• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

রমজানের পাঁচ বৈশিষ্ট্য, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩  

Find us in facebook

Find us in facebook

রহমত, মাগফেরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস রমজান। যার প্রথমে রহমত, মাঝে মাগফেরাত এবং শেষে রয়েছে জাহান্নাম হতে মুক্তি। এ মহিমান্বিত রমজানের প্রাপ্তি সম্পর্কে অনেক সুসংবাদ দিয়েছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

প্রিয় পাঠক; এবার আসুন রমজানের সুসংবাদগুলো সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় জেনে নেই-

(১) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

অর্থ: ‘... আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ১৯০১)

(২) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবিদের সুসংবাদ দিয়ে বলেন- 
قَدْ جَاءَكُمْ شَهر رَمَضَانُ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، كَتَب اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، فِيهِ تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ الشَّيَاطِينُ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ

অর্থ: ‘তোমাদের কাছে রমজান মাস উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলা এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাস আগমনের কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।’ (নাসাঈ ২১০৬, মুসনাদে আহমদ ৭১৪৮)

(৩) হজরত উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন- أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرُ بَرَكَةٍ، فِيهِ خَيْرٌ يُغَشِّيكُمُ اللَّهُ فِيهِ، فَتَنْزِلُ الرَّحْمَةَ، وَتُحَطُّ الْخَطَايَا، وَيُسْتَجَابُ فِيهِ الدُّعَاءُ، فَيَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى تَنَافُسِكُمْ، وَيُبَاهِي بِكُمْ مَلَائِكَتَهُ، فَأَرُوا اللَّهَ مِنْ أَنْفُسِكُمْ خَيْرًا، فَإِنَّ الشَّقِيَّ منْ حُرِمَ فِيهِ رَحْمَةَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ

অর্থ: ‘তোমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে, বরকতের মাস। এ মাসে রয়েছে কল্যাণ, আল্লাহ তোমাদের সে কল্যাণে আবৃত করে দেন। ফলে তিনি রহমত নাজিল করেন, গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে দোয়া কবুল করা হয়। আল্লাহ তোমাদের (সৎ কাজের) প্রতিযোগিতার দিকে তাকান এবং তিনি তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের নিজেদের কল্যাণ আল্লাহকে দেখাও। কেননা হতভাগা তো সে ব্যক্তি যে এ মাসে মহান আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।’ (মুসনাদুশ শামিয়্যীন, তাবরানী, ৩/২৭১, ২২৩৮)

(৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ

অর্থ: ‘রমজান মাস এলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯)

(৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ

অর্থ: ‘রমজান মাস উপস্থিত হলে রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম ১০৭৯)

(৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু মারফু সূত্রে আরও বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ

‘যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম ১০৭৯)

(৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ

অর্থ: ‘শয়তান ও দুষ্ট জিনদের রমজান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ থেকে থাকে।’ (তিরমিজি ৬৮২, ইবনে মাজাহ ১৬৪২, নাসাঈ ২১০৭, মুসতাদরাক হাকেম ১৫৩২)

(৮) হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছার দোয়া করতেন। তিনি রজব মাস এলে বলতেন- اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছান (হায়াত দান করুন)।’ (তাবরানি ৪/১৮৯, ৩৯৩৯; বায়হাকি ৫/৩৪৮, ৩৫৩৪)

(৯) হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! রমজান মাস এসেছে, তবে কী দোয়া পড়বো? তিনি বলেন, তুমি বলবে- اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিজি৩৫৩১, ইবনে মাজাহ ৩৮৫০)

(১০) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- أُعْطِيَتْ أُمَّتِي خَمْسَ خِصَالٍ فِي رَمَضَانَ، لَمْ تُعْطَهَا أُمَّةٌ قَبْلَهُمْ: خُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، وَتَسْتَغْفِرُ لَهُمُ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُفْطِرُوا، وَيُزَيِّنُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ كُلَّ يَوْمٍ جَنَّتَهُ، ثُمَّ يَقُولُ: يُوشِكُ عِبَادِي الصَّالِحُونَ أَنْ يُلْقُوا عَنْهُمُ الْمَئُونَةَ وَالْأَذَى وَيَصِيرُوا إِلَيْكِ، وَيُصَفَّدُ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ، فَلَا يَخْلُصُوا فِيهِ إِلَى مَا كَانُوا يَخْلُصُونَ إِلَيْهِ فِي غَيْرِهِ، وَيُغْفَرُ لَهُمْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ " قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَهِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنَّ الْعَامِلَ إِنَّمَا يُوَفَّى أَجْرَهُ إِذَا قَضَى عَمَلَهُ

অর্থ: ‘আমার উম্মতকে রমজানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি-

(১) রোজা পালনকারীর মুখের না খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।

(২) ইফতারের আগ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ রোজা পালনকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে।

(৩) আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তার জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দাগণ কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।

(৪) দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের ন্যায় এ মাসে মানুষকে গোমরাহীর পথে নিতে সক্ষম হয় না।

(৫) রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে মহিমাম্বিত রমজান মাসে রহমত, মাগফেরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির তাওফিক দান করুন। আমিন। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here