• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

অনন্য অবিকল্প শেখ হাসিনা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

ড. মো. শাহিনুর রহমান 

২৮ সেপ্টেম্বর আমাদের প্রিয় নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে তৎকালীন ফরিদপুর, বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়িতে জন্ম হয়েছিল দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির শ্রেষ্ঠতম রূপকার এঁর সর্বজ্যেষ্ঠ এই সন্তানের। তাঁর সেই জন্মক্ষণটি যে বাঙালি জাতির জন্য সৌভাগ্যের বার্তাবহ এক শুভক্ষণ ছিল তা আজ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব যে আজ বাংলাদেশকে এক অভ‚তপূর্ব বিস্ময় নিয়ে নতুন আলোকে দেখছে, সেই নবরূপ নির্মাণের প্রধান কারিগর জননেত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্বার নেতৃত্ব অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানবিক সকল সূচকে উন্নয়নের যে গতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ, তা উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এক আদর্শস্থানীয় উদাহরণ। বাংলা ও বাঙালির ভাগ্যে রূপান্তরের সোনার কাঠি ছুঁইয়ে তাকে একেবারে সজাগ ও সচেষ্ট করে তুলেছেন তিনি। ক্ষণজন্মা জননেত্রীর জন্মদিন এভাবেই ফিরে ফিরে আমাদের জন্য নতুন নতুন সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে হাজির হোক আন্তরিকভাবে সেই প্রার্থনা করি। 

চলতি বছরে শেখ হাসিনা সরকারের একটানা ক্ষমতায় থাকার ১২ বছর বা একযুগ পূর্ণ হয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহল এ ১২ বছরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের একযুগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের এই ১২ বছরে দেশের অবকাঠামো আর মানুষের জীবনমানের যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসে বা জীবনকালের অতীতে আর কখনও দেখা বা জানা যায়নি। বাঙালির চিরসঙ্গী দারিদ্র্য কমে গেছে লক্ষণীয়ভাবে। অভুক্ত বা আধাপেট খাওয়া, ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ এ দেশে আজকাল আর চোখে পড়ে না বললেই চলে। একযুগ আগে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ বিনির্মাণের যে-স্বপ্ন দেখতাম, তার প্রায় শতভাগ বাস্তব রূপ এখন আমাদের চোখের সামনে পরিদৃশ্যমান। জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এর মধ্যে ক্ষুধাকে জয় করে দেশ খাদ্যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, বিশাল উদ্বৃত্ত খাদ্যভাণ্ডারেরও অধিকারী। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নীত মধ্যম আয়ের দেশে। বাংলাদেশ অনেক আগেই পাকিস্তানকে সব সূচকে এবং ভারতকেও অনেকগুলো সূচকে অতিক্রম করে গেছে। যেমন, ২০০৬ সালের ৪১.৫ শতাংশ থেকে দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২০ শতাংশের নিচে এবং অতিদারিদ্র্যের হার ২৪.২৩ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে, গড় আয়ু ৬৫ বছর থেকে হয়েছে ৭৩.২ বছর, যা ভারত এবং পাকিস্তানের চেয়েও অনেক বেশি।

দশকাধিককাল ধরে শেখ হাসিনা সরকারের এই ধারাবাহিকতার সুফলগুলো ক্রমশ সুস্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে অগ্রগতির অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অতুলনীয় অগ্রগতি হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা অব্যাহতভাবে তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার ফলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। 

প্রিয় নেত্রী অপরিসীম সাহস, সুদৃঢ় মনোবল এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে অটল অবিচল থেকে, সবধরনের চ্যালেঞ্জ এবং ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে ক্রমসমৃদ্ধির পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গভীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা আর কূটনৈতিক দক্ষতাই এই আপাত-অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই তথা ২০৪১ এর পূর্বেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিজ্ঞজনেদের মতে, দেশ ও জাতির ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনাকে এখন আর কোনো অপশক্তিই রুখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ যেমন একসূত্রে গাঁথা, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়ন আর শেখ হাসিনাও এখন সমার্থক। এ দেশ যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকবে, কখনো পথ হারাবে না। শেখ হাসিনার হাতেই নির্মিত হবে তাঁর মহান পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল কালরাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাকি সদস্যরা সবাই যখন ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন, তখন প্রবাসে থাকায় বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দেশে ফিরে আসা এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিবেশও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশে। দীর্ঘ প্রায় ছয়টি বছর বিদেশে নির্বাসিত জীবনযাপনের পর ১৯৮১র ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে সক্ষম হন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই দিনটিতে আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। তবুও সেদিন প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল নামে। বঙ্গকন্যাকে ফিরে পেয়ে দীর্ঘদিনের দুঃখ শোক মানুষ যেন সাময়িক ভুলে যায়। শেখ হাসিনার মধ্যে দিয়ে যেন বঙ্গবন্ধুই পরপার থেকে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়ান। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে সেদিন পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। সেদিন নেত্রী স্বদেশের মাটিতে পা রেখে অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে নিহত আপনজনদের স্মরণ করে তাঁর পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার দৃপ্ত শপথ নেন। বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশ্যে সেদিন বঙ্গকন্যা বলেছিলেন, 'বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ছোট ভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।'

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়তে কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের কালো আগস্ট সে অগ্রযাত্রা থমকে দেয়। দীর্ঘকাল স্তব্ধ হয়ে থাকা অগ্রযাত্রা আবার শুরু হয় ১৯৯৬-এ, যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দু দশক পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। তবে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের জন্যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব¡ গ্রহণের পর থেকেই পূর্ণ গতিতে এগোতে থাকে উন্নয়ন অভিযাত্রা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিস্ময়করভাবে পাল্টে যেতে থাকে বাংলাদেশের চেহারা। এক সময়ের কথিত 'তলাবিহীন ঝুড়ি', যুদ্ধবিধ্বস্ত আর ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য। বৈশ্বিক ষড়ষন্ত্র, হাজারো বাধা-বিপত্তি এবং নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন আয়ের অর্থনীতি থেকে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের হাত ধরেই স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতিসংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যেকোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২.৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা তার কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ ভাগ। শেখ হাসিনার সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। আমাদের অনির্বচনীয় সৌভাগ্য যে, আমাদের দেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গেল বছর এসডিজি অর্জনে বিশ্বের অন্য সকল দেশকে পেছনে ফেলেছে। তাই গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলুশান নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন), গ্লোাবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউট ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছেন এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি। 

বাংলাদেশ চলতি ২০২১-এ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর এবার ২০৪১-এর মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মহাকাশ বিজ্ঞানে অগ্রগতির নিদর্শন হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে সম্ভব হয়েছে এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পোশাক শিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে অভাবনীয় অগ্রগতি, এবং পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে পদ্মার বুকে আজ বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে মেট্রারেলকেও একসময় স্বপ্ন মনে করা হতো। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য গতিতে এই মহাপ্রকল্পের বাস্তবায়নের কারণে রাজধানীতে ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলক সূচনা যাত্রা সম্পন্ন করেছে মেট্রোরেল।

অতিসম্প্রতি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের চেয়ে ধনী দেশে রূপান্তরিত হবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা ভারতীয়দের চেয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে, মাথাপিছু আয়ও ভারতের চেয়ে বেড়ে যাবে। বর্তমানে বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম। বিশ্বের পাঁচটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে বিশ্বে এমন পাঁচটি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের 'বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচক ২০১৯'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় সাত ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ সূচকে ভারত ও পাকিস্তান রয়েছে বাংলাদেশের পেছনে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেখ হাসিনা সরকার 'বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা' নামে একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশ এই মহাপরিকল্পনার আওতাভুক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)-এর সভায় 'ডেলটা প্ল্যান' নামে পরিচিত এই শতবছরের এ মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন। আগামী ২১০০ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০৩০ নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে প্রায় ৫,৭০০ মার্কিন ডলারে। ২০৪১-এ 'উন্নত দেশ' হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

করোনা অতিমারীকালে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি কম-বেশি পিছিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। গত বছর বিশ্বের মাত্র ২২টি দেশে ধনাত্মক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যাদের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। প্রায় সব দেশের রপ্তানি কমলেও আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৫ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এক হাজার কোটি ডলার। এ ছাড়া বেড়েছে জ্বালানি চাহিদাও, যা দেশের অগ্রগতির প্রমাণ। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট বলছে, সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হয়েও করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশ এ উপমহাদেশে সবচেয়ে সক্ষম এবং পৃথিবীতে ২০তম দেশ। প্রিয় জননেত্রীর যথোপযুক্ত পদক্ষেপ ও দিক-নির্দেশনার কারণেই এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। 

দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রিয় নেত্রীর জীবন বার বার বিপন্ন হয়েছে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল চক্র শেখ হাসিনাকে অন্তত ২৩বার হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। শুধু ঢাকাতেই তাঁর ওপর সাতবার সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে আরো চার-পাঁচবার। জীবনের মায়া ত্যাগ করে জাতির পিতার আদর্শের সুযোগ্য ধারক ও বাহক দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলার দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিজেকে আত্মোৎসর্গ করেছেন। তাঁর এই দৃষ্টান্তমূলক আত্মত্যাগে বলীয়ান হয়ে বাংলাদেশ একদিন অবশ্যই বিশ্বমানচিত্রে উন্নত দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে বলেই অভিজ্ঞ মহল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশের আপামর জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, 'আসুন, দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মর জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।' প্রিয় নেত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে গোটা জাতি আজ তাঁর নেতৃত্বের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সমবেত হয়েছে। বাঙালি জাতির মননে আজ এই আস্থা জাগরুক যে, শেখ হাসিনা অবশ্যই তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর আরব্ধ সোনার বাংলা নির্মাণের প্রয়াস সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে চালিয়ে যাবেন জীবনব্যাপী। তাই সমগ্র জাতি শেখ হাসিনার দীর্ঘ জীবন কামনা করে। আজ জন্মদিনে প্রার্থনা করি, মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দীর্ঘকাল সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখুন। জাতির সামনে অভীষ্ট বন্দরের দিক-নির্দেশক বাতিঘর হয়ে থাকুন তিনি বহুদিন। জয়তু দেশরত্ন বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা! শুভ জন্মদিন!

লেখক : অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ এবং সাবেক উপ-উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া 

Place your advertisement here
Place your advertisement here