• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

জাহান্নামিদের খাদ্য ও পানীয়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

ক্ষুধা ও পিপাসা জাগতিক জীবনের অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু পরকালেও ক্ষুধা ও পিপাসা থাকবে। জান্নাতবাসীরা জান্নাতের খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করবেন। আর জাহান্নামিরা যে খাদ্য ও পানীয় পাবে, তা-ও এক ধরনের শাস্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের তীব্রতায় তার অধিবাসীদের পিপাসায় বুক ফেটে যাওয়ার উপক্রম হবে। তৃষ্ণার্ত পাপীরা পানির জন্য হাহাকার করবে। বুকফাটা আর্তনাদ করবে এক ফোঁটা পানির জন্য। সেদিন তাদের গগনবিদারী চিৎকার শোনার কেউ থাকবে না। এমন কঠিন মুহূর্তে তাদের দেওয়া হবে রক্ত, পুঁজমিশ্রিত, দুর্গন্ধযুক্ত উত্তপ্ত পানি।

জাহান্নামিদের খাদ্য কেমন হবে

জাহান্নামিদের চার ধরনের খাবার দেওয়া হবে। সেগুলো হলো—

১. ‘জাক্কুম’ (তেতো ফলবিশিষ্ট এক ধরনের কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ) : দুর্গন্ধযুক্ত তেতো কাঁটাযুক্ত এক ধরনের ভারী খাবারকে জাক্কুম বলা হয়। এটি খাদ্য হিসেবে জাহান্নামিদের দেওয়া হবে। তা জাহান্নামের নিম্নদেশ থেকে উদ্গত হবে। এর গুচ্ছ হবে শয়তানের মস্তকের মতো। কাফিররা সেখানে এটা ভক্ষণ করবে এবং তাদের উদর পূর্ণ করবে। এটি এমন একটি বৃক্ষ, যা দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ জাহান্নামের বিভিন্ন শাস্তির মতো এটাকেও সৃষ্টি করবেন। এই মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেষ্ঠ, নাকি জাক্কুম বৃক্ষ? এটাকে আমরা জালিমদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ তৈরি করেছি। এ বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে। তার গুচ্ছ যেন শয়তানের মস্তকের মতো। অবশ্যই তারা এটা থেকে ভক্ষণ করবে এবং তাদের পেট পূর্ণ করবে।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৬২-৬৬)

রাসুল (সা.) জাক্কুমের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, ‘ওই জাক্কুমের সামান্য পরিমাণ যদি জাহান্নাম থেকে পৃথিবীতে আসে, তাহলে পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় তার বিষাক্ততায় বিনষ্ট হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৮৫)

২. ‘দরি’ (সর্বাধিক কদর্যপূর্ণ কাঁটাযুক্ত শুষ্ক নোংরা খাবার) : মূলত ‘দরি’ আগুনের একটি বৃক্ষের নাম এবং জাহান্নামের পাথর। এতে বিষাক্ত কণ্টকবিশিষ্ট ফল ধরে থাকবে। এটা হবে দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট আহার্য। এটা ভক্ষণে দেহ পরিপুষ্টও হবে না, ক্ষুধাও নিবৃত হবে না এবং অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। ইমাম বুখারি (রহ.) মুজাহিদের সূত্রে বলেন, এটি এক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছ। এবং এক ধরনের বিষাক্ত আগাছা। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/৩৮৫)

এই বৃক্ষ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তাদের জন্য বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত গাছ ছাড়া কোনো খাবার থাকবে না, যা তাদের পরিপুষ্টও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবৃত করবে না।’ (সুরা : গাশিয়া, আয়াত : ৫-৭)

৩. ‘জা-গুচ্ছাহ’ (গলায় আটকে যাওয়া খাবার) : এটি এমন খাবার, যা কণ্ঠনালিতে আটকে থাকে এবং যেখান থেকে কোনো কিছু বের হতে পারে না এবং কোনো কিছু ঢুকতেও পারে না। বরং কদর্যতা, দুর্গন্ধ ও তিক্ততার কারণে সেখানে তা আটকে থাকে। অন্যত্র কাঁটাযুক্ত খাবার গলায় আটকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনভাবে তাদের প্রতি শাস্তি অব্যাহত থাকবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কাছে আছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত বহ্নিশিখা। আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ১২-১৩)

৪. ‘গিসলিন’ (রক্ত ও পুঁজ) : জাহান্নামিদের শরীরের পচা দুর্গন্ধযুক্ত মাংসকে বা ফোড়া থেকে নির্গত পুঁজ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে ‘গিসলিন’ বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, ক্ষত নিঃসৃত স্রাবকে ‘গিসলিন’ বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব সেখানে সেদিন তার কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং কোনো খাদ্য থাকবে না—রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ছাড়া। যা শুধুমাত্র অপরাধীরাই ভক্ষণ করবে।’ (সুরা : হা-ক্কাহ, আয়াত : ৩৫-৩৭)

জাহান্নামিদের পানীয় কেমন হবে

কোরআন ও হাদিসে জাহান্নামিদের পাঁচ ধরনের পানীয়ের বিবরণ পাওয়া যায়। পানীয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—

১. ‘হামিম’ (উত্তপ্ত পানি) : কাফিরদের জাহান্নামে ফুটন্ত পানি পান করতে দেওয়া হবে। এতে নাড়িভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। তাদের যখন খাদ্য হিসেবে জাক্কুমগাছের তিক্ত কাঁটাযুক্ত ফল দেওয়া হবে, তখন তা গলায় বিঁধে গেলে তারা পানি চাইবে। তখন তাদের গরম পানি দেওয়া হবে এবং তারা তা তৃষ্ণার্ত উটের মতো পান করতে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীরা! তোমরা অবশ্যই জাক্কুম বৃক্ষ থেকে আহার করবে এবং তা দিয়ে তোমাদের পেট পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে টগবগে ফুটন্ত পানি। তা পান করবে তৃষ্ণার্ত উটের মতো। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৫১-৫৬)

২. ‘গাসসাক’ (দুর্গন্ধযুক্ত পানি) : ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এটি জাহান্নামিদের গলিত রসবিশেষ। অন্য অর্থে এটি পুঁজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ।’ (সুরা : স-দ, আয়াত : ৫৮)

৩. ‘স-দিদ’ (ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত) : ‘স-দিদ’ বলা হয় ফোড়া বা ক্ষতস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজকে। উপরোক্ত দুর্গন্ধযুক্ত অপবিত্র পানি ও পুঁজ হবে জাহান্নামিদের পানীয়, যা তারা অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের পরিণাম জাহান্নাম এবং সবাইকে পান করানো হবে অপবিত্র দুর্গন্ধযুক্ত গলিত পুঁজ। যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে, আর তা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। তার কাছে মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে চতুর্দিক থেকে। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং এরপর সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১৬-১৭)

৪. ‘আল-মুহল’ তৈলাক্ত গরম পানি) : উত্তপ্ত তৈলাক্ত পানীয়কে ‘আল-মুহল’ বলে। এটা জাহান্নামিদের পানীয় হিসেবে দেওয়া হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা পানি চাইলে তাদের বিগলিত গরম তৈলাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় দেওয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল বিদগ্ধ করবে। এটা নিকৃষ্ট পানীয় আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল!’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৯)

৫. ‘তিনাতুল খাবাল’ (শরীর থেকে নির্গত ঘাম) :

জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত ঘামকে ‘তিনাতুল খাবাল’ বলা হয়। পৃথিবীতে যারা মদ কিংবা নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করত এবং যারা অহংকারে স্ফীত হয়ে দুনিয়ায় চলাচল করত, তাদের জাহান্নামে শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বা বিষাক্ত পুঁজ পান করতে দেওয়া হবে। এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। আর আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন, যে ব্যক্তি নেশাযুক্ত পানীয় পান করবে জাহান্নামে তাকে ‘তিনাতুল খাবাল’ পান করানো হবে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! ‘তিনাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেন, তা হলো জাহান্নামিদের ঘাম বা পুঁজ।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৩৩৫)

Place your advertisement here
Place your advertisement here