• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

দিনাজপুরের বাজারে অপরিপক্ব লিচু  

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী লিচুর রাজ্য খ্যাত দিনাজপুর জেলায় পরিপক্ক লিচু বাজারে উঠতে আরও এক মাস বাকি। কিন্তু এখনই বাজারে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। এই অপরিপক্ব লিচুতে রয়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি। এমনকি শিশুদের মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বাজারে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি হলেও কোনো তদারকি নেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের।

কয়েকদিন ধরেই দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করছেন সদর উপজেলার জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। কয়েকদিন ধরে তিনি প্রায় ৪ হাজারের বেশি অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করেছেন। শুধু ইসমাইল হোসেনই নন, দিনাজপুর শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করা হচ্ছে।

লিচু কিনতে আসা ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, বছরের প্রথম লিচু আজ বাজারে দেখলাম। এই সময়ে বাজারে লিচু পাওয়া যাবে তা আমার ধারণা ছিল না। লিচুগুলো ঠিকমতো পাকেনি। খেতেও টক। তারপরও পরিবারের লোকজনের জন্য ৫০টা লিচু নিলাম।

বিরল উপজেলার মাধবমাটি গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লিচুচাষি বলেন, আমাদের এই গ্রামের লিচু সাধারণত বাজারে প্রথম দিকে ওঠানোর টার্গেট নেওয়া হয়। এর জন্য ফাইটার, ক্যারোটে, যুবাস, রিভা, এমিস্টার টপসহ ইত্যাদি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এতে লিচু পরিপক্ক হওয়ার আগে গায়ে রং চলে আসে। ফলে ক্রেতারা পরিপক্ক লিচু ভেবে অপরিপক্ব লিচু কিনে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে অতিরিক্ত কীটনাশক দেওয়া অপরিপক্ব লিচু খেয়ে বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলট দাসপাড়া গ্রামের গজেন চন্দ্র দাসের ছেলে ফুল কুমার (২), একই এলাকার সেনগ্রামের মো. আব্দুল হকের মেয়ে মোছা. শামিমা (৫), সনকা গ্রামের মো. আবু তালেবের ছেলে মো. মামুন (৫), সাদুল্ল্যাপাড়া ধোপা ডাঙ্গা গ্রামের মো. রবি চাঁনের ছেলে মো. স্বপন আলী (৫), বিরল উপজেলার মিলন (১৮ মাস), সামিউল (৩) ও সাকিব (৩), খানসামা উপজেলার রিমি (৪), চিরিরবন্দর উপজেলার আবু সায়েম (৪), কাহারোল উপাজেলার ইয়াসমিন (৫) এবং পার্বতীপুর উপজেলার জেরিন (৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

২০১৭ সালের ২৪ জুলাই ‘আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’র প্রতিবেদনে সেসময় চাষিরা লিচুতে বিষাক্ত কীটনাশক এনডোসালফেন ব্যবহার করায় তা শিশুদের পেটে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রকাশ করা হয়।

তারও আগে ২০১২ সালের ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় মোট ১৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়। এরা হলো- বিরল উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মো. সোহাগের মেয়ে সায়লা (৬), রামপুর গ্রামের কামরুল ইসলামের ছেলে নুর কিবরিয়া (৪), মাধববাটী গ্রামের মানিক চন্দ্র রায়ের মেয়ে তাপসী রানী রায় (২ বছর ৬ মাস), রুনিয়া গ্রামের তৈবুর রহমানের মেয়ে তাসমিমা (১০), দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে বোরহান (২), পারগাঁও গ্রামের হেপনা সরেনের ছেলে নয়ন সরেন (২), আকবরপুর গ্রামের ধলা বাবু রায়ের ছেলে ধনঞ্জয় রায় (৬), বড়ইল গ্রামের নিশিত রায়ের মেয়ে সুবর্না রায় (৫), চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের মার্কুশর ছেলে সাগর (৪), একই উপজেলার কাসের আহমেদের মেয়ে নার্গিস (৬), খানসামা উপজেলার চককাঞ্চনপুর গ্রামের মো. শাহজাহানের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৬) এবং একই উপজেলার রামনগর গ্রামের রঞ্জন দাসের ছেলে রিপন দাস (১০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, বর্তমানে আমাদের দেশে অপরিপক্ব কোনো ফলই খাওয়া ঠিক না। কেননা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ফলকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার জন্য অত্যধিক পরিমাণ ক্যামিকেল মেশান। এছাড়াও অনেকে ফলের দাম বেশি পাওয়ার জন্য ক্যামিকেল মিশিয়ে আগেই পাকিয়ে বাজারজাত করেন। তেমনই একটি ফল লিচু। অধিক মুনাফার আশায় অসাধু চাষি ও ব্যবসায়ীরা লিচুতে অধিক পরিমাণ ক্যামিকেল মিশিয়ে ফলের রং তাড়াতাড়ি এনে বাজারজাত করেন। এটা খেলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যে লিচু পাওয়া যাচ্ছে তা অপরিপক্ব। তাই আমি ভোক্তাদের এই অপরিপক্ব লিচু খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করবো। বাগানীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় লিচুগুলোতে কীটনাশক প্রয়োগ করে বাজারে বিক্রি করে। এই অপরিপক্ব লিচু খেলে মানুষের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অপরিপক্ব লিচু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক শিশুদের জন্য। এমনকি এই লিচু খেলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মাসের শেষের দিকে প্রথম দফার লিচু বাজারে উঠতে শুরু করবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান জানান, দিনাজপুরে লিচু ভাঙার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব লিচু বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে দিনাজপুরের লিচু নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সেই মিটিংয়ে লিচু নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের অফিসার মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, দিনাজপুর শহরের কয়েকটি জায়গায় অপরিপক্ব লিচু বিক্রি হচ্ছে তা আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে কৃষি অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এছাড়াও জেলা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
#জাগো নিউজ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here