• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

অরিত্রি এই ক্ষমা পেলে হয়তো বেঁচে থাকত

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

আত্মহত্যার কিছুক্ষণ আগে অরিত্রি তার মাকে জানায়, ‘মা এ লজ্জা নিয়ে বাঁচতে চাই না।’ ভিকারুননিসা নুন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সে। এই বয়সে সে যখন ব্যক্তিত্ব গঠনের ভিত্তি তৈরি করবে, ঠিক তখনই তাকে ঠেলে দেয়া হলো মৃত্যুর দিকে। সুযোগ চেয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়েছিল মেয়েটি কিন্তু ক্ষমা পায়নি সে। যদি ক্ষমা পেত , হয়তো আজো বেঁচে থাকত অরিত্রি।
অরিত্রির সামনে তার বাবা-মাকে ডেকে তীব্র অপমান করা হয়েছে। বাবা-মায়ের এমন অপমানিত হওয়া মেনে নিতে পারেনি, আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই আবার অভিভাবক ডেকে ক্ষমা চাওয়াটাকে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

গত সোমবার ঘটে গেছে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। একে অপরাধ বললেও অনেকখানি কম বলা হবে। সঙ্গে মোবাইল থাকায় ভিকারুননিসা নুন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর অভিভাবককে ডেকে অপমান করে টিসি দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এই অপমান মেনে নেওয়ার সম্ভব হয়নি অরিত্রির। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া।

স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া নিষেধ, তারপরেও কেন তার কাছে ফোন ছিল- এটাই ছিল অপরাধ। এই অপরাধের নির্দিষ্ট পদক্ষেপ অবশ্যই ছিল। কিন্তু বিষয়টি ভাইস প্রিন্সিপাল থেকে প্রিন্সিপাল পর্যন্ত গড়ায়। তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হলেও প্রিন্সিপাল সদয় হননি। প্রায় পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও সেই প্রিন্সিপাল তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি অরিত্রিকে টিসি (ছাড়পত্র) দেয়ারও নির্দেশ দেন।

এই যে অভিভাবক ডেকে তাদের সামনে এত বড় অপমান, স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি- এই বিষয়টি কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়। মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়া উঠতি বয়সের একটি মেয়ে কতটা অপমানিত হলে নিজেকে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা আমাদের আছে।

অভিভাবকরা সন্তানদের শুধু লেখাপড়ার উদ্দেশ্যেই পাঠায় না। সব ধরনের শিক্ষাদীক্ষা, শিষ্টাচারও স্কুল থেকে শিখে সুনাগরিক হবে তারা, সেটাই নিয়ম। সে যদি সেখানে কোনো ভুল করে, তার সংশোধনের পথও আছে। হুট করে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়া হবে, এটা কোনো সমাধান নয়। তার ওই পরীক্ষার খাতাটিই বাতিল করে দিতে পারতো তারা, ওই পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দিতে পারতো, তাকে সতর্ক করে দিতে পারতো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটা বোর্ড পরীক্ষার মতো কোনো বড় পরীক্ষাও ছিল না যে তাদের এতটা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হলো।

দেশের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভিকারুননিসার নাম উঠে আসবেই। সবাই জানে এই প্রতিষ্ঠানে যারাই পড়বে, তারা অবশ্যই মেধাবী। অরিত্রি বিজ্ঞান শাখায় ছিল এবং তার ক্রমিক সংখ্যা ছিল ১২। সে যে আসলেই মেধাবী সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। তাকে সেভাবে এককথায়, এক নোটিশে বের করে দেওয়া হবে কেন? এমন যদি হতো যে কোনো শিক্ষার্থী বার বার ভুল করে, তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার একটা যুক্তি আমরা মেনে নিতে পারি।

২০১২ সালের বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে দেওয়া নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থীকে বার বার সংশোধন করতে বলতে হবে। পারতপক্ষে তাকে টিসি দেওয়া যাবে না। তাকে কোনো শারীরিক মানসিক নিপীড়ন করা যাবে না। সেখানে স্কুলটির প্রিন্সিপাল যে এত বড় ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা তো ফৌজদারি অপরাধের সামিল। এখন তিনি ক্ষমা চেয়ে অপরাধের স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু যেই অভিভাবকের সামনে তাদের সন্তানকে এমন অপদস্ত হতে হলো, যেই অভিভাবক তাদের সন্তানকে এজন্য চিরদিনের মতো হারালো, তাদের কাছে এখন ক্ষমা চেয়ে আসলে কি কোনো লাভ বা সমাধান আছে? এটা কি একজন শিক্ষকের আদর্শের মধ্যে পড়ে?

Place your advertisement here
Place your advertisement here