• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

রাসূলের (সা.) ১১ স্ত্রীর নাম ও পরিচয় 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রথম পর্বে রাসূলের (সা.) বহুবিবাহের তাত্ত্বিক পর্যালোচনার একাংশ উল্লেখ করা হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্ত্রীর মধ্যে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বাদে কেউই কুমারী ছিলেন না।

নিম্নে বাকি দশজন স্ত্রী ও তাদের পূর্বের স্বামীর নাম দেওয়া হলো-
১. হযরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদের (রা.) প্রথম বিবাহ হয় আবু হালাহ বিন যুরারা তামিমীর সঙ্গে। তার ঔরসে দুটি পুত্র সন্তান হয়। আবু হালের ইন্তেকালের পর আতীক ইবনে আয়েব মাখযুমির সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিবাহ হয়। তার ঔরসে জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। আতীক মারা গেলে তিনি পুনরায় বিধবা হন। অতঃপর খাদিজার বিবাহ হয় রাসূলের (সা.) সঙ্গে।

২. হজরত হাফসা বিনতে ওমর ফারুকের (রা.) প্রথম বিবাহ হয় হজরত খুনযেস বিন হুযাফাহ সাহাবির (রা.) সঙ্গে। বদর যুদ্ধের কিছুদিন পর তার স্বামী মারা গেলে দ্বিতীয় বিবাহ হয় রাসূলের (সা.) সঙ্গে।

প্রথম পর্ব: রাসূলের (সা.) বহুবিবাহের তাত্ত্বিক পর্যালোচনা

৩. হযরত উম্মে সালমা বিনতে আবু উমাইরার (রা.) প্রথম বিবাহ হয় তার চাচাতো ভাই আবু সালামার সঙ্গে। আবু সালামাহ (রা.) মারা গেলে রাসূলের (সা.) সঙ্গে বিবাহ হয়। আবু সালামাহ ঔরসে তার সন্তানও ছিল।

৪. হজরত যয়নাব বিনতে জাহাশর (রা.) প্রথম স্বামী হজরত যায়েদ বিন বারেদা (রা.)। স্বামীর সঙ্গে বনীবনা না হওয়ায় তালাক প্রাপ্ত হয়। অতঃপর রাসূলের (সা.) বিবাহ হোন।

৫. হজরত মুওয়াই বিয়াহর (রা.) প্রথম বিবাহ হয় মুনফিহ এর সঙ্গে। মুবাইসীর যুদ্ধে মুসাফিহ মারা যায়। হজরত মুওয়াবিয়া অনেকের সঙ্গে যুদ্ধে বন্দি হয়। রাসূল (সা.) বন্ধিত্ব থেকে রেহাই দিয়ে তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।

৬. হজরত যায়নাব বিনতে খুযায়মাহর (রা.) প্রথম বিবাহ হয় হজরত আব্দুল্লাহ বিনতে জাবাশ রা. এর সঙ্গে। আব্দুল্লাহ উহুদের যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর নবীজি তাকে বিবাহ করেন।

৭. হজরত সাওদা বিনতে যাময়ার (রা.) প্রথম বিবাহ হজরত সাকরার বিন আমরেধ (রা.) সঙ্গে বিয়ে হয়। তার ঔরসে একটি পুত্র সন্তানও হয়। সাকারানের মুত্যুর পর হজরত সাওদা নবীজির স্ত্রী হন।

৮. হজরত উম্মে হাবীবা বিনতে আবি সুফিয়ানের (রা.) প্রথম বিবাহ হয় উবাইদুল্লাহ নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে। উবাইদুল্লাহ সস্ত্রীক হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে উবাইদুল্লাহ খ্রিষ্টান হয়ে যায়। বিধায় উম্মে হাবিবার সঙ্গে তার বিবাহবন্ধন ছিন্ন হয়। অতঃপর নবীজি তাকে বিবাহ করেন। বাদশাহ নাজ্জাশী তাদের বিবাহ পড়িয়ে দেন।

৯. হজরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াইয়ের (রা.) প্রথম বিবাহ হয় সালাম বিন মিশকাস এর সঙ্গে। সালাম ইসলাম গ্রহণ করেন কিন্তু সাফিয়্যা অমুসলিম থেকে যাওয়ার দরুন তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অতঃপর সাফিয়্যার দ্বিতীয় বিবাহ হয় কিনানা নামক ব্যক্তির সঙ্গে। কিনানা লায়বার যুদ্ধে নিহত হন এবং সাফিয়্যা যুদ্ধ বন্দি হন। হজরত সা. সাফিয়্যাকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিবাহ করেন। 

১০. হজরত মায়মুনার (রা.) প্রথম বিবাহ হয় আবু রুহুম বিন আব্দুল উযযা নামক ব্যক্তির সঙ্গে। তার মৃত্যুর পর রাসূলের সঙ্গে বিবাহ হয়। উপরের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল ঐ সমস্ত মহীয়সী নারীদেরকে বিবাহ করেছিলেন। দীনি স্বার্থে এবং তাদেরই দুঃখ দুর্দশা কষ্ট লাঘবের জন্য। নিজের স্বার্থে নয়। নতুবা নবী (সা.) অসংখ্য কুমারী নারীকে বিবাহ করতে পারতেন।

চার. রাসূলে আকরামকে আল্লাহ তাআলা যেই শক্তি প্রদান করেছেন তাতে তিনি হাজার হাজার স্ত্রী রাখার ক্ষমতা রাখতেন। তা না করে তিনি মাত্র ১১ জন স্ত্রীতেই সন্তুষ্ট থেকেছেন। হজরত মুয়াজ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)-কে বেহেশতী চল্লিশজন পুরুষের শক্তি প্রদান করা হয়েছে।

আবু নাঈম মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, বেহেশতী একজন পুরুষ দুনিয়ার একশ জন পুরুষের সমতুল্য। সে হিসাবে রাসূল (সা.)-কে দুনিয়ার চার হাজার পুরুষের শক্তি প্রদান করা হয়েছে। (ফতহান মুনহীম, বজলুল মাজহুদ)

পাঁচ. পুরো আরব অনারব অমুসলমানরা রাসূলের বিরোধীতা করতো। তাকে হত্যা পরিকল্পনাও করেছে। রাসূলকে পাগল ও মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে। রাসূলের বদনাম বের করার এমন কোনো সুযোগ নাই, যা তারা করেনি। রাসূলের বহু বিবাহ যদি প্রবৃত্তির স্বার্থেই হতো তাহলে কাফেররা এ সুযোগ ছাড়তো না। রাসূলের চরিত্র হননে হামলে পড়তো। কিন্তু তারা রাসূলের চারিত্রিক বিষয়ে কোনো অপবাদ আরোপ করতে পারেনি। কারণ তারা জানে যে, রাসূলের চরিত্রে কালেমা লেপনের চেষ্টার অর্থ, নিজের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করে ফেলা। কারণ, নবীজি (সা.) ছিলেন সৎচরিত্রের অধিকারী, খোদাভীতির মূর্ত প্রতীক।

রাসূল (সা.) ও হজরত আয়েশা (রা.)

অনেকে অভিযোগ করে যে, রাসূল (সা.) ছয় বছরে একজন বালিকাকে কীভাবে বিয়ে করলেন। এটা কি একটি অসম বিবাহ নয়। এ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। এখানে বুঝার সুবিধার্থে সামান্য আলোকপাত করা হলো-

১. হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি কোনো মহিলাকে সে পর্যন্ত বিবাহ করি নাই, যে পর্যন্ত না হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী নিয়ে এসেছেন। হজরত আয়েশার বিবাহও এরুপই ছিল। ইবনে ওমর (সা.) বললেন রাসূল (সা.) বলেছেন, জিবরাঈল আমার কাছে এসে বললেন, আল্লাহ তাআলা আবু বকর (রা.)-এর মেয়ের সঙ্গে আপনার বিবাহ করে দিয়েছেন। অতঃপর আয়েশার ছবি আমাকে দেখিয়ে বললেন যে, এটি আপনার স্ত্রী। (তিরমিযী, বুখারী, মুসলিম)

সুতরাং এ বিবাহের বিপক্ষে কথা বলা অর্থ আল্লাহ তাআলার বিপক্ষে অভিযোগ দায়ের করা।

২. হজরত আয়েশা ছয় বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং নয় বছর বয়সে রাসূলের সঙ্গে বাসর হয়। ডাক্তারী মতেও একজন মহিলা নয় বছরে বালেগা হতে পারে। আবার তৎকালীন সময়ে মানুষের শারীরিক কাঠামো বর্তমান সময়ের মানুষের তুলনায় শক্ত পোক্ত, বড় ও পুরোট। যেমনটি বর্তমান আরব বিশ্বের মানুষ ও বাংলাদেশের মানুষের শারীরিক কাঠামোর ভিন্নতা ও ক্ষুদ্রতা প্রকাশমান। তাই আমাদের দেশের বা বর্তমান সময়ের মানুষের সঙ্গে সে সময়ে বা সে দেশের মানুষের তুলনা নিতান্তই বোকামী। তাই এ সম্পর্কে প্রাচীন ইতিহাস পাঠক মাত্রই সাম্যক অবগত আছেন। তাই একে অসম বিবাহ বলার কোনো সুযোগই নাই।

আগ্রহী পাঠববর্গ বিভিন্ন সীরাত ও হাদীস গ্রন্থে হজরত আয়েশার মর্যাদা, শ্রেষ্টত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা সকলকে সকল সন্দেহের উর্ধ্বে নিয়ে যাবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here