• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

করতোয়ার তীরে সম্প্রীতির অনন্য নজির

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় নৌকাডুবির ঘটনায় সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেছেন করতোয়া নদীর পাড়ের এলাকাবাসী। নৌকাডুবির পর এলাকার শত শত তরুণ মরদেহ উদ্ধারে কাজ করেছেন। যারা অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের। ঘটনার পর পরই সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন। তারা মরদেহ উদ্ধারে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পানিতে ডুবে মরদেহ উদ্ধার করা শুরু করেন। ঘটনার দিনই ডুবে যাওয়া প্রায় ২৫ টি মরদেহ উদ্ধার করেন তারা।

ঐতিহাসিক বদেশ্বরী মন্দিরে প্রতিবছর মহালয়ার দিনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পুজা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের আত্মীয় স্বজনের মঙ্গল কামনায় তারা করতোয়া ও ঘোড়ামাড়া নদীর মিলন স্থানে স্নান করেন। অনেকে মন্দিরে তর্পণ দেন। সেদিনও মহালয়ার দিনে ওই মন্দিরে যোগ দিতে হাজারো পূণ্যার্থী উপস্থিত হয়। তাদের অধিকাংশই আউলিয়া ঘাট দিয়ে নৌকা যোগে মন্দিরে যায়। 

নৌকাটি মন্দিরের দিকে যাবার উদ্দেশে যখন ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে তখন নৌকায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না। একটু এগোতেই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে ইঞ্জিন বিকল হয়ে নৌকাটি কাত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে পানির নিচে ডুবতে শুরু করে। ডুবতে থাকে করে নৌকার যাত্রীরাও। শুরু হয় চিৎকার, চেঁচামেচি। এ সময় নদীর পাড়ে দাঁড়ানো মানুষেরা উদ্ধারের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীতে। অনেককেই তারা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। 

উদ্ধার কর্মীরা জানান, প্রথম দিন ২০ থেকে ২৫ জন নদীতে নেমে যান। এ সময় চা শ্রমিকরাও নদীতে নেমে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। নদীতে মাছ ধরা জেলেরাও ছিল। পরদিন স্থানীয় শতাধিক মানুষ নেমে যায় নদীতে মরদেহ উদ্ধার করতে। তৃতীয় দিনেও স্থানীয়রা নদীতে নেমে মরদেহ খুঁজতে থাকে। তারা ডুবুরী দল এবং ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে। 

কমলাপুকুরী এলাকার ইকবাল জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে সজিব রায় এবং তার স্ত্রীকে। ঐদিনই সজিবের ছেলেরও মরদেহ উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবী এই উদ্ধারকর্মীরা। 

সজিব রায় বলেন, স্থানীয়রা না হলে বেঁচে ফিরতে পারতামনা। তবুও ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি।

সর্দারপাড়া এলাকার জেলে বাবুল হোসেন বলেন, মাছ ধরছিলাম। এ সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে জাল ফেলে ডুবে যাওয়া মানুষদের উদ্ধারে নেমে যাই। দুইজন জীবিত এবং ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। 

সমাজকর্মী সারোয়ার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় দিন আমরা দল বেঁধে নদীতে নেমে পড়ি। নদীর গভীরে ডুবে মরদেহ উদ্ধার করি। অনেক মরদেহের হাত কাটা গেছে। অনেকের পা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের শরীরে পঁচন ধরেছে। অনেকের শরীর ফুলে গেছে। অনেক মরদেহ থেকে বিকট গন্ধ বের হচ্ছিল। অনেককেই চেনা যাচ্ছিলনা। কিন্তু সেচ্ছাসেবী উদ্ধার কর্মীরা এসব তোয়াক্কা না করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকি। স্থানীয় তরুণ উদ্ধারকর্মীরা গভীর রাত পর্যন্ত নদীর পানিতে ডুবে মরদেহ উদ্ধার করতে থাকে। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এমন মানুষজন বলছেন, স্থানীয় ঐ তরুণরা পানিতে না নামলে তারা বাঁচতে পারত না। 

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, যখন নৌকা ডুবে গেল তখন তারা দিশাহীন হয়ে পড়েন। অনেকেই মন্দিরে ছিলেন। মুসলিম ভাইয়েরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন।

আরাজি শিকারপুর এলাকার জমিদার বর্মণ বলেন, মুসলিম ভাইয়েরা নিজের ভাইয়ের মতো আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদের প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। 

দেবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিতু আক্তার বলেন, এটা একটা অন্যরকম দৃষ্টান্ত। এখানকার মানুষ সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 
নৌকাডুবির ঘটনায় ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে তিনজন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here