• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

গাইবান্ধা জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আসাদুজ্জামান গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভবনটি এতটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ভেতরে গেলে চোখে পড়ে ছাদে ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার চিত্র। দেখা মেলে আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বড় ফাটল।

দোতলা ভবনের ২২ কক্ষের পাঁচটিই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট  ১৭টি কক্ষের প্রায় সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬৬ সালে এক একর জমির ওপর আসাদুজ্জামান গার্লস হাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৮ সালে ২২ কক্ষের দ্বিতল ভবনটি নির্মাণের পর থেকে এখানেই স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০০৩ সালে স্কুলটিতে কলেজ শাখা চালু করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট তিনতলা ভিতবিশিষ্ট তিন কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে। পরে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব অর্থায়নে দোতলার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে তিনতলা ভিতবিশিষ্ট তিন কক্ষের আরো একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে জেলা পরিষদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে স্কুল শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৫০ জন আর কলেজ শাখায় রয়েছে ৩৫০ শিক্ষার্থী। স্কুল শাখায় শিক্ষক রয়েছেন ২০ জন এবং কলেজ শাখায় শিক্ষক আছেন ১১ জন।

বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ১৯৬৬ সালে নির্মিত বিদ্যালয় ভবনটিতে ২০০৮ সালে ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে ধীরে ধীরে শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টির সময়ে ছাদ চুয়ে পানি পড়ছে মেঝেতে। অনেক কক্ষের দরজা-জানালা নেই। ফলে সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পাঠদান চালু রাখার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি কক্ষে চলছে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯৬৮ সালে স্কুলের উত্তর ও পশ্চিম অংশজুড়ে ২২ কক্ষের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবনে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। এর মধ্যে নিচতলার একটি কক্ষে অধ্যক্ষ বসেন, দুটি সহকারী শিক্ষকদের বসার কক্ষ, একটি অফিসকক্ষ, একটিতে লাইব্রেরি, একটি নামাজের ঘরসহ সাতটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এই সাতটি শ্রেণিকক্ষের দুটি ২০১৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। অবশিষ্ট পাঁচটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওপরতলার ৯টি কক্ষের তিনটিকে ২০০৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। অবশিষ্ট ছয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও কক্ষগুলোতে এখনো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।

নবম শ্রেণির ছাত্রী শিমলী খাতুন জানায়, ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝেই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে।

শিক্ষক মৃণাল কান্তি সরকার জানান, প্রায় ১২ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকে তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। এতে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী সরকার জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ের মূল ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে শিক্ষার মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষার্থীরা আরো স্কুলবিমুখ হবে এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। দ্রুত এ ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প পাঠদানের পদক্ষেপ নিতে গত বছরের অক্টোবরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, পৌরসভার মেয়র, গণপূর্ত বিভাগ ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিদর্শন করেছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ্ মাঈনুল ইসলাম শিল্পু পরিস্থিতি স্বীকার করে জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

Place your advertisement here
Place your advertisement here