• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

আজ প্রতিবন্ধী দিবসঃ ইসলামে প্রতিবন্ধীদের অধিকার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

Find us in facebook

Find us in facebook

আজ  রবিবার (৩ ডিসেম্বর) ২৮ তম আন্তর্জাতিক এবং ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। 

আসুন আমরা প্রতিবন্ধীদের বুঝতে ও সম্মান করতে শিখি।

আল্লাহ যাকে বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ রেখেছেন; সে যেন নিজের ওপর আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পাকে স্মরণ করে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ, আল্লাহ চাইলে তার ক্ষেত্রেও সে রকম করতে পারতেন। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা এই সমস্যার বিনিময়ে তাঁর সন্তুষ্টি, দয়া, ক্ষমা ও জান্নাত দিতে চান।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি যার প্রিয় চোখ নিয়ে নিই, অত:পর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা করে; আমি তার জন্য এর বিনিময়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হই না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ১৯৫৯)।

একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট, সামাজিক জীবনে সাধারণ ব্যক্তিরা যেসব অধিকারের যোগ্য সমাজের অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধীরাও একই অধিকার পাওয়ার যোগ্য।

সাধারণ স্বীকৃত অধিকার ছাড়াও ইসলাম প্রতিবন্ধীদের যেসব বিশেষ অধিকার দিয়েছে তা নিয়ে আজকের লেখা।

সভা-সমাবেশে তাদের জন্য বিশেষ কিছু:

জীবনের সব কর্মকাণ্ডে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বর্ণ, বংশ ও সামাজিকভাবে পার্থক্যহীন সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, প্রতিবন্ধীদের জীবনের সাধারণ লেনদেন ও মেলামেশায় পিছিয়ে রাখা। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এ দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র নিন্দা করে মানবাত্মার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

একদা আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মুশরিক নেতৃবৃন্দকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় অন্ধ সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রা.) তাঁর খেদমতে উপস্থিত হলেন। অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকায় নবীজী (সা.) কর্তৃক হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতূমের প্রতি দৃষ্টিদানের সুযোগ হয়নি। আর এ বিষয়কে উপলক্ষ করে নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়, 

‘তার চেহারায় বিষন্নভাব প্রকাশ পেল এবং (নূরানী) মুখ ফিরিয়ে নিলেন এ কারণে যে, তার নিকট এক অন্ধ ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছে (যে তার কথার মাঝখানে প্রশ্ন আরজ করে বসেছে)। আপনার কি জানা আছে? হয়তো সে (আপনার দৃষ্টিতে আরো) পবিত্র হতো। কিংবা (আপনার) উপদেশ গ্রহণ করত, অত:পর উপদেশ তাকে (আরো) উপকৃত করত’ (সূরা: আবাসা, আয়াত নম্বর: ১-৪)।

এ বরকতপূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে প্রিয় নবী (সা.) এর উম্মতদের এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে- (১) অক্ষম ব্যক্তিরা চলাফেরায় অন্য লোকদের তুলনায় বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার অধিকারী। তাদের অন্যান্য লোকদের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং তাদের এড়িয়ে চলা যাবে না।

মান-মর্যাদা নির্ধারণ সামাজিক অবস্থান কিংবা চাল-চলন দেখে করা যাবে না বরং এর জন্য ব্যক্তিত্ব, খোদাভীরুতা, আত্মশুদ্ধি ও পুণ্যের আবেগ-স্পৃহার মানদণ্ড মেনে করতে হবে।

মেলামেশায় নীতি ভিন্নতার অধিকার :

অন্যান্য বিষয়ের মতো জীবনযাত্রা ও মেলামেশার ক্ষেত্রেও বিশেষ নীতি ও শৃঙ্খলা দিয়েছে। দৈনন্দিন লেনদেন, আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ভাব ও প্রিয়জনদের ঘরে আসা-যাওয়ার সুস্পষ্ট বিধান দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়টি বিশেষভাবে চিন্তাযোগ্য, কোরআনুল কারিমে প্রতিবন্ধীদের ওই নীতিমালা থেকেও স্বতন্ত্র রাখা হয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে- অন্ধের জন্য বাধা-বিপত্তি নেই, আর না খোঁড়াদের কোনো অসুবিধা আছে, না রুগ্নদের কোনো গুনাহ হবে এবং তোমাদের মধ্যে কারো জন্য (বাধা আছে) এতে যে, তোমরা খাবে সন্তানদের ঘরে অথবা পিতার ঘরে, মাতার ঘরে, ভাইয়ের ঘরে, বোনদের ঘরে, চাচাদের ঘরে, ফুফুদের ঘরে, মামাদের ঘরে, খালাদের ঘরে অথবা যেসব ঘরের চাবিগুলো তোমাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে, অথবা প্রিয় বন্ধুদের ঘরে; তোমাদের প্রতি এ ব্যাপারে কোনো গুনাহ নেই একত্রে খাওয়া দাওয়া খেলে অথবা ভিন্নভাবে; অত:পর যখন তোমরা কোনো ঘরে প্রবেশ কর তখন তোমরা তাদেরকে (পরিবারবর্গকে) সালাম দাও।

সাক্ষাতের সময় মঙ্গল কামনা কর (যা) আল্লাহ থেকে কল্যাণময়, পবিত্র। এভাবেই আল্লাহ পাক আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা (শরয়ী বিধান ও জীবনাচার) বুঝতে পার। (সূরা: আন নূর, আয়াত নম্বর: ৬১)।

জিহাদ ও প্রতিরক্ষামূলক দায়িত্ব বর্জনের অধিকার :

পবিত্র কোরআনে ইসলামী নেতৃত্বের সম্প্রসারণ ও সত্য দ্বীনের বিজয় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার লক্ষ্যে জিহাদে অংশগ্রহণকে ইমান ও ইস্তিকামাত (অটলতা) পরীক্ষার মূল মানদণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ মৌলিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অক্ষম বিকলাঙ্গদের এ মহান মৌলিক জিম্মাদারি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ইরশাদ হচ্ছে, না অন্ধের জন্য কোনো অপরাধ আছে, না খোঁড়া ব্যক্তির জন্য কোনো পাপ রয়েছে, না ব্যাধিগ্রস্তের ওপর কোনো জবাবদিহিতা আছে (যে তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি)। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করে, আল্লাহ তাকে এমন বাগানগুলোয় নিয়ে যাবেন, যেগুলোর নিচ দিয়ে নহর প্রবাহমান এবং যে ফিরে যাবে তাকে বেদনাদায়ক শাস্তি দেবেন। (সূরা: আল ফাতাহ, আয়াত: ১৭)।

সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এ কথাও বলা যেতে পারে, ইসলামী আইন প্রতিবন্ধীদের জন্য দায়িত্ব-কর্ম বর্জনকে তাদের মৌলিক অধিকার বলে ঘোষণা করেছে। ইসলামের নৈতিক শিক্ষায় এসব বিষয় সুস্পষ্ট-

> প্রতিবন্ধীদের সামাজিক জীবনে একটি সম্মানযোগ্য অংশ হিসেবে বিবেচনার শিক্ষা দিয়েছে ধর্ম।

> বিকলাঙ্গদের বিশেষভাবে দেখাশোনা করতে হবে এবং জীবনের কোনো ক্ষেত্রে কোনোভাবেই তাদের আলাদা রাখার ধারণা করা যাবে না।

> পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তাদের ওপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপানো যাবে না, যা পালন করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।

> যাবতীয় অধিকার আদায়ে অক্ষমদের অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে করে জীবনযাপনে তাদের সুবিধা প্রাপ্তিতে কোনো ধরনের বাধা না থাকে। এ সবই হলো ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here