• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

Find us in facebook

লালমনিরহাটে গল্পকথার বইমেলা শুরু

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২৪  

Find us in facebook

Find us in facebook

লালমনিরহাটে সাহিত্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যতিক্রমী এক বইমেলার আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী গল্পকথা পরিবার। গতকাল শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল ১১টায় লালমনিরহাট ভকেশনাল রোডের মৃধা বাড়িতে ১০ দিনব্যাপী এ বই মেলার উদ্বোধন করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

জানা গেছে, আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেম আসক্তি থেকে সরিয়ে বই ও ঐতিহ্যকে লালন করতে ব্যতিক্রমী এক আড্ডার ব্যবস্থা করেছে গল্পকথা পরিবার। সেখানে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো মৃধাবাড়ি। সেখানে আগন্তুকরা ইট পাথরের শহরের মাঝে ফিরে পাবেন এক গ্রামীণ শান্ত পরিবেশ। বিগত দিনের হারাতে বসা গ্রামীণ সব আসবাব পত্রে সাজানো এই আড্ডা স্থলে প্রবেশ করতে কোন ফিস গুণতে হচ্ছে না।

আড্ডা দিতে আসা আগন্তুকদের খাবারের জন্য একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে। এখানে রেস্টুরেন্ট মূলত আড্ডার ফাঁকে খাবারের জন্য এবং গল্পকথার সাপোর্ট স্টাফদের পারিশ্রমিক বাবদ ব্যয় হয় এই রেস্টুরেন্টের অর্থ। এ রেস্টুরেন্টে আগাম মূল্য পরিশোধ করে পছন্দের স্থানে বসে খাবারের সু ব্যবস্থা আছে। খাবার রান্নায় পারদর্শী গ্রামীণ নারীরা তাদের খাবার রান্না করে এখানে প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারেন। গ্রামীণ নারীদের রান্নার কাজকে উৎসাহিত করতে নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে এ সুযোগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ রেস্টুরেন্টে পার্টাইম কাজের সুযোগও রয়েছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত দামে প্রতি ঘণ্টা হিসেবে কাজ করে মজুরি নিতে পারেন।

পুড়ো মৃধাবাড়িকে গ্রামীণ পরিবেশে সাজানো হয়েছে। হারাতে বসা গ্রামীণ সেই টং ও কুঁড়েঘর। রয়েছে বাঁশ বেতের তৈরি বেড়া। আপ্যায়ন করা হয় মাটির তৈরি সব তৈজসপত্রে। এখানে রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা চর্চার ব্যবস্থা ও শান্ত পরিবেশে পছন্দের বই পড়ার সুযোগ। বই পড়ার জন্য লাইব্রেরিও রয়েছে এখানে। রয়েছে কবিতা আবৃতি ও আঞ্চলিক গান-গজল পরিবেশনার ব্যবস্থাও। এসব পরিবেশনে কারও কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। ইচ্ছে হলেই ডায়াসের সামনে গিয়ে যে কেউ পরিবেশন করতে পারবেন। তবে তা হতে হতে পরিচ্ছন্ন অঞ্চলিকতা ও ঐতিহ্যকে ঠিক রেখে। সব মিলে গ্রামীণ এক মনোরম পরিবেশ গল্পকথায়। এখানে বসে মোবাইলে গেম খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে তাদের বই আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে ১০ দিনব্যাপী বই মেলার আয়োজন করেছে গল্পকথা পরিবার। আর এ বই মেলা উদ্বোধন করতেও ব্যতিক্রম আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোন অতিথি নেই। পাঠক দর্শনার্থী আর মেলায় আগন্তুকরাই উদ্বোধক। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১১টায় উদ্বোধন হয়েছে বই মেলা।

বই মেলায় স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের লেখা প্রায় ৩ হাজার বই স্থান পেয়েছে মেলায়। উদ্বোধনী দিনে দর্শনার্থী কম থাকলেও আগামীতে বাড়বে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। এ আয়োজন শুধু ১০ দিনেই নয়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে থাকবে বই মেলার আয়োজন।

স্থানীয় কবি সাহিত্যিক মমিনুল আলম রাসেল বলেন, বই পড়ে বা কিনে কেউ বিপথে যায়নি বরং আধুনিকতার নামে আমাদের প্রজন্ম খারাপ কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপথগামী হচ্ছে। মোবাইল গেম যার অন্যতম। তাই আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেম থেকে সরিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে গল্পকথা বই মেলা অন্যতম ভূমিকা রাখবে। বর্তমান প্রজন্ম হারানোর দিনের অনেক ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। তাদের কাছে সেই ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দিবে গল্পকথা পরিবার। গ্রামীণ পরিবেশে আড্ডার সঙ্গে বই পড়ার সুযোগ থাকায় সপরিবারে বই মেলায় মানুষ আসবে এমনটাই দাবি তার।

গল্পকথা পরিবারের মূল আয়োজনক সংস্কৃতিকর্মী মুনিম হোসেন পথিক বলেন, আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেমিং আসক্তি থেকে সড়িয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতে গল্পকথা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জার্মান প্রবাসী বন্ধু মইনুল হক মৃধা ওরফে মৃধা হকের পরিত্যাক্ত পৈত্রিক মৃধাবাড়িটি নিয়ে গল্পকথা গড়ে তোলা হয়। হারাতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে নতুন তথা আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে গ্রামীণ পরিবেশে এটি গড়ে তোলা। এখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা এসে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হতে পারবে। আড্ডার সাথে লাইব্রেরির বইও পড়তে পারবে।

রেস্টুরেন্ট রয়েছে মূলত আগন্তুকদের গ্রামীণ খাবার দিতে এবং সাপোর্ট স্টাফদের পারিশ্রমিক দিতে। গ্রামীণ নারীরা তাদের রান্না করা খাবার বা উৎপাদিত পণ্য এখানে প্রদর্শন ও বিক্রি করতে পারবেন। যার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে। রেস্টুরেন্টে প্রতিঘণ্টা মজুরি হিসেবে পারিশ্রমিক নিতে পারবেন স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আপাতত স্থানীয় লেখক কবি ও সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে ও তাদের লেখা বই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

বই মেলা প্রতিটি বিশেষ দিনে করা হবে। মূলত সন্তানদের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে অভিভাবকরা গল্পকথা নিয়ে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন আয়োজক মুনিম হোসেন পথিক।

Place your advertisement here
Place your advertisement here