• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন চলছে ছামিনার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের সবুজ পাড়ার ছামিনা আক্তারের। সংসার জীবনের শুরু থেকেই ছামিনা আক্তারকে সইতে হয়েছিলো স্বামীর নির্যাতন। দুই ছেলে সন্তানের জন্মের পর বিবাহ্ বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। এমতাবস্তায় সন্তানদের ভরণ পোষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ছামিনা। কিন্তু অভাব অনটন থেমে রাখতে পারিনি তাকে।

স্থানীয় যুব উন্নয়ন সংস্থা থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এখন তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। বেসরকারিভাবে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও খুলেছেন তিনি। একজন সফল নারী হিসেবে বেশ কয়েকটি শ্রেষ্ঠ জয়িতার খেতাবও পেয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিবাহ্ বিচ্ছেদের পর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ছামিনা আক্তার গ্রহণ করেন কারিগরি প্রশিক্ষণ। নিজেকে যুক্ত করেন সেলাই এমব্রয়ডারি, জরিক, বাটিকসহ নানান কাজে। একটু একটু করে ছামিনার জীবনে বয়ে আনে সফলতা। নিজের পাশাপাশি অবহেলিত নারীদের সফলতা বয়ে আনতে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রশিক্ষক হিসেবে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও খুলে বসেছেন ছোট্ট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ছামিনার প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি বেশ কয়েকজন বেকার নারীর। শুধু তাতে থেমে নেই তিনি। নিজেকে সুশিক্ষিত করতে ভর্তি হয়েছিলেন একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে। সম্প্রতি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক র্জন করেছেন তিনি। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে গড়ে ওঠা ভুক্তভোগী এই নারী উদ্যোক্তা এখন বিরোধিতা করছেন বাল্যবিবাহের।

ছামিনা আক্তার বলেন, ‘জীবনটা অনেক কষ্টের। হাজারও কষ্ট উপেক্ষা করে আজ আমি এই পর্যায়ে। তবে ভালো লাগে যখন একজন অবহেলিত নারীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দক্ষ করতে পেরে। তবে সব বাবা মায়ের উচিত নিজেদের মেয়েকে শিক্ষার পাশাপাশি কোন একটা কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া। যাতে স্বামীর সংসারে গিয়ে তারা নিজেরাও কোন কিছু করতে পারে। স্বামীর উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। তবে সকল বাবা-মার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, যেন তাদের ছেলে কিংবা মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত না করে যাতে কেউ বিয়ে না দেয়। অল্প বয়সে বিয়ে হলে অনেকে সংসার কি বুঝে উঠতে পারে না।’

সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এস, এম, হাবীব মর্তুজা বলেন, আমরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে দুই ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকি। একটা প্রতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আরেকটা অপ্রতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। প্রতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণগুলো আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হয়, অপ্রতিষ্ঠানিকগুলো স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণগুলো করে থাকি।

সামিনা আমাদের এখানে প্রতিষ্ঠানিক টেনিং করেন। তিনি নীলফামারী থেকে চার মাসের একটা র্কোস ডোমার উপজেলায় পরিচালিত হলে সেখানে তিনি অংশ গ্রহণ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রথম ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। কিছুদিন পর তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। আমি তখন তাকে উদ্বদ্ধ করি তাকে লেখাপড়া শুরু করতে। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী পাস করেন।

তিনি আরও বলেন, সামিনা তার দুঃখটাকে পরশ পাথর হিসেবে গ্রহণ করে আজকে সে স্বাবলম্বী হয়েছে। তার একটা সো-রুম রয়েছে আমাদের উপজেলা পরিষদের মার্কেটে। তার ওখানে অনেক অসহায় মেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সামিনা আমাদের এখানে একটা উন্নয়নের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করছে। তাকে দেখে অন্যান্য বেকার যুব মহিলারা উদ্বদ্ধ হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এরকম অসংখ্য সামিনা যুব উন্নয়নের মাধ্যমে তৈরি করেছি।

ডোমার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) নূরন্নাহার শাহাজাদী বলেন, সামিনা একবার জয়িতা হয়েছিলেন। উনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, আমাদের থেকে তাকে উদ্বদ্ধ হতে যথেষ্ট সাহায্য করা হয়েছে। তাকে দেখে ডোমারের পিছিয়ে পড়া নারীরা এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here