• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

ক্রীড়া পর্যটন, এক অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের হাতছানি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

শেখ মনোয়ার হোসেন

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে যে কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছে তার মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুনভাবে পথচলা শুরু হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন ও সম্ভাবনাগুলো সম্ভবে পরিণত হচ্ছে। তার উজ্জ্বল নিদর্শন পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য, সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চেতনার জন্য ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে আওয়ামী লীগ তথা স্বদেশ প্রেমে জাগরিত বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আর হতে হয়নি। কিন্তু আমাদের চ্যালেঞ্জ এখন অন্য জায়গায়। একটি সুশৃঙ্খল, পরিমার্জিত, স্বাস্থ্যবান, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বাস্তবায়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন।

জনমানুষকে জনসম্পদে পরিণত করার দিন এসেছে। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ আর তথাকথিত ‘অভিশাপ’ নয়, এটা আশীর্বাদ। প্রশিক্ষিত, কৌশলী, স্বাস্থ্যবান মানুষ দেশের সম্পদ; সর্বোপরি মানবসম্পদ।

যমুনাবিধৌত, বালু-পলি পল্লবিত সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে মানুষ গড়ার অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। এখানে সব সম্ভাবনার সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য লাভের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ক্রীড়া স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া-সরঞ্জাম কারখানা নির্মাণ এবং ক্রীড়া পর্যটনের ব্যবস্থাকরণ।

বিশ্বমানের ক্রীড়া-সরঞ্জাম তৈরির কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। ক্রীড়া স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ ও অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধীরে ধীরে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদে পরিণত হয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বয়ে আনবে সুনাম এবং রেমিটেন্স। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের মানবসম্পদের সুনাম এবং ভব্যতা ছড়িয়ে পড়বে। দেশ থেকে বিশেষ করে যুবসমাজের ভেতর থেকে মাদক গ্রহণ, হতাশা, নৈরাজ্য দূর হবে। একটি আশাবাদী, স্বাস্থ্যবান বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে পরিচিতি লাভ করবে। যেমনটি দাঁড়িয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া। যেভাবে পরিচিতি লাভ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এমনকি আজকের কাতার। শুধু মেন্যু এবং ভেন্যু দিয়ে তারা সারা বিশ্বের সম্ভাবনাময় মানুষকে আকর্ষণ করেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের ভেন্যুকে বিশ্বমানের সুযোগে পরিণত করে আমরা আগামীর বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ ও সহযোগিতার মানদণ্ডে বাংলাদেশকে অনায়াসে সম্ভব করে তুলতে পারি।

স্পোর্টস এডুকেশন, স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং স্পোর্টস ট্যুরিজম হবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের শীর্ষ হাতিয়ার। একটি জাতি যদি স্বাস্থ্যবান, পরিচ্ছন্ন হয়ে গড়ে ওঠে তাহলে সে জাতি আর হতাশায় পথভ্রষ্ট হবে না। সে জাতি এগিয়ে যাবে স্বপ্নের এবং সম্ভাবনার দিকে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পাখি হয়ে শেখ হাসিনার হাত ধরে।

যমুনা নদী এমন একটি নদী সে দু'কূল ভাঙে। কিন্তু আমরা যদি এই নদীকে শাসন করি, যদি উভয় দিক শাসন করে। নদী-রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে কাজে লাগাই তাহলে আমাদের সবদিক দিয়ে লাভ হবে।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে যমুনা নদীর উজান কিংবা উৎসমুখ ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত কুড়িগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ভাটিতে চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মা অববাহিকায় নদীশাসন করে যদি আমরা উভয়পাড়ে কোটি কোটি তালগাছ রোপণ করি তাহলে বাঁধ রক্ষা তো হবেই; আগামী ১৫ বছর পরে বাংলাদেশের সুষম চিনির আর অভাব হবে না এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের উন্মেষ ঘটবে। বেড়ে যাবে মৎস্য, পশুপালন, কৃষি, শিল্প, শিক্ষার উৎপাদন। ক্রীড়াশিক্ষা, ক্রীড়াশিল্প এবং ক্রীড়া পর্যটনের জন্য দেশের মানুষ আগ্রহী হবেন, তারা সচেতন হবেন। সর্বোপরি সন্তানদের আর হতাশায় পা বাড়াতে দেবেন না।
 
আসুন আমরা সবাই মিলে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে মানব মুক্তির স্থান হিসেবে গড়ে তুলি। মানুষের কল্যাণে, মানবতার জয়গানে মুখরিত করে তুলি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে।

স্বাধীনতার পরপরই দ্রুততার সঙ্গে আমরা একটি সংবিধান পেয়েছিলাম; যা আমাদের গর্বের এবং গৌরবের। বর্তমানে আমাদের গড় আয়ু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। আমাদের জিডিপি বেড়েছে। শেখ হাসিনার সুকৌশলী নেতৃত্ব, যোগ্য দিকনির্দেশনা এবং দেশপ্রেম আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, নগরায়ণ, শিল্প প্রসারসহ সর্বক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে এবং বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারীদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে আমাদের সোনার বাংলাদেশ। এখন শুধু প্রয়োজন স্পেশালাইজেশন। স্পেশালাইজড শিক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান দূরদর্শী জাতি গঠনই আমাদের সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

সুশৃঙ্খল, মানবিক, সাংস্কৃতিক মানসম্পন্ন জাতি গঠনের মাধ্যমে আমরা বিশ্বে আরও স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের নামকে পাকাপোক্তভাবে এঁকে দিতে পারি। শুধু বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পরে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা মাঠ দাবড়ে বেড়াবেন না, একদিন বাংলাদেশের পতাকাবাহী পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নৈপুণ্য প্রদর্শন করবে আমাদের দেশের ক্রীড়াবিদরা। আর এই স্বপ্নকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে অনায়াসে কাজে লাগাতে পারি। আমরা স্পোর্টস সিটি হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্বের দরবারে আমাদের আসনকে করতে পারি অভিনন্দনযোগ্য।

লেখক: উদ্যোক্তা পরিচালক, সিরাজগঞ্জ ইকনোমিক জোন ও 
সিনেট সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Place your advertisement here
Place your advertisement here