• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

রংপুরে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

দুই বছর পর করোনা সংকট ও দুঃসময় পেরিয়ে ঈদের আনন্দে সবাই ঘুরছে ইচ্ছেমতো। রংপুরে ঈদের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও কাটছে হইচই আর আনন্দমুখর পরিবেশে। জেলার দর্শনীয় স্থান, বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলো এখন লোকে লোকারণ্য।
 
সকাল থেকে রংপুরের দর্শনীয় স্থান, বিনোদন কেন্দ্র ও শিশু পার্কগুলো ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল দেখা গেছে। দু-একটিতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও বাকি বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কে গুনতে হচ্ছে দর্শনীর বিনিময়। ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সবার মুখে আনন্দের ছাপ।

বিশেষ করে শিশুদের উচ্ছ্বাসটা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাদের হইচই আর উল্লাসে প্রাণ ফিরেছে কিছুদিন আগেও জনসমাগম শূন্য থাকা দর্শনীয় স্থান, বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলোতে। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ঈদের আনন্দে বেরিয়েছেন অভিভাবকরাও। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রংপুর চিড়িয়াখানা বিনোদন উদ্যানসহ রংপুর শিশুপার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্কে টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। টিকিট কেটে প্রবেশ করতেও যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

এছাড়াও রংপুর নগরীর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, টাউন হল চত্বর, কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া মহিপুর শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টসহ রংপুর জিলা স্কুল মাঠ, বৈশাখী বটতলা, ক্যান্ট পাবলিক কলেজ সংলগ্ন ফ্লাইওভার, আরএএমসি  চত্বরসহ নগরীর দর্শনীয় স্থানজুড়ে এখন মানুষ আর মানুষ। এসব স্থানে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

রংপুর চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় হেঁটে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখি দেখছেন। বড়রা তাদের শিশুসন্তানকে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বাঘের খাঁচা শূন্য থাকলেও ভিড় ছিল সিংহের খাঁচার সামনে। পশুর রাজাকে দেখে শিশুরাও বেশ খুশি। বানরের ভেংচি কাটা আর লাফালাফি দেখতে বানরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়।  এছাড়া কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তি, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখিসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল জটলা।

চিড়িয়াখানায় রয়েছে আলাদা শিশুপার্ক। সেখানে টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে লম্বা লাইনে হাঁপিয়ে উঠছেন অনেকেই। পার্কের ভেতরে দলবদ্ধভাবে ঘুরছিল শিশু জান্নাত, সিলভিয়া, সিরাত, সিদরাতুল মুনতাহা, পৃথিবী, ফারহানা ও ফাহিম মুরশেদ। তাদের মধ্যে কথা হয় মুনতাহার সঙ্গে। ১৪ বছরের এই শিশু বলে, ঈদের দিন বৃষ্টি হবে ভেবে আমরা ঘুরতে বের হইনি। আজ সবাই মিলে বের হয়েছি। শিশু পার্কে আসার আগে সুরভী উদ্যান ঘুরেছি। আমরা খুব আনন্দ করছি, মজাও হচ্ছে বেশ। তবে শিশু পার্কে টিকিট কেটে ঢুকতে অনেক সময় লেগেছে। রাইডগুলো ফাঁকা নেই, সবখানে ভিড় আর ভিড়।

একই চিত্র রংপুর মহানগর থেকে একটু দূরের খলেয়া গুঞ্জিপুরের ভিন্নজগত, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়াভুবন, কাউনিয়ার তিস্তা পার্ক, পীরগাছার আলী বাবা থিম পার্কেও। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে ঈদ উদযাপনের খোরাক যোগাচ্ছে এসব বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান।  

রংপুরের বদরগঞ্জ রোডে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নিসবেতগঞ্জের রক্ত গৌরব চত্বর এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক। ঘাঘট নদীর অংশবিশেষসহ পার্শ্ববর্তী বিস্তৃত নিচু এলাকায় সবুজে সাজানো এই বিশাল পার্কের পরিবেশ কোলাহলমুক্ত। এ পার্কটি সেনা সদস্যদের নিখুঁত কারিগরি পরিকল্পনায় বাঁশ ব্যবহার করে সাজানো। পার্কসহ ঘাঘটের আশপাশ ঘুরে দেখতে সেখানে ভিড় করছে বিনোদন পিপাসুরা।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রংপুর বেতার কেন্দ্রের কোলঘেঁষে নির্মিত রংপুর সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক। সেখানে বিশাল চিকলিবিলের আশপাশ ঘিরে সাজানো হয়েছে শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করার মতো নানা আয়োজন। বিলের বুকে স্পিডবোট চলছে দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ওপাশ। হই হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সবাই। আর স্পিডবোটের ছুটে চলার বেগে বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে বিলের দুই কূলে। ছিটকে আসা জলরাশিতে মজা করছেন ছোট-বড় সববয়সী মানুষ। এই পার্কের বিপরীতে হনুমানতলা রোডে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন চিকলি ওয়াটার পার্ক।

রংপুর নগর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে কাউনিয়া তিস্তা রেলসেতু। এটি জেলার শতবর্ষী একটি পুরাতন রেলসেতু। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই রেলওয়ে সেতুর পাশে ২০১২ সালে তিস্তা সড়ক সেতু তৈরি করা হয়েছে। গোধূলীবেলার মায়াবী সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীদের আড্ডার আসর জমছে তিস্তাপাড়ে। তিস্তা বাজার সড়কে নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন তিস্তাপার্ক। নদীময় প্রকৃতিতে স্বস্তির বিনোদন পেতে এখানে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের আগানোগা বেড়েছে।

একই চিত্র গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে। তিস্তা নদীবেষ্টিত এই ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু। এই সেতুর নিচের একপ্রান্তে পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। সেতুর আরেকপ্রান্তে বিশাল বালুচর। মনোরম পরিবেশে নদীর বুকে পাল তোলা নৌকায় উঠে ঘুরছে অনেকেই। আবার কেউ কেউ ধুধু বালুচরে প্রিয়জনের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে গল্প করে সময় কাটাচ্ছে। এখানে সেতুর দুই প্রান্তে একটি ভাসমান ও অভিজাত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মুখরোচক বাহারি খাবারের দোকান।

এদিকে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার  জানান, সরকারি বিধিনিষেধ না থাকায় চিড়িয়াখানাসহ রংপুরের সকল বিনোদন কেন্দ্র খোলা রয়েছে। দুই বছর পর শিশু-কিশোরাসহ সব বয়সী মানুষ এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ঘুরতে বেরিয়েছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here