• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

‘আমি পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি না, পরিবর্তন করে দেখাই’

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

বলিউডের ‘কিং খান’ তিনি। ১৯৯২ সালের ২৫ জুন ‘দিওয়ানা’ ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে আগমন তার। এরপর দীর্ঘ ২৬ টি বছর ধরে মাতিয়ে রেখেছেন গোটা বলিউডকে, হয়ে উঠেছেন লাখো তরুণের লাভ আইডল। পা দুটো ফাঁকা করে দুহাত প্রসারিত করে দিয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গিমাকে করে নিয়েছেন নিজের সিগনেচার স্টাইল।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির চিরতরুণ প্রেমিক শাহরুখ খান। যিনি মাধুরী দীক্ষিত-কাজল থেকে শুরু করে হালের দীপিকা-আনুশকাদের সঙ্গেও হিরো হিসেবে দিব্যি মানিয়ে যায়। শাহরুখ খানের জীবনের নানা অজানা বহু দিক উঠে এসেছে হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত দীর্ঘ দুই পর্বের সাক্ষাৎকারে শেষ পর্ব আজ।

আপনি কখনো মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে যাওয়ার লোক নন। সবসময়ই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে এসেছেন সাহসের সঙ্গে। কিন্তু সালমান খানের ‘সুলতান’ এর সঙ্গে একই সময়ে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও ‘রইস’ ছবিটির মুক্তি কেন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?

শাহরুখ: আদিত্য চোপড়া (যশ রাজ ফিল্মসের কর্ণধার) , সালমান খান এবং আমি তিনজন খুবই ভালো বন্ধু। এমন দুটি বড় সিনেমার জন্য মাত্র সাড়ে তিন হাজার হল মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এখানে পর্দার আড়ালের কোন খেলা নেই, সবকিছুই খুব স্পষ্ট। কিছুদিন আগেই আমি যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে একটি সিনেমা শেষ করেছিলাম। কয়দিন আগেই যাকে জড়িয়ে ধরেছি, চুমু খেয়েছি, সেই আদিত্যর বিপক্ষে গিয়েই আমার নিজের সিনেমার জন্য হল বুক করতে পারি না আমি! আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব ছিল না। আমার জন্য খুবই বিব্রতকর হতো এটি।

‘বাজিরাও মাস্তানি’র সঙ্গে একই দিনে ‘দিলওয়ালে’র মুক্তির পর আপনার সিনেমা যেভাবে মার খেয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কি এই সিদ্ধান্ত? শাহরুখ: ওটা ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। আমি ওদেরকে কম করে হলেও ১০ বার বলেছি ছবি মুক্তির সময় বদল করতে। সঞ্জয় লীলা বানসালিকে আমি অনেকবার বলেছি এই সংঘর্ষের কথা। ইরোসের লস এঞ্জেলেসের অফিসে পর্যন্ত ছুটে গেছি সবকিছু মিটমাট করতে। কিন্তু তাদের নাকি সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গিয়েছিল।

এরপর আমি রোহিত শেঠিকে বললাম আমাদের সিনেমার তারিখ পিছিয়ে দিতে। কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হলো না। আমরা কিন্তু সবসময়ই নমনীয় ছিলাম, কিন্তু তাদের দাবি ছিল তারা আমাদের আগে ছবি মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। আরে বাবা ঘোষণা কোন ব্যাপার হলো নাকি!

আরো পড়ুন: ‘যতদিন ভারত সিনেমা বানাবে, ততদিন আমার সিনেমা দেখবেন’

আপনি যখন চাইবেন তখনই ছবি মুক্তি দিতে পারবেন। আমি ওদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম তারা আমাদের এক সপ্তাহ আগে তাদের ছবি মুক্তি দিতে পারে কি না, কিংবা অন্য যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে। আমার পক্ষে যতটা করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। তারপর একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। ওদের একজন আমাকে জানালো যে ওদের জন্য পণ্ডিতজি এই তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাই তারা এই তারিখ পরিবর্তন করতে পারবে না। পুরো কথোপকথনটা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল, যেখানে যুক্তির লেশমাত্র ছিল না!

যৌক্তিকতার চেয়ে তাদের বিশ্বাসকেই তারা বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত যা হয়েছিল তা বেশ দুর্ভাগ্যজনক। আন্তর্জাতিক ব্যবসা দিয়ে আমরা ‘দিলওয়ালে’কে কোনভাবে রক্ষা করেছিলাম।

যেই সময়ে বসবাস করছেন, নিজেকে সেই সময়ের অংশ হিসেবে কীভাবে দেখেন? শাহরুখ: একজন অভিনেতা সময়কে আলাদা করে দেখলে চলে না। একজন অভিনেতা নিজেই সময়। আমি অবাক হয়ে যাই যখন অভিনেতারা বলে, দর্শকেরা আগের চেয়ে অনেক পরিণত হয়েছে।

আরে দর্শক কি আগে বোকা ছিল নাকি? তারা কখনোই বোকা ছিল না, বোকা ছিলাম আমরা। দর্শকেরা সবসময়ই বুঝত। তারা জিনিসটা অনুভব করে বলেই সিনেমা সম্পর্কে এতকিছু বুঝে তারা। আর অনুভব সবসময়েই চিন্তার চেয়ে বিলিয়ন গুণ শক্তিশালী।

 

2.‘আমি পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি না, পরিবর্তন করে দেখাই’

আমাদের চারপাশে চিন্তার উপর যে সেন্সরশিপ দেখতে পাচ্ছি, সে ব্যাপারে আপনার কী মতামত? শাহরুখ: সেন্সরশিপ জিনিসটা বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। যদিও পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যাবে না এমন সিনেমা খুব বেশি বানাইনি, তাও একজন প্রযোজক হিসেবে আমাকেও এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। একেক সরকার ক্ষমতায় এসে একেক কমিটি বানায়, আর তারা একেক রকম ব্যাখ্যা তৈরি করে।

দেখুন, একেকজনের ব্যাখ্যা একেক রকম হতেই পারে। কিন্তু যখন কোন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, তখন কিন্তু নিয়ম বদলানোটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। যারা সিদ্ধান্ত নেয় আপনি তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না, কিন্তু যে নিয়মের মধ্যে থেকে তারা সিদ্ধান্ত নেন, সেটি নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তোলাই যায়।

নিয়মগুলো খুব ভালোভাবে লেখা থাকা উচিত, স্পষ্টভাবে লেখা থাকা উচিত, যাতে করে যেই সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সেগুলোর ভুল ব্যাখ্যার কোন সুযোগ না থাকে।

কিন্তু একজন প্রগতিশীল নির্মাতা তো তার শিল্পকর্ম দিয়ে নিয়মের বেড়াজাল ভাঙতে চাইতেই পারেন, তাই না? তাকে তো সবসময় নিয়ম দিয়ে বেঁধে রাখাটাও যুক্তিযুক্ত নয়। শাহরুখ: হতে পারে, তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, আমরা এমন একটা দেশে ও সমাজে বাস করি, যেখানে মানুষজন খুব দ্রুতই প্রলোভনের ফাঁদে পা দেয়। সবসময় এই শহরেই থাকি বলে সহজ এই জিনিসটা আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না।

ধরুন আপনার ছবিতে এমন একটা জিনিস আছে, যেটা বাদ দিলে এমন কিছু ক্ষতি হবে না, কিন্তু বাদ না দিলে অনেক সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার বাদ দিতে সমস্যা কোথায়? আমাকেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। আমার ‘বিল্লু’ (২০০৯) ছবির নাম শুরুতে ছিল ‘বিল্লু বারবার’।

 

3.‘আমি পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি না, পরিবর্তন করে দেখাই’

অস্ট্রেলিয়ায় নাপিত পেশাটি ঠিক ততটাই শ্রদ্ধাভাজন যতটা একজন প্রফেসরের পেশা। কিন্তু এই দেশে লোকে এটিকে নিচু পেশা বলে মনে করে। এটি নাকি তাদের কাছে অপমানজনক মনে হয়! শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমি ছবির নাম থেকে ওই অংশটি বাদ দিয়ে দেই। এতে আমার অনেক টাকা নষ্ট হয়েছিল, আমি অনেক কষ্টও পেয়েছিলাম। কিন্তু সবদিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছিল। আমার কিন্তু কোন আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না, তাও আমি নাম বদল করেছিলাম।একটা সময় ছিল যখন আপনি আপনার বাসার দরজা থেকেই সাংবাদিকদের ফেরত পাঠিয়ে দিতেন, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। মিডিয়ায় আপনাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেটির সমালোচনাও করতেন। বয়সের সঙ্গে কী আপনার মেজাজও কিছুটা কমে এসেছে? শাহরুখ: আমি সাধারণত দুটি মুডে থাকি। হয় খুব শান্ত, নাহয় খুব রাগী। মাঝামাঝি বলতে কোন শব্দ নেই আমার কাছে। জীবনে সব অভিজ্ঞতাই হয়েছে আমার। লোকের মার যেমন খেয়েছি, তেমনি মেরেছিও। এসব নিয়ে আমি লজ্জিত না, ক্ষমাও চাইব না।

মাঝে মাঝে আমি আমার ছেলেকে পরামর্শ দেই, তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে আরিয়ান, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুজন হেসে গড়িয়ে পড়ি। ও আমাকে বলে, এই কথা তুমি আমাকে বলছ বাবা? তখন আর আমার কী ই বা বলার থাকে বলুন! তখন বলেই দেই, ঠিক আছে যা মনে হয় তাই করো!

এখন অবস্থা যেমনটা দাঁড়িয়েছে, একজন তারকাকে সবসময়ই যোগাযোগ করা যায়। টুইটার, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট সবজায়গায় সবসময় সক্রিয় থাকতে হয় তাদের। আধুনিক এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সবসময় মানিয়ে নেয়ার একটা চাপ অনুভব করেন না? শাহরুখ: আমি একদমই পারি না এসব। টুইটারে কীভাবে ‘শাউট আউট’ করতে হয় সেটাও জানিনা আমি! আমি এসব বিষয়ে খুবই কাঁচা। আমার যদি কারোর কিছু পছন্দ হয়, সামনাসামনি তার সঙ্গে দেখা হলে বলে দেই যে তোমার এটা ভালো লেগেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওরকম লাইক দেয়াতে আমি খুব বেশি পারদর্শী নই।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে তো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়। সেখানে আপনার বিয়ে এতদিন টিকে থাকার রহস্যটা কী? শাহরুখ: একজন মুভি তারকার স্বামী কিংবা স্ত্রী হওয়া মোটেও মুখের কথা না। আমরা আমাদের সঙ্গীদের জন্য খুব কমই সময় বের করতে পারি। আমাদের পাবলিক ফিগার কেন বলা হয়? কারণ আমাদের ব্যক্তিগত সময় বলতে কিছুই নেই।

এতগুলো বছর ধরে এসব সামলে আসা খুবই কঠিন। গৌরি নিজেকে শাহরুখ খানের স্ত্রী হিসেবে নয়, বরং নিজের পরিচয়েই পরিচিত করে তুলেছে, আর এটা খুব ভালো দিক।

 

4.‘আমি পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি না, পরিবর্তন করে দেখাই’

গৌরি ও আমার সংসার তো বাচ্চাদের বড় করতে করতেই কেটে গেলো। বেশিরভাগ সংসারে আসলে এটাই হয়। বাবা-মা হয়ে যাওয়ার পর আপনার জীবন অনেকটাই বদলে যায়। আমাদের জীবন, কথাবার্তা সবই যেন আমাদের তিন বাচ্চাকে ঘিরে। আমাদের দুনিয়াটাই ওরা।

আপনার মেয়ে সুহানার অভিনয়ে আসা নিয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা শোনা যায়। ওকে অভিনয়ে নিয়ে আসার আগ্রহ আছে আপনার? শাহরুখ: আমার বাচ্চারা যাই হতে চাক না কেন, আগে তাদেরকে ঠিকভাবে পড়াশোনাটা শেষ করতে হবে। আমার বাসায় একটা ন্যূনতম শিক্ষার লেভেল আছে। ওই লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবেই করতে হবে।

আমি শিক্ষায় বিশ্বাসী, আজ আমি যে পর্যায়ে এসেছি তার পেছনে ৮০ ভাগ আমার শিক্ষার অবদান। আমার বাচ্চাদেরও আমি সেভাবেই বড় করার চেষ্টা করেছি। সুহানা অভিনেত্রী হতে চায়, এবং সে এটাও বলে সে আমার থেকে অভিনয় শিখতে চায় না। এটা কিন্তু খুবই ভালো দিক, কারণ সে আমার মতোই অভিনেতা হতে চায়, কিন্তু আমার মতো হয়ে নয়, নিজের একটা স্বাধীন পরিচয় তৈরি করতে চায়।

বলিউডের শীর্ষ তারকারা সবসময়ই পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যমান জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন! শাহরুখ: আমি বিশ্বাস করি, এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যেক নারী একজন পুরুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি কাজ করে। কিন্তু টাকা পায় একজন পুরুষের তুলনায় দশ গুণ কম।

 

5.‘আমি পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি না, পরিবর্তন করে দেখাই’

যে ছবিতে আমি শুধু অভিনেতা হিসেবে কাজ করি সেখানে তো আমার বলার কোন জায়গা নেই। কিন্তু আমার নিজের প্রযোজিত ছবিতে আমি পারিশ্রমিকের দিকে সবসময় সমতা বজায় রাখি। এমনকি স্ক্রীনে আমার নাম দেখানোর আগে আমি আমার নায়িকার নাম দেখাই। আমি পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি না, পরিবর্তন করে দেখাই।

Place your advertisement here
Place your advertisement here