• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

দেশের মানুষের মনে তাঁর স্থায়ী আসন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

এম নজরুল ইসলাম

দেশের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির মূর্তপ্রতীক তিনি। বদ্ধ জানালার কপাট খুলে দিতে প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন ১৯৮১ সালে। মানুষকে মুক্তির দিশা দিতে পারেন, এমন একজন মানুষের বড় প্রয়োজন ছিল তখন। ওই সময়ের একমাত্র দাবি ছিল সেটাই। শুধু সময়ের দাবি মেটাতেই নয়, মুক্তিকামী মানুষকে নতুন করে মুক্তির দিশা দিতেই তিনি ফিরে এসেছিলেন এই বিরান বাংলায়। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। মানুষের আকুল আহ্বান উপেক্ষা করবেন, এমন রক্তধারা তাঁর শরীরে প্রবহমান নয়। মাটির টান আর মানুষের প্রবল ভালোবাসা সেদিন তাঁকে জুগিয়েছিল অদম্য সাহস ও শক্তি। শক্তির বলেই তিনি সেদিন নিতে পেরেছিলেন সামরিকতন্ত্রকে উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত। পেছনে ফেলে এসেছিলেন নারীর নিশ্চিত সংসার। ফেলে এলেন প্রিয়তম স্বামী ও দুই সন্তান। সেদিন বাংলার মানুষ তাঁকে বরণ করে নিয়েছিল অশ্রুবৃষ্টির ভেতর দিয়ে। সেদিনের বিশাল জনসমুদ্র তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিল, তিনি একা নন। এই জাতি তাঁর সঙ্গে। জাতির সেই ভালোবাসা ও আস্থার জবাবে তিনিও জানিয়েছিলেন, বাংলার মানুষের দৈন্য দূর করতে তাঁর জীবন উৎসর্গীকৃত। সেদিন নিজেকে জাতির কাছে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। ‘কারফিউ’ গণতন্ত্রের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়ে মানুষের নতুন মুক্তির ভিত্তি রচনা হলো সেদিন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘মানুষ আছে তার দুই ভাবকে নিয়ে একটা তার জীবভাব, আর-একটা বিশ্বভাব। জীব আছে আপন উপস্থিতিকে আঁকড়ে, জীব চলছে আশু প্রয়োজনের কেন্দ্র প্রদক্ষিণ করে। মানুষের মধ্যে সেই জীবকে পেরিয়ে গেছে যে সত্তা সে আছে আদর্শ নিয়ে। এই আদর্শ অন্নের মতো নয়, বস্ত্রের মতো নয়। এ আদর্শ আন্তরিক আহ্বান, এ আদর্শ একটা নিগূঢ় নির্দেশ।’ পিতৃ-আদর্শের সেই আন্তরিক আহ্বান কিংবা নিগূঢ় নির্দেশেই সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফিরে এসেছিলেন পিতৃভূমিতে।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন। বসেন বিরোধীদলীয় নেতার আসনে। জনস্বার্থে ১৯৮৮ সালে পদত্যাগ করলেন। তারপর যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও স্বীকৃতির চিহ্ন হিসেবে শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার পান। কৃষিতে অসামান্য অবদানের জন্য ভূষিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক সেরেস পুরস্কারে। কয়েক বছর আগে ইউনেসকো শান্তিবৃক্ষ পদকে ভূষিত করেছে তাঁকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক অর্জন তাঁর। কিন্তু সবচেয়ে বড় অর্জন দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা। তিনি মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষ তার প্রতিদানে টানা তৃতীয়বারের মতো তাঁর দলকে ভোটের মাধ্যমে নিয়ে এসেছে ক্ষমতায়।

১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি। এই সময়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সবচেয়ে বড় দুটি সাফল্য বা অর্জন ছিল—পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি এবং ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি।

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে ছোটখাটো একটি গল্প বলতে হতো, সেই দেশটি আজ নিজ গুণে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে।

টানা এক যুগের নিরলস পরিশ্রমে এই কাজটি করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত ও ক্ষয়িষ্ণু বাংলাদেশকে উন্নয়নের সড়কে তুলে এনে রিলিফ শব্দটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে অপরিচিত করে দিয়েছেন তিনি। খাদ্য ঘাটতির দেশটি আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ। একসময় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল, তা ভুলতে বসেছে দেশের মানুষ। বাংলাদেশ এখন মহাশূন্যে নিজস্ব উপগ্রহ পাঠায়, নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানায়। একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। আমরা আমাদের অর্থনীতি ও সার্বিক উন্নয়নের দিকে একটু দৃষ্টি দিতে পারি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮-১৯ বছরে তা ৪০.৫৪ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং হতদারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে এবং হতদারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে। আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশ গতানুগতিক মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) ২০২০ সালে আরো দুই ধাপ এগিয়ে ১৩৩তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে যখন টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধিতে আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোতে উন্নতি করে প্রবৃদ্ধিতে পেছনে ফেলছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ হতে চলেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবৃদ্ধিতে এই অগ্রযাত্রা অবশ্যই একটি বড় অর্জন। ভারতীয় অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু, যিনি ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন, তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারণ করা সুনির্দিষ্ট অগ্রাধিকারের কারণেই বাংলাদেশের এই অগ্রগতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রেকর্ড ১৭ বারের মতো ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর এবারের ভাষণে অনিবার্যভাবেই করোনার টিকা প্রসঙ্গ এসেছে। প্রযুক্তি সহায়তা ও মেধাস্বত্বে ছাড় পেলে বাংলাদেশও যে বিপুল পরিমাণে টিকা তৈরি করতে ‘সক্ষম’, সে বিষয়টি এই বিশ্বসভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তেমনি এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর কথা, কভিড মহামারি যাদের আরো বেশি ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে।

মহামারির প্রকোপে বিপর্যস্ত শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সংকটে পড়া অভিবাসীদের কর্মসংস্থান ও কল্যাণ নিশ্চিত করার দাবিও প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সামনে এনেছেন। ডিজিটাল সরঞ্জাম ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরো বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

সেই সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘জোরালো ভূমিকা’ চেয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফিরে যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্ভাব্য সব কিছু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেয়েছেন। বিশ্ব সংস্থার সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) এই পুরস্কার দেয়। দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

তিন যুগ আগে বাংলাদেশের নাম শুনলে বিদেশিরা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকত, এটা আবার কোন দেশ। এখন বাংলাদেশের নাম শুনলে তাকায় অবাক-বিস্ময়ে, তবে সে দৃষ্টি সম্মানেরও। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজকের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। এই অর্জন ধরে রাখতে এবং উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে তাঁর গতিশীল নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই।

কল্যাণমন্ত্রে যাঁর দীক্ষা, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘মানুষের ধর্ম’ যিনি ধারণ করেন হৃদয়ে, জনগণের সেবা যাঁর ব্রত, তিনিই তো অমৃতের সন্তান। বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক তিনি। তাঁকে ঘিরেই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। তিনি যেমন চেনেন বাংলার শ্যামল প্রকৃতি, তেমনি বাংলার মানুষ চেনে তাঁকে। বাঙালির সঙ্গে নিবিড় যোগসূত্র তাঁর জন্মান্তরের। দেশের মানুষের আস্থা ও অস্তিত্বে তাঁর স্থায়ী আসন।

অমৃতের সন্তান শেখ হাসিনাকে তাঁর জন্মদিনে সশ্রদ্ধ প্রণতি।

লেখক : সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং  অস্ট্রিয়াপ্রবাসী মানবাধিকারকর্মী, লেখক ও সাংবাদিক
nazrul @gmail.com

Place your advertisement here
Place your advertisement here