• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

ইসলামে একাধিক বিয়ের নেপথ্যে যত যুক্তি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

শরিয়তের বিধান অনুসারে একজন পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এটি কিছুতেই শর্তহীন নয়। বরং ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান নিশ্চিত করা না গেলে একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ বৈধ নয়। তবে নারীরা আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ইদ্দত শেষে অন্য স্বামী গ্রহণ করতে পারবেন।
একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের বৈধতা প্রসঙ্গে কোরআনের বক্তব্য এমন -‘...তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩)

পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণ জায়েয হওয়া এবং নারীর জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ নাজায়েয হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা নারীকে গর্ভ ধারণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং কোনো নারী যদি (একাধিক পুরুষের সহবাসের পর) গর্ভধারণ করে তাহলে সন্তানের পিতৃ পরিচয় জানা যাবে না। এতে করে বংশধারায় তালগোল লেগে যাবে, পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়বে, শিশুরা বাস্তুহারা হয়ে পড়বে। এভাবে এক পর্যায়ে নারীরা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বও গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে মানব বংশ বিলীন হয়ে যাবে।

তবে একটি বিষয় এখানে পরিষ্কার হওয়া দরকার যে শর্ত সাপেক্ষে হলেও ইসলাম পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতা দিয়েছে। এই বৈধতার পেছনে কী কী যুক্তি রয়েছে—এমন প্রশ্ন হরহামেশাই শোনা যায়। এখানে এর যুক্তি বর্ণনা করা হলো—

১. পুরো বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। যদি প্রত্যেক পুরুষ শুধু একজন নারীকে বিয়ে করে; তাহলে কিছু নারীকে স্বামী ছাড়াই থাকতে হবে। যা তাদের ওপর এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করবে। এটি তার জীবনকে সংকীর্ণ করার পাশাপাশি তাকে বিপথগামিতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। এর মাধ্যমে সমাজে অনাচারের পথ প্রশস্ত হতে পারে।

২. একাধিক বিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি জানা কথা যে, শুধু বিয়ের মাধ্যমেই সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া একাধিক বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত বংশধরদের সংখ্যা একজন স্ত্রীকে বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত বংশধরদের সংখ্যার চেয়ে বেশি হবে।

আর বংশধরদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করা যায় এবং উম্মাহর কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। যা তাদের অর্থনৈতিক মান উন্নয়ন করতে সক্ষম, যদি রাষ্ট্র মানবসম্পদের উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজ করে।

৩.পুরুষদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রবল শারীরিক চাহিদা বিদ্যমান; যাদের জন্য একজন স্ত্রী যথেষ্ট নয়। যদি এমন একজন ব্যক্তির জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তাকে বলা হয় যে তোমার জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা অনুমোদিত নয়; তাহলে এটি তার জন্য কঠিন কষ্টের কারণ হবে। তাছাড়া তার জৈবিক চাহিদা তাকে হারাম পথে পরিচালিত করবে।

৪. পুরুষরা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়, যা তাদের জীবননাশের কারণ হয়ে থাকে, কারণ তারা সাধারণত বিপজ্জনক পেশায় কাজ করে থাকে। কখনো কখনো যুদ্ধ ক্ষেত্রে লড়াই করে। এবং এতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি সংখ্যায় নিহত হয়ে থাকে। এটি হলো স্বামীবিহীন নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর তার একমাত্র সমাধান হলো একাধিক বিয়ে।

৫. একাধিক বিয়ের বিষয়টি ইসলামই প্রথম বিশ্বের সামনে নিয়ে আসেনি। এর নজির বিশ্বে বহু আগে থেকে রয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যেও প্রচলিত ছিল। আগের আসমানি কিতাবগুলোতে একাধিক বিয়ের কথা আছে। কয়েকজন নবী একাধিক নারী বিবাহ করেছিলেন। হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ৯০ জন স্ত্রী ছিলেন। রাসুল (সা.)-এর সময় এমন কিছু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, যাদের আটজন অথবা পাঁচজন স্ত্রী ছিলেন। রাসুল (সা.) তাদের চারজন স্ত্রী রেখে বাকিদের তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

৬. একজন স্ত্রী হয়তো বন্ধ্যা হতে পারে অথবা হতে পারে অসুস্থ হওয়ার কারণে তার সঙ্গে তার স্বামী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। অথচ একজন স্বামীর সন্তানের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আর এর একমাত্র উপায় হলো ফের বিয়ে করা।

৭. এমনটি হতে পারে যে একজন নারী একজন ব্যক্তির আত্মীয়। তার দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই এবং সে একজন অবিবাহিত নারী অথবা একজন বিধবা নারী। ওই নারীর জন্য এটি একটি উত্তম ব্যবস্থা যে তাকে প্রথম স্ত্রীর পাশাপাশি দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নিজের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া। তাকে একাকী ছেড়ে দেওয়া এবং তার জন্য শুধু অর্থ ব্যয় করার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করার চেয়ে এ পন্থা অধিক উত্তম।

৮. একজন নারীর প্রতি মাসে ঋতুস্রাব (হায়েজ) হয়, আর যখন তিনি সন্তান প্রসব করেন তখন তার ৪০ দিন পর্যন্ত রক্তপাত (নিফাস) হয়। সে সময় একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে পারে না। কেননা হায়েজ ও নিফাসের সময় সহবাস করা হারাম এবং এটি যে ক্ষতিকারক তা মেডিকেলি প্রমাণিত। তাই ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হলে একাধিক বিবাহ করা অনুমোদিত।

এছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় নিজেকে ও নিজের সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদে কয়েক মাস ধরে স্বামীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হয়। আবার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত দূরে থাকতে হয়। এসব সময় নারীর জন্য কুদরতি প্রক্রিয়ায় স্বামীর সংস্পর্শ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে স্বামীর জন্য স্ত্রীর সংস্পর্শে যেতে কোনো বাধা-নিষেধ থাকে না। তখন যদি কোনো পুরুষের কামভাব চরমে পৌঁছে যায়, তাহলে একাধিক স্ত্রী ছাড়া তার জন্য কী-ই বা উপায় থাকে?

৯. ইসলামী শরিয়ত একটি শক্তিশালী সমাজকাঠামো দেখতে চায়। এ ক্ষেত্রে পরিবারগুলোর মধ্যকার বন্ধন শক্তিশালী হওয়া, অথবা কোনো নেতার সঙ্গে কিছুসংখ্যক লোক বা জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ার বৃহত্তর স্বার্থ থাকতে পারে। যেমনটা দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর জীবনে। তার কোনো কোনো বিয়ে ছিল এ ধরনের বৈরী লোকদের সঙ্গে বংশীয় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সন্ধি স্থাপনের নিমিত্তে। আর অন্যতম একটি উপায় হলো একাধিক বিয়ে করা।

১০. প্রত্যেক দেশেই পুরুষের তুলনায় নারীদের শক্তি দ্রুত বার্ধক্যের শিকার হয়ে থাকে। যেখানে পুরুষের যৌবন পুরোপুরি অটুট থাকে এবং নারী বুড়ি হয়ে যায়, সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করা এত জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here