• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

নীলফামারীতে স্কুলে টানা তিনবার সেরা হওয়া রিশাদ এখন বিশ্ব মঞ্চে   

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের ১৭ জনের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন নীলফামারী জেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নিজপাড়া গ্রামের ছেলে রিশাদ হোসেন।

এর আগে দুবাইয়ে এশিয়া কাপে টাইগার দলের সঙ্গে নেট বলার হিসেবে ছিলেন তিনি। তার স্পিনে নেটে অনুশীলন সেরেছিলেন টাইগাররা। এবার রিশাদের জাতীয় দলের মূল স্কোয়াডে থাকার খবরে আনন্দের বন্যা বইছে সারা জেলায়। তাকে টিভিতে এক পলক দেখার ইচ্ছা পাড়া-প্রতিবেশীদের।

সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের নুর আলম ইসলামের বড় সন্তান ২০ বছর বয়সী রিশাদ। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় স্বপ্নপুরণে গ্রামের মাঠ থেকে বেড়ে উঠে তিনি আজ হয়ে উঠেছেন দেশের অপার সম্ভাবনাময় এক তরুণ লেগস্পিনার।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আগ্রহ রিশাদের। আর ক্রিকেটার হিসেবে পথ চলার শুরুটা হয় জেলার ছমিরউদ্দিন স্কুলের অভ্যন্তরীণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে। টানা তিন টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রিশাদ।

যদিও তা কোনো রেকর্ডবুকে লিপিবদ্ধ হয়নি। তবে সেখান থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার প্রবল প্রতিজ্ঞা মনে এঁকে ফেলেন রিশাদ। এরপর জেলার নজরুল স্মৃতি একাডেমির হয়ে নীলফামারী শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতেন রিশাদ।

সে সময় রবির আয়োজিত স্পিনার হান্ট ইভেন্টে সেরা হন রিশাদ। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় নতুন পথ চলা। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।পরবর্তীতে ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে জায়গা করে নেন রিশাদ।এরপর অনুর্ধ-১৯ দলের হয়েও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ডাক পাওয়ার আগেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে জাতীয় দলের খেলোয়াড়সহ বিশ্বের বড় বড় তারকাদের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে রিশাদের। এবার তিনি রয়েছেন স্বপ্নের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথমবারের মতো মাঠের নামার অপেক্ষায়।

রিশাদের ক্রিকেট জীবনের পথচলায় ভরসার নাম বাবা নুর আলম ইসলাম। নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। এছাড়া মামা আসাদুজ্জামান আসাদ তার পথচলার আরেক সঙ্গী। এক জুতা পরেই দুজন প্রাকটিস করেছেন। কখনও পরেছেন একই জার্সি-ট্রাউজার্স।

রিশাদের বাবা নুর আলম ইসলাম জানালেন, ছোটবেলা থেকে আমার ছেলের ক্রিকেটের প্রতি টান অনেক। শুরুতে ওর খেলার সামগ্রীর জোগান দিতে পারতাম না। আমি ওকে কাঠ দিয়ে ব্যাট বানিয়ে দিতাম। তখন ব্যাট কিনে দিতে পারতাম না।

তিনি আরও বলেন, প্রথম ব্যাট কিনে দেই ৫৫০ টাকা দিয়ে। কিন্তু ওই ব্যাটে খেলা যেতো না। পরে একটা ব্যাট কিনে দেই ২০ হাজার টাকা দিয়ে। ওর মা ও আমি কখনও মানা করিনি খেলাধুলায়। আজ সে জাতীয় দলের সদস্য। গর্বে আমার বুক ভরে গেছে, এই আনন্দে আমি ঠিকঠাক কথাও বলতে পারছি না।

রিশাদের মামা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, রিশাদের এই জায়গায় পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও বাবা-মায়ের সমর্থন। রিশাদের পাশে থাকার কথা যদি বলেন তাহলে আমরা একসঙ্গে প্রাকটিস করতাম। এমনও দিন গেছে যে সকালে আমি যে জুতা পরে প্র্যাকটিস করতাম, বিকেলে সে ওই জুতা পরেই প্র্যাকটিস করতো। আমি মাঠে পৌঁছে দিতাম। মাঝে মাঝে একই জার্সি দুজন পালা করে পরে প্র্যাকটিস করেছি। আজ আমরা গর্বিত। প্রত্যাশা রাখি ও যেন দেশের জন্য কিছু করতে পারে।

২০০২ সালের ১৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করা রিশাদ বর্তমানে নীলফামারী ছমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়নরত আছেন। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ভুবন মোহন তরফদার বলেন, রিফাত আমার সরাসরি ছাত্র। আমি শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। স্কুল থেকেই ওর ক্রিকেট যাত্রার শুরু। ও স্কুলে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলনে ছিল। স্কুলের তিনটি টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফল করে।

তিনি আরও বলেন, রিশাদের অবদানেই আমাদের স্কুল বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছিল। আমরা সাধারণত ওকে ভারতের স্পিনার অনিল কুম্বলের সঙ্গে তুলনা করি। রিশাদ জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে। আমরা গর্বিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি ওকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে তাহলে আরও ভালো কিছু দিতে পারবে।

জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর অনুভূতি জানতে মুঠোফোনে কথা হয় রিশাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ভালো লাগছে। এখন কিছু বলতে চাই না, ভালো কিছু করার চেষ্টায় আছি ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমার জন্য।

নীলফামারী জেলা ক্রীড়াসংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ তরিকুল ইসলাম গোলাপ বলেন, ছোটবেলা থেকে রিশাদ অনেক চেষ্টা করেছে। আজ তার সাফল্যে আমরা ক্রীড়াসংস্থা গর্বিত সেই সঙ্গে পুরো জেলার মানুষ গর্বিত।

খেলাধুলার পাশাপাশি রিশাদের রয়েছে কবুতর পালনের সখ। নিজের বাড়ির উঠোনে আছে পাখি পালনের নির্দিষ্ট স্থান। যেখানে জায়গা হয়েছে দেশি বিদেশি কয়েক জাতের কবুতরের।
#jagonews24.

Place your advertisement here
Place your advertisement here