• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

১৩ বছর ধরে শিকলে বাঁধা সোহাগীর জীবন

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

জন্ম দাতা বাবা-মা নিরুপায় হয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠেই গবাদি পশুর মতোই মেয়েকে ঘর থেকে বাইরে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখেন। আবার সন্ধ্যা হলে একইভাবে বিছানার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয় আদরের সন্তানকে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মানসিক ভারসাম্যহীন সোহাগী বেগমের বয়স ১৮ বছর। এর মধ্যে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন।

সোহাগী বেগম আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউপির নামুড়ি কদমতলা মোড় এলাকার দুলাল মিয়ার মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নামুড়ি কদমতলা গ্রামের দুলাল মিয়ার ৪ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সোহাগী বেগম। জন্মের পরে ভালোই ছিল সোহাগী। আদর করে বাবা মা নাম রাখেন সোহাগী। ৪ বছর বয়সে হঠাৎ বাড়ির পাশে পুকুরে ডুবে আহত হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পেট থেকে পানি বের করেন। পেট থেকে পানি বের করতে সোহাগীর পা ধরে ঘোরানো হয়। এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় সোহাগী।

পানিতে ডুবে বেঁচে গেলেও সেই চিকিৎসা তার মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। ধীরে ধিরে বাড়তে থাকে মানসিক বিকারগ্রস্ততা। অভাবের সংসারে আদরের সন্তানকে সুস্থ করতে প্রাণপণ চেষ্টাও করেন তার পরিবার। কিন্তু কিছুতেই সুস্থ হয়ে ওঠেননি। বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত। বাহিরে ছুটে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করেন সোহাগী। প্রতিবেশীরা এক পর্যায়ে বিরক্ত হলে তাকে ঘরে আটকিয়ে রাখে তার পরিবার।

হারানোর ভয় আর অন্যের ক্ষতি করায় নিরুপায় সোহাগীর পরিবার গত ১৩ বছর ধরে পায়ে শিকলে বেঁধে রাখে। ভোর হলে বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে সোহাগীর পায়ের শিকল তালা বদ্ধ করে রাখে পরিবার। সন্ধ্যা হলে ঘরের বিছানার সঙ্গে শিকল বাঁধা থাকে সোহাগী। শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই কাটছে তার খাওয়া, প্রসাব, পায়খানা।

কথাও বলতে পারে না সোহাগী। পেটে ক্ষিদে পেলে চিৎকার দেয়। খাওয়ার রুচিও প্রচুর। গরিব বাবা দুলাল মিয়া সামান্য পুঁজির গোশত বিক্রেতা। সেখানে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে তার ৬ সদস্যের সংসার। অভাবের কারণে চাহিদামতো খাবারও পাচ্ছে না মানসিক ভারসাম্যহীন সোহাগী বেগম।

এক সময় নামুড়ি গুচ্ছগ্রামে অন্যের নামে বরাদ্ধের ঘরে থাকতেন দুলাল মিয়া। সেই জরাজীর্ণ ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই। তাই স্ত্রী সাবিনা বেগমের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র দুই শতাংশ জমিতেই ঘর করে কোনো রকম জীবন যাপন করছেন তারা।

আদরের মেয়ে সোহাগীর সুস্থজীবন দেখার প্রচণ্ড স্বাদ থাকলেও সাধ্যের বাইরে। প্রতিনিয়ত দীর্ঘশ্বাসে কাটে দুলাল সাবিনা দম্পতির সংসার। অভাবের পরেও যখনই ভালো চিকিৎসকের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই ছুটেছেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য। প্রতিবারই অর্থের অভাবে সম্পূর্ণ চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। তাই দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে শিকলে বাঁধা সোহাগীর জীবন।

সোহাগীর মা সাবিনা বেগম বলেন, পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজ পেটের সন্তানকে শিকলে বেঁধে রাখা। এ কাজটি প্রতিদিন করতে হচ্ছে। সোহাগীর প্রস্রাব পায়খানা যুক্ত কাপড় পরিষ্কার করতেও কষ্ট হয় না। বুক ছিঁড়ে যায় যখন মেয়েকে গরু ছাগলের মতো গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখি। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে সোহাগী সুস্থ হতো। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেন তিনি।

সোহাগীর বাবা দুলাল মিয়া বলেন, প্রথম দিকে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা নষ্ট করেছি। কোনো কাজ হয়নি। মেয়ের চিকিৎসা করাতেই নিঃস্ব হয়েছি। সুযোগ পেলে ছুটে গিয়ে সোহাগী অন্যের ক্ষতি করে। তাই বাধ্য হয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছি। এভাবেই কাটছে তার ১৩ বছর।

সোহাগীর প্রতিবেশী পলাশী ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, মেয়েটার চিকিৎসা করাতেই নিঃস্ব হয়েছে পরিবারটি। এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেয়ে মেয়েকে শিকলে বেঁধে রেখেছে। সাধ্যমতো গ্রামবাসী ওই পরিবারকে সহায়তা করে। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে হয়তো সুস্থ হবে সোহাগী। তার সুচিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা কামনা করেন তিনি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here