• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

মাতিয়ে গেল বিশ্বকাপ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

অস্ট্রেলিয়ার এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার ১০টি কারণ বলার লোকও আমিরাতে আসর শুরুর আগে ছিল না। উল্টো টানা তিনটি সিরিজ হার আর ফর্মহীনতায় ধুঁকতে থাকা অ্যারন ফিঞ্চদের করুণ পরিণতি ভবিতব্য ধরে নিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

বৈশ্বিক যেকোনো আসরে সেরা চারের একটা নিউজিল্যান্ড হবেই—এমন একটা অলিখিত নিয়ম চালু আছে ক্রিকেটে। কিন্তু এবার তো খেলা আমিরাতের ‘উপমহাদেশীয়’ উইকেটে, কেন উইলিয়ামসনদের বোধ হয় এবার হবে না। ১৪ নভেম্বর রাতে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জয়সূচক রিভার্স সুইপ যেন বিশেষজ্ঞদের সব পূর্বাভাসকে পাশের আরব সাগরে উল্টে ফেলার জয়ধ্বনিও। আপাদমস্তক অনুসারীদের কাছে এই ওলটপালট ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার জয়ধ্বনির মতোই শুনিয়েছে।

অথচ বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড আইপিএলের দেশ ভারত ছিল হট ফেভারিট। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের জন্য এই ফরম্যাটে কন্ডিশন এখন আর কোনো সমস্যা নয়। সর্বশেষ ২০১৬ বিশ্বকাপ তো তারা ভারতের মাটিতেই জিতেছিল। আইপিএলেও আন্দ্রে রাসেলদের আকাশচুম্বী দাম। তাই শিরোপা আবার ক্যারিবীয় দ্বীপে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন অনেকেই। আমিরাত অনেক দিন ধরেই পাকিস্তানের ‘হোম’। এই অভ্যস্ততাকে কাজে লাগিয়ে বাবর আজমরা প্রতিশোধ নিতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্প্রদায়ের ওপর, যারা সন্ত্রাসবাদের নামে একঘরে করে রেখেছে তাঁদের।

ধুন্ধুমার ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকারও কদর আছে, কিন্তু বরাবরের একদল ‘চোকার’ দলটি কত দূর আর যাবে; সংশয় ছিল। মোটামুটি বিশ্বকাপপূর্ব আলোচনায় ফেভারিটের তালিকার অনুক্রম ছিল—ভারত, এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। ১৪ তারিখের ফাইনাল কেউ কল্পনাতেও দেখেননি। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমেও আতশকাচ দিয়ে আশাবাদের দেখা মেলেনি।

ফাইনালটাও কম রোমাঞ্চকর হয়নি। কেন উইলিয়ামসনের ৪৮ বলে ৮৫ রানের ইনিংস টি-টোয়েন্টির একমাত্র ক্লাসিক্যাল ইনিংস হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। ৪ উইকেটে ১৭২ রানে পুঁজি নিয়ে বুঝি বৈশ্বিক আসরের ফাইনাল-ব্যর্থতা ঘুচিয়েই ফেলবে এবার কিউইরা। কিন্তু ক্রিকেটের ভাগ্যদেবী যে রাতটা মিসেস ওয়ার্নারের উদযাপনের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন! তাঁর স্বামী, ডেভিড ওয়ার্নার, যাঁকে এই আমিরাতেই দুই ম্যাচ পর বসিয়ে রেখেছিল আইপিএল টিম—তিনি তখন অস্ট্রেলিয়ার আক্ষেপ ঘোচানোর মিশনের নেতৃত্বে। ফিঞ্চ ফিরে গেছেন, মিচেল মার্শ সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন উদ্ধত কাউন্টার অ্যাটাকে। বাবা জিওফ মার্শ ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী দলের ওপেনার ছিলেন। মিচেল মার্শ দেশকে জেতালেন প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাঁর এক ভাই, শন মার্শ অল্পের জন্য ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলে জায়গা পাননি স্রেফ টিম কম্বিনেশনের কারণে। এক পরিবারে তিনজনের তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের মেডেল—কখনো কখনো রূপকথাতেও যতিচিহ্ন পড়ে।  

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যা যা হচ্ছিল, তাতে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে উঠেই দেশ-বিদেশের সমালোচকদের ছিন্নভিন্ন করতে পারতেন ফিঞ্চ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের ঐতিহ্য আছে বলেই কিনা বিষোদগার করেননি ফিঞ্চ। সমালোচকদের জন্য যা বরাদ্দ, তা ডেভিড ওয়ার্নারের ছবির নিচে সুশীল ভাষায় মিসেস ওয়ার্নারের টুইট, ‘ফর্ম নেই, ধীর গতির!’

অঙ্ক উল্টে দেওয়া ঘটনা কম ঘটেনি এবারের বিশ্বকাপে। দুটি সেমিফাইনালই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেটে। পাকিস্তানের মুঠো থেকে ম্যাথু ওয়েডের ম্যাচ বের করে নেওয়ার আগের রাতে ইংল্যান্ডকে বাড়ির পথ দেখিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ডেরিল মিচেল, টিম সেইফার্ট চোট না পেলে যাঁর শুরুতে খেলাই হতো না এই বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপ শেষের পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি রান এবং উইকেটের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তবে পরিসংখ্যান কি আর সব, ম্যাচে একেকটি নৈপুণ্যের প্রভাবই সারকথা। অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা তাই উইকেট শিকারে পিছিয়ে থেকেও এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে প্রভাবশালী বোলার। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে উইকেট এনে দিয়েছেন দলকে। জাম্পার সতীর্থ জশ হ্যাজেলউডের বন্দনায় উপযুক্ত বিশেষণ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়েছে অ্যারন ফিঞ্চের। স্পিনারের টুর্নামেন্টে একজন পেসারের এমন প্রভাবের কারণেও এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

দুই ফাইনালিস্টের কথা বাদ দিন। সুপার টুয়েলভে ওঠার পথে সবাইকে আমোদিত করেছে নামিবিয়া। এই পর্বে একটি ম্যাচ জিতেছেও আইসিসির সহযোগী দেশটি। অবশ্য সুপার টুয়েলভে সব ম্যাচ হারা স্কটল্যান্ডের একটি সান্ত্ব্তনা আছে, সেটি টেস্ট পরিবারের বাংলাদেশকে হারানোর। হট ফেভারিট ভারতের সেমিতে জায়গা না পাওয়া নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শক্তির দলগুলোর বিপক্ষে হোঁচট খায়নি ভারত। বরং আইপিএলজনিত ক্লান্তিই ফেভারিটদের পতনের কারণ সমালোচনার হাত থেকে বাঁচিয়েছে বিরাট কোহলির ভারতকে।

চার ম্যাচ জিতেও নেট রান রেটের কারণে সেমিতে উঠতে না পেরেও হৃদয় জিতে বাড়ি ফিরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাবর আজমের নেতৃত্বে শাহিন শাহ আফ্রিদি, আসিফ আলীদের উত্থান চাক্ষুষ করেছে ক্রিকেটবিশ্ব। হাসপাতালের বিছানা থেকে মাঠে গিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের বীরত্বগাথার চর্চা এখনো চলছে।

বিনোদনের একটা কমপ্লিট প্যাকেজ যেন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ক্রিকেটীয় পূর্বাভাস এমনিতেই খুব বেশি মেলে না। এবার তো বিশেষজ্ঞরা ডাহা ফেল! তরুণ দল নিয়েও শ্রীলঙ্কা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। বিশ্বকাপের পর আইসিসির বিশেষজ্ঞ প্যানেল যে সেরা একাদশ গড়েছে, সেখানে দুজন লঙ্কান আছেন। নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, ওমানের শরীরী ভাষা এবং নতুন তারকার জ্বলে ওঠা প্রদীপের নিচে ব্যর্থতার অন্ধকারও আছে। ক্যারিবীয়দের অবিশ্বাস্য পতন যেমন। অবশ্য সুপার টুয়েলভে তাদেরও একটি জয় আছে। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, রোমাঞ্চে ভরপুর এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বিষাদমাখা দল!

Place your advertisement here
Place your advertisement here