• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

দেশের ‘সবচেয়ে ছোট’ মসজিদ গাইবান্ধায়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

ভেঙে গেছে কিছু অংশ। কোথাও সাদা রং উঠে শ্যাওলা জমে কালচে হয়ে গেছে দেওয়াল। প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই এটি মসজিদ। তবে উপরিভাগের একটিমাত্র গম্বুজ জানান দিচ্ছে এটি আসলে একটি মসজিদ। চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি এই মসজিদটির চার কোনায় থাকা চারটি পিলারের নান্দনিক কারুকার্য এখন প্রায় বিলীন।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বেহাল দশায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৬ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজবিশিষ্ট এই প্রাচীন মসজিদটি। প্রাচীন ও ইসলামিক ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শনটির নাম ‘কাদিরবক্স মন্ডল মসজিদ’। এই নামেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে তালিকাভুক্ত হয়েছে স্থাপনাটি। তবে পৌনে পাঁচশ বছর পুরোনো মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।

এলাকার অনেকেই জানেন না এটা মসজিদ। প্রাচীন স্থাপত্য, নকশা ও আরবি হরফ মুদ্রিত দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কে কখন এটি নির্মাণ করেছেন তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদটি ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন করার দাবি এলাকাবাসীর।

পলাশবাড়ী পৌরশহরের জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড় থেকে আধা কিলোমিটার দূরে নুনিয়াগাড়ি গ্রামে অবস্থান মসজিদটির। চুন, সুরকি ও ইটের তৈরি প্রায় পৌনে পাঁচশ বছরের পুরোনো এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের ভেতরে রয়েছে একটিমাত্র কক্ষ। একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন ইমামসহ পাঁচজন। ভেতরে জায়গা রয়েছে মাত্র ছয় ফুট। তবে এখন আর নামাজ আদায় করা হয় না এই মসজিদে।

কথা হয় নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মালেক মিয়ার (৬৫) সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুনেছি এই মসজিদের ভেতরে ইমামসহ পাঁচজন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। তবে লোকজন বেশি হলে মসজিদের সামনে চট বিছিয়ে নামাজ পড়তেন মুসল্লিরা। পরে লোকজন বেশি হওয়ায় এই নামেই পাশে আরেকটি মসজিদ তৈরি করেন এলাকাবাসী।’

স্থানীয় আরেক প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুর রহিম (৭২) বলেন, ‘আমাদের দাদাও বলতে পারেননি আসলে কতদিন আগের এই মসজিদ। দাদার কাছে জেনেছি, তিনিও নাকি শুনেছেন ৪০০-৫০০ বছরের পুরোনো হবে মসজিদটি।’

মসজিদটির ইতিহাস উদ্ঘাটন কমিটির সদস্য, মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ও মন্ডল পরিবারের সদস্য আব্দুল মতিন মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ধারণা করা হয় এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলের। বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও সরকারিভাবে মসজিদটির ইতিহাস উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মসজিদটি পরিদর্শন করেন। ইতিহাস উদ্ঘাটনে স্থানীয়দের নিয়ে ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। তারা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করেন, এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে নির্মিত। এই নবাবের আমলে নির্মিত মসজিদ দুটির স্থাপত্যশৈলীর কিছুটা ছাপ পাওয়া যায় পলাশবাড়ীর প্রাচীন এ মসজিদে।

নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান বলেন, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। ২০১৩ সালের ২ জুন মসজিদটি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে এটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

রেজানুর রহমান আরও বলেন, মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্ব পাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীন মসজিদটি দেখতে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করেন।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান বলেন, মসজিদটির বিষয়ে তার জানা নেই। পরিদর্শন করে সংস্কারের মাধ্যমে এটি গাইবান্ধার ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
#জাগো নিউজ

Place your advertisement here
Place your advertisement here