• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

সবাইকে কাঁদিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়লেন জার্মান জামাই

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

সবুজ-শ্যামল গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্য দেখতেই বাংলাদেশে ফেরা জার্মান নাগরিক ড. প্যাট্রিক মুলারের। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লালমনিরহাটে এসে পরিবারসহ গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন এ জার্মান নাগরিক। প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে ধান মাড়াই, লুঙ্গি-গামছা পরে পুকুরে জাল ফেলে মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজ করে স্থানীয়দের তাক লাগিয়েছেন তিনি। খেয়েছেন বাঙালি খাবারও।

প্রায় ১৫ দিনের সফর শেষে শনিবার নিজ দেশের উদ্দেশ্যে শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছেন ড. প্যাট্রিক মুলার। তবে বিদায় নেয়ার দৃশ্য ছিল বেদনার। বাংলার মানুষের মায়া ত্যাগ করায় নিজে যেমন কেঁদেছেন, শ্বশুরবাড়ি ও এলাকার লোকজনকেও কাঁদিয়েছেন তিনি। মেয়ে জামাই আর নাতিকে বিদায় দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার শ্বশুর-শাশুড়ি।

শনিবার দুপুরে পরিবার নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন লালমনিরহাটের মেয়ে মৌসুমি আক্তার ইভা ও জার্মান নাগরিক ড. প্যাট্রিক মুলার দম্পতি। রোববার সকাল ৬টার ফ্লাইটে তারা জার্মানিতে রওনা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইভার বাবা আখতার হোসেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানিতে যান ইভা। সেখানে গিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি নেন তিনি। ওই সময় রেস্তোরাঁয় আসা-যাওয়া ছিল অর্থনীতিতে পিএইচডি করা ড. প্যাট্রিক মুলারের। একপর্যায়ে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এভাবেই ভালোলাগাটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নেয়।

ছয় মাস প্রেমের পর পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন প্যাট্রিক-ইভা। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের কোলজুড়ে ফুটফুটে পুত্রসন্তান আসে। ছেলের নাম রাখেন ইউহান।

প্যাট্রিক বর্তমানে বার্লিনে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘ চার বছরের সংসার জীবনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের রূপ দেখে মুগ্ধ হন এ জার্মান জামাই। ইভার পরিবারকে নিয়ে ঈদ করতে চান প্যাট্রিক। তাই ইভা বাড়িতে জানালেন স্বামী ড. প্যাট্রিক মুলার ও ছেলেসহ দেশে আসছেন।

২৯ এপ্রিল শ্বশুরবাড়ি লালমনিরহাটে বেড়াতে আসেন এ জার্মান জামাই। জামাইকে ধুমধাম করে বরণ করেন লালমনিরহাট শহরের স্টেডিয়াম পাড়া এলাকার লোকজন। শ্বশুরবাড়িতে প্রথম এসেছেন জার্মান জামাই। তাই সব ধরনের চাইনিজ খাবার রান্না করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু জার্মান জামাইয়ের আবদার বাঙালি খাবারের স্বাদ নেবেন। বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংসসহ নানা খাদ্যের সমাহার টেবিলে দেন। হাত দিয়ে বাঙালির মতো খাবারও খান তিনি। এসব দেখে ইভার পরিবার আশ্চর্য হন।

শুধু তাই নয়, গ্রাম ঘুরে দেখতে ঈদের পরদিন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের একটি গ্রামে যান। গ্রামীণ পরিবেশের গ্রামীণ মানুষদের সঙ্গে ধান কাটা, ধান মাড়াই, পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা, গ্রামীণ পথে বাইসাইকেল চালানো কোনোটার মজা বাদ দেননি প্যাট্রিক মুলার।

স্ত্রী ইভাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামীণ দৃশ্যে বাংলা গানের শুটিং করতেও ভোলেননি। গ্রামে ঘুরতে গিয়ে খেয়েছেন পান ও চুন। প্যাট্রিকের সরলতায় মুগ্ধ গ্রামবাসী।

ঢাকায় ফেরার আগে মৌসুমি আক্তার ইভা বলেন, অর্থনীতিতে পিএইচডি করা ড. প্যাট্রিক মুলার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। যার যে ধর্ম সে হিসাবে পালন করছি। একজন ভালো মানুষ হওয়ায় আমি তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি। বাঙালি রীতি মেনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এখনো করা হয়নি।

ড. প্যাট্রিক মুলার বলেন, বাংলাদেশের মানুষের পোশাকসহ নানা ধরনের খাবার তার মন কেড়েছে। তিনি সবার কাছে তার পরিবারের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘুরে কেমন লেগেছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্যাট্রিক বলেন, ফেসবুক-ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশের গ্রামের রঙ দেখেছি। বাস্তবে এত সুন্দর দেশ আর কোথাও নেই।

লালমনিরহাট শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা ইভার বাবা আখতার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর সন্তান যখন বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না। আর জার্মান নাগরিক জামাই পরিবারকে রেখে আমাদের সঙ্গে ঈদ করেছে, এটিও অনেক বড় পাওয়া আমাদের জন্য। তিনি এত ভদ্র আচরণ করেছেন সবার সঙ্গে যা ভাবাই যায় না। আমার মেয়ে ও জামাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

লালমনিরহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন বলেন, জার্মান নাগরিক লালমনিরহাটের জামাই হয়েছেন এটা জেলার জন্য গর্বের কথা। ওই পরিবারের এক দাওয়াত অনুষ্ঠানে গিয়ে জার্মান নাগরিক ড. প্যাট্রিক মুলার ও মৌসুমি আক্তার ইভার সঙ্গে কথা বলেছি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here