• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

‘২১ বছর ধরে আমি শুধু কেঁদেছি, আমার মৃত্যুর বিচার চাই’

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্যোতি আগারওয়াল নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে আত্মহত্যার চেষ্টার পর রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গৃহবধূর মৃত্যুর খবরে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে।

মৃত জ্যোতি আগারওয়াল ব্যবসায়ী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কির স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি সৈয়দপুর উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি। 

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঘুমের ওষুধ খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন দুই সন্তানের জননী জ্যোতি আগারওয়াল। তার একটি সুইসাইড নোটে উঠে এসেছে স্বামী-শাশুড়ি-দেবর-জায়ের নির্যাতনের চিত্র। এক সপ্তাহ আগে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তার ছবি তুলে সৈয়দপুর হিন্দু কমিউনিটির নেতাদের কাছে মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন জ্যোতি। কিন্তু কেউই তার ওপর পারিবারিক অত্যাচারের সুরাহা করতে এগিয়ে না আসায় গত বৃহস্পতিবার রাতে একসঙ্গে কয়েকটি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

শহীদ বদিউজ্জামান সড়ক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হলে বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা টের পান। কিন্তু তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা করতে থাকেন নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালার স্ত্রী ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল। অবস্থার অবনতি হলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। শুক্রবার পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় বাধ্য হয়ে জ্যোতিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছিলেন জ্যোতি। 

ঘুমের ওষুধ খাওয়ার আগে ডায়েরির পাতায় লেখা দুই পৃষ্ঠার ওই সুইসাইড নোটে জ্যোতি তার মৃত্যুর জন্য চারজনকে দায়ী করে তাদের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন, স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল, শাশুড়ি উমা দেবী আগারওয়াল, দেবর অমিত কুমার আগারওয়াল ও জা ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়াল। এক্ষেত্রে তার দুই সন্তান একেবারে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।

সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, আমার বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি ও স্বামী-দেবর মানসিক নির্যাতন করছে। দেবরের বিয়ের পর জা অমৃতাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে আসছে। ওরা আমাকে চারবার মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। বেঁচে আছি সেটা আমার ভাগ্য। আমাকে সাজিয়ে মিথ্যে বলে আমার গয়না ও জমানো টাকা নিয়েছে তারা। ফেরত দিবে বলে আজও দেয়নি। বরং টাকা ও গয়নার কথা বললেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায়। গায়েও হাত তুলেছে সবাই মিলে। আমার মা-বাবা নেই। ভাইবোনদের জন্য বেঁচে ছিলাম। কে জানতো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে? তাহলে তো ভাইবোনরা ছেড়ে দিত না।

তিনি আরো লিখেছেন, শাশুড়ি উমা দেবী আমাকে কখনো দেখতে পারেনি, ভালোও বাসেনি। আমার সংসার ভাঙার পেছনেও তার হাত রয়েছে। তিনি উল্টাপাল্টা বলে তার ছেলে সুমিতের কান ভরতো। এমনকি আমার বাচ্চা দুটোকেও এরা ভয় দেখিয়ে রাখে। এ কারণে তারা কিছু বলতে পারে না। বাচ্চাদের রক্ষার জন্যও আকুতি জানিয়েছেন জ্যোতি।

জ্যোতি আরো লিখেছেন, মানুষ মৃত্যুর সময় কখনো মিথ্যে বলে না। বিশ্বাস না হলে কাজের লোক ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন। আমার শাশুড়ি অনেক অত্যাচার করেছে। ২১ বছর ধরে আমি শুধু কেঁদেছি। ওরা কখনোই সুখের দিন দেখতে দেয়নি, আমার মৃত্যুর বিচার চাই।

জ্যোতির স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি বলেন, সুইসাইড নোট বলে যে উড়ো চিঠির কথা প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ এটি আমার স্ত্রীর লেখা নয়। তার হাতের লেখার সঙ্গে কোনো মিল নেই। প্রমাণ করবেন কীভাবে যে চিঠিটা জ্যোতি লিখেছে?

সৈয়দপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। মৃত জ্যোতির ভাই জানিয়েছেন মরদেহসহ সৈয়দপুরে আসছেন। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here