাত করিয়ে দিন। তিনি জানালেন, তাকে বাটলাহাউসে পাওয়া যেতে পারে। তিনি আমাকে নিয়ে একটি বইয়ের দোকানে গেলেন। দোকানি বললেন তার সাক্ষাত পাওয়া বড়ো কঠিন কাজ। এটা অনেকটা অসম্ভবের মতো।

সেখানকার মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব আমাদের কথাবার্তা শুনছিলেন। তিনি আমাকে বললেন সাক্ষাত হয়ে যাবে। তবে আপনাকে শাহিনবাগ যেতে হবে। তারপর তিনি আমাকে শাহিনবাগ মসজিদের ঠিকানা দিলেন। আমি কোনোরকমে শাহিনবাগ মসজিদে পৌঁছে গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর আমার মাওলানা ফায়জান সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাত হলো। তিনি আমাকে জানালেন আজ তো সাক্ষাত সম্ভব না। হজরত সফরে আছেন। তিনি যখন সফর থেকে ফিরবেন, আমি আপনাকে ফোন করে জানাবো। আপনি ফোন নম্বর দিয়ে যান। আমি তাকে আমার ফোন নম্বর দিলাম।

তারপর আমি আমার বন্ধুর বাসায় ফিরে এলাম। পরেরদিন মাওলানা ফায়জান সাহেবের ফোন পেলাম। বললেন, আপনি চলে আসুন। হজরত এসেছেন। আমি আবার শাহিনবাগ যাই। হজরতের সঙ্গে সাক্ষাত হলো। হজরত বললেন, সময় অনেক কম। আপনি প্রথমে কালিমা পড়ে নিন। মানুষের জীবনের কোনো ভরসা নেই। কখন কী হয়ে যায় বলা মুশকিল। তারপর হজরত আমাকে কালিমা পড়িয়ে মুসলিম বানিয়ে নিলেন।

হজরত বললেন, আমি এখনই ওমরার উদ্দেশে যাচ্ছি। রমজানের শেষ দিকে আমাদের ফুলাতে দেখা হবে। আপনি ফুলাত চলে আসুন। মাওলানা ফায়জান থেকে সেখানকার ঠিকানা নিয়ে নিবেন। মাওলানা ফায়জান আমাকে ঠিকানা দিয়ে দিলেন। তারপর আমি যথাসময়ে ফুলাতে পৌঁছে যাই। আলহামদুলিল্লাহ, আমি শেষ রমজান পর্যন্ত ফুলাত থেকেছি। সেখানে মাওলানা দিলশাদ নদবী, মাওলানা আযেম নদবী আমাকে খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন।

প্রশ্ন : ঈদের পর কোথায় গেলেন?

উত্তর : ঈদের পরে আমি দিল্লির দারে আরকাম জাফরাবাদে মাওলানা হোসাইন ও মাওলানা তামকিন সাহেবের নিকট যাই। সেখান থেকে আমাকে হায়দারাবাদের জামাতের সঙ্গে রওয়ানা করিয়ে দেওয়া হয়। সেই জামাতে চল্লিশদিন পূর্ণ করেছি। তারপর কোরআন শিখার জন্য হজরতের নির্দেশে গুজরাটের আহমদাবাদস্থ জামিয়া ইবনে আব্বাসে মুফতি রিযওয়ান সাহেবের ওখানে আমি নুরানি কায়েদা শিখছি। এরপর আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাকে ওমরা করার সৌভাগ্য নসিব করেন। হারামাইন শরিফাইনের সফর খুব ভালো হয়েছিলো। হিন্দুসমাজে প্রসিদ্ধ আছে সেখানে শিবের লিঙ্গ আছে। এটা একদম মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। সেখানে মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত করে।

প্রশ্ন : আপনার ইসলাম কবুল করার পরে আপনার পরিবারের মানুষজন আপনার সঙ্গে কীরূপ আচরণ করেছেন?

উত্তর : আল্লাহর ফজলে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমি আমার ভাইবোনের নিকট গিয়েছি। দুই-বোনই আলহামদুলিল্লাহ, কালিমা পড়ে নিয়েছে। ভাই অস্বীকার করেন। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, মুসলিমরা মৃতদেহ দাফন করে আর হিন্দুরা পুড়িয়ে ফেলে‒ এর কারণ কী? আমি বললাম, মানুষ সোনারুপা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করে, লাকড়ি পুড়িয়ে ফেলে।

প্রশ্ন : আপনি ইদানীং কোথায় থাকছেন?

উত্তর : আমি এখন দিল্লির জাফরাবাদ মাওলানা হোসাইন সাহেবের সঙ্গে থাকি। সেখানে থেকেই দাওয়াতের কাজ করছি।

প্রশ্ন : আপনার হাতে এ পর্যন্ত কতোজন মানুষ মুসলমান হয়েছে?

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ! এখন পর্যন্ত আমার হাতে অনেকেই মুসলমান হয়েছে। আমি প্রতিদিন চার-পাঁচজন লোককে ইসলামের দাওয়াত দিই। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন মহাকালের কসম, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। ঈমানের মর্যাদা ও গুরুত্ব বুঝার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। আর দাওয়াতের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, যদি তোমার মাধ্যমে একজন মানুষও হেদায়েত পেয়ে যায়, তা হলে এটা তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট।

প্রশ্ন : ইসলাম কবুল করার পরে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে কী ভাবছেন?

উত্তর : আমি ইচ্ছা করেছি, মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর দীনের দাওয়াত ও প্রসারের জন্য ঘরে ঘরে, শহরে শহরে, গ্রামে গ্রামে গিয়ে লোকজনকে ইসলামের দাওয়াত দেব। এবং এ কাজের মুসলিমদের প্রস্তুত করতে চেষ্টা করবো।

প্রশ্ন : আপনি কীভাবে দাওয়াতের কাজ চালাচ্ছেন?

উত্তর : আপনি নিশ্চয় জানেন, হজরতের নেতৃত্বে প্রতি মুহূর্তে দেশের কোথাও না কোথাও দাওয়াতি ক্যাম্প চলছে। আলেমগণকে দাওয়াতি কাজের জন্য প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই ক্যাম্প তিনমাসব্যাপী চালু থাকে। কোথাও আবার এক মাসের ক্যাম্পও চালু করা হয়। সাধারণ লোকের জন্য দশ দিনের ক্যাম্প হয়, কোথাও হয় সপ্তাহব্যাপী, কোথাও হয় পাঁচদিন কিংবা তিনব্যাপী। সারাদেশে এ ধরনের বহু ক্যাম্প চালু রয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দায়িরা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। কেউ মন্দিরে যায়, কেউ পার্কে যায়, কেউ যেকোনো লোকসমাগমের স্থানে যায়। তারা লোকজনের সামনে সরাসরি কোরআনের আয়াত পড়ে দাওয়াত দিতে যান। আমি অধিকাংশ সময় সেসব ক্যাম্পে শরিক হয়ে থাকি। এসময় কোথাও কোথাও ফিল্ডওয়ার্ক হয়। চেষ্টা করি সেখানেও শরিক হতে।

প্রশ্ন : মাশাআল্লাহ! তা হলে আপনি প্রতিদিনই দাওয়াতের কাজ করে যাচ্ছেন।

উত্তর : আসলে দাওয়াত কোনো মুসলিমের পার্টটাইম জব নয়। এটি আমাদের ফুলটাইম জব। আমাদের সবসময়ের দায়িত্ব। না, বরং দিন-রাতের আমাদের একমাত্র কাজ এটাই। এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, আবার মাহাত্ম্যের কিছু নেই। মানুষ যার যে কাজ, সে দিনরাত সেই কাজে বা সেই কাজের চিন্তা বিভোর থাকে। ড্রাইভার রাতদিন গাড়ি চালায়। ডাক্তার দিনরাত রোগী দেখে। মিস্ত্রি-মেকানিক দিনরাত ওয়ার্কশপে কাজ করে। আমরা হলাম দায়ি উম্মত এবং খায়েরে উম্মত। আমাদের কাজ হলো দাওয়াত দেওয়া। দিনরাত আমাদের এইকাজ করতে হয়।

প্রশ্ন : তা হলে তো প্রতিদিনই আপনার হাতে কেউ না কেউ মুসলমান হচ্ছে।

উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ, দিনরাত মানুষ কালিমা পড়ছে।

প্রশ্ন : আপনি তো লাগাতার দাওয়াতের কাজ করছেন। বিশেষ করে দাওয়াতি ক্যাম্পগুলোতে কাজ করে যাচ্ছেন। তো একাজে দেশের কোথায় কোথায় যাওয়া পড়ছে? এটা জানাবেন যে, সংবাদপত্রে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোপাগান্ডায় পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে এখন কঠিন সময় চলছে। চারদিকের পরিবেশ দাওয়াতের জন্য একদম প্রতিকূল মনে হচ্ছে। সবার মধ্যেই একধরনের আতংক বিরাজ করছে। এই অবস্থায় কি আপনার মনে হচ্ছে না যে, অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতের কাজ সমস্যার সৃষ্টি করছে?

উত্তর : দেখুন! আমাদের হজরত বলেন কখনো যদি কোনো কিছুর স্বল্পতা দেখা দেয় তখন সেই জিনিসের চাহিদা ও প্রয়োজন বেড়ে যায়। যখন অন্ধকার বেড়ে যায় তখন আলোর আকাঙ্খা বেড়ে যায়। কঠিন গরমের মধ্যে গরম বাতাস বয়ে যায়, সবদিকে মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে, জিহ্বা শুকিয়ে যায়, ঠাণ্ডা পানির জন্য সবাই ব্যাকুল হয়ে থাকে। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্মের প্রচার-প্রসার বেশি থেকে আরও বেশি হওয়া উচিত।

বর্তমান পরিবেশ দাওয়াতের জন্য বেশ অনুকূল ও উপযুক্ত। আমরা প্রতিমুহূর্তে দাওয়াতের ময়দানে তৎপর রয়েছি এবং অমুসলিমদের মাঝে কাজ করে যাচ্ছি। অধিকাংশ মানুষ বুঝতেই পারে না যে, আমি ইতোপূর্বে বন্টি বাবা ছিলাম। আমি তো বরং অ্যারাবিয়ান জুব্বা পরে থাকি। আমাদের দেশের খুব কম লোক এ পোশাক পরে। আমার কখনোই মনে হয়নি বর্তমান পরিবেশ দাওয়াতের জন্য উপযুক্ত নয়। কিংবা মনে হয়নি দাওয়াতের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে।

একটি বিষয় আপনার জানা থাকা ভালো; এ বছর হজরত তার বিভিন্ন মাদরাসায় উচ্চশ্রেণির ছাত্রদের দাওয়াতের প্রস্তুত করার লক্ষে ক্যাম্প চালু করেছেন। মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্ররা হজরতের নিকট অনুযোগ নিয়ে এসেছে; আমাদের যদি দাওয়াতের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ না দেওয়া হয় তা হলে আমরা কীভাবে দাওয়াতের কাজ করবো? এজন্য গত আড়াই মাস যাবত দেশব্যাপী দাওয়াতি ক্যাম্প চালু রাখা হয়েছে। দশদিনব্যাপী প্রায় বাইশ জায়গায় ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, বিহার, বাংলা, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, পানজাব, চন্ডিগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের প্রায় সকল জেলায় ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। শেষ ক্যাম্পের সমাপনী মজমায় সকল দায়ি সমবেত হয়েছে। সেখানে হজরত সবাইকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন এসব ক্যাম্পের সমাপ্তিকালে আপনাদের সবাইকে বলতে হবে এই দিনগুলোতে আপনাদের কি একবারের জন্য মনে হয়েছে যে, এখন দেশের পরিবেশ দাওয়াতের জন্য অনুকূল নয়? দাওয়াতের জন্য এখন উপযুক্ত সময় নয়? কিংবা এখন সময় ও পরিবেশ বদলে গেছে? কিংবা দেশে এখন মোদির শাসন চলছে। তাই দাওয়াতের কাজ করা কিছু কঠিন হয়ে পড়েছে?

দায়িরা সকলেই একথা বলেছে যে, এক মুহূর্তের জন্য আমাদের কোথাও এমনটি মনে হয়নি। সবাই আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। কেউ আমাদের সঙ্গে বিরুপ আচরণ করেনি। আসলে এটা শয়তানের চালমাত্র। শয়তান দাওয়াত থেকে বিরত রাখার জন্য বাহানা প্রকাশ করছে। অন্যথায় আমাদের আজকের পরিবেশ দাওয়াতের জন্য একদম অনুকূল ও উপযুক্ত।

প্রশ্ন : মাশাআল্লাহ, আপনার কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিত্যদিনকার দাওয়াতের অভিজ্ঞতা শোনালেন।

উত্তর : এটা আমার একার অভিজ্ঞতা নয়। সকল দায়ির অভিজ্ঞতা এমনই।

প্রশ্ন : মুসলিমদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

উত্তর : হজরত ওসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন মজিদ শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলিমরা যখন আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার বর্জন করবে, তখন তাদের ওপর জালেম শাসক চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমি মনে করি এবং আশা করি সকল মুসলমান আল্লাহর পয়গাম আল্লাহর বান্দাদের নিকট পৌঁছে দেবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here