• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

গাইবান্ধায় খাদ্যসামগ্রী পেল ১৫০০ পরিবার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের দুয়ারে পৌঁছাতে হবে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা। আর সে লক্ষ্যে ছুটছেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের একদল স্বেচ্ছাসেবী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার বালাসীঘাটে পৌঁছে স্বেচ্ছাসেবী দলটি। একটি ট্রলারযোগে ফজলুপুর ইউনিয়নের কোচখালী চরে নিয়ে যাওয়া হয় বসুন্ধরার চাল-ডাল-আটার প্যাকেজ।

প্রতিবছর বন্যা এলেই ব্রহ্মপুত্র নদের স্রোতে কোচখালী চরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নদের স্রোতে ভেসে আসে বানভাসি মানুষের আহাজারি। নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায় মাথা গোঁজার ঠাঁই। একরের পর একর ফসলি জমি চলে যায় নদীগর্ভে। নিঃস্ব হয় চরাঞ্চলের মানুষগুলো। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দুই বেলা খাদ্য সংস্থান। গতকাল কোচখালী ও গুপ্তমণি চরে অসহায় ৩০০ পরিবারকে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে শুভসংঘ।

দুই বছর ধরে গুপ্তমণি চরে থাকেন শাহাব উদ্দিন। তাঁর মতো আরো অনেকেই এখানকার চরাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। করোনা মহামারির এই সময়ে প্রান্তিক এই অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এর আগে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘এক চরে কয়েক বছর থাকি। এরপর অন্য চরে চলে যাই। নদীর ভাঙনেই আমরা সর্বস্বহারা। টাকা-পয়সা জমাতে পারি না। ঘর-দুয়ার গড়তে পারি না। দুই বেলা খাবারও জোটে না। করোনার মধ্যে কেউ কোনো সাহায্যও দেয় নাই এবার। আপনারা চাল-ডাল-আটা দিলেন। কয় দিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেতে পারব।’

আলেয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের বাড়িঘর ভাঙে। কোনোমতে বাড়িঘর বানালেও তা রক্ষা পায় না। তিন-চার মাস ধরে ভাঙছে। আমরা ঠিকমতো খাবার পাই না। কচুঘেচু শাকপাতা খাই। আজ আপনারা খাবার দিলেন। খুব উপকার হইল। বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করি।’

পলাশবাড়ী উপজেলায় গত সোমবার ৩০০ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ত্রাণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে গাইবান্ধা জেলায় শুভসংঘের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর গতকাল সকালে সদরে ৩০০, ফুলছড়িতে ৩০০, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৩০০ মানুষসহ জেলায় মোট দেড় হাজার হতদরিদ্রের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয় এবং করোনা সুরক্ষায় সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।

‘শুভ কাজে সবার পাশে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি। নাম মো. আবদুল হাই’—শুভসংঘের দেওয়া টোকেন এভাবেই পড়ে শোনাচ্ছিলেন ৮৫ পেরোনো আব্দুল হাই। আগে কৃষিকাজ করলেও এখন পথে-ঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল আর কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করেন। এভাবে সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় এসব বিক্রি করে তা দিয়ে স্ত্রীসহ জীবনের শেষ সময়টা পাড়ি দিচ্ছেন এই বৃদ্ধ। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ত্রাণ হাতে পেয়ে ছলছল চোখে আবদুল হাই বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বাঁচায় রাখুক বাবা। বসুন্ধরা গ্রুপ আরো অনেক বড় হোক। তোমাদের এই সাহায্যে ১৫ দিন খাইতে পারুম।’

সৈয়দুন্নেছা নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘মানুষের কাছে সাহায্য চায়া খাই বাবা। চাইলে চাউল-ডাউল দেয়, টাকা-পয়সা দেয়। তা দিয়া ওষুধ কিন্না খাই। তোমাদের সাহায্য দিয়া এলা এলা পাক করি খাওয়া পামু।’

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, ‘আমাদের উপজেলার অতিদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। শুভসংঘ পলাশবাড়ী উপজেলার সদস্যরা খুব কষ্ট করে সমাজের সবচেয়ে অভাবী মানুষগুলোর কাছে এই খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ায় তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।’

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলাকালে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন, থানার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান, পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মাহমুদা চৌধুরী, পলাশবাড়ী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক হামিদুল হক, পলাশবাড়ী উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি আকতারুজ্জামান রিজন, সাধারণ সম্পাদক শাকিল রহমান সাজ্জাদ এবং শুভসংঘের সানজিদা আক্তার, গোলাম মোস্তফা কামাল, রেজওয়ানা ইসলাম রিতু, নাজমুন্নাহার পিংকি, সিদ্দিকুর রহমান, মারুফা আক্তার, দিপা অধিকারী, তুন্না আক্তার, জান্নাতুন রাহামনি, সজিব মিয়া, শাওন আকন্দ, মিজানুর রহমান ফরিদ, তারেক রহমান কাওসার, শাহ কামাল, আনিন সরকার, রাব্বি ইসলাম, জান্নাতে সাইয়াতুন নেসা, নাহিদ হাসান প্রমুখ।

গাইবান্ধার শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলাকালে সেখানে এসেছিলেন আজহার আলি। তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সংবাদপত্র বিক্রি করেন। এতে সংসারটা মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যেত। কিন্তু দেশে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ত্রাণ পেয়ে আজহার বলেন, ‘সংবাদপত্র বিক্রি করে আগে দিনে এক হাজার টাকা আয় হতো। এখন ২০০ টাকাও হয় না। খুব অভাবে সংসার চলছে। কেউ কোনো সাহায্য করে না। কালের কণ্ঠ’র সাহায্য পেলাম আজ। তাদের জন্য দোয়া রইল।’

রিকশাচালক ছকমাল মিয়ার পরিবারে সাত সদস্য। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি একা। ছকমাল বলেন, ‘বাইরে গাড়ি চলবার দেয় না। ছোট রাস্তা দিয়া রিকশা চালাইয়া দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কামাই করি। তাতে জীবন আর চলে না। বসুন্ধরা গ্রুপ আজকে সাহায্য দিল। তাদের মালিকের জন্য দোয়া করি।’

স্টেডিয়াম মাঠে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম উপকারভোগীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আপনাদের খাদ্যদ্রব্য উপহার হিসেবে দিয়েছে। আপনাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারা সব সময় আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে। দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আপনারা করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। মাস্ক পরবেন। জ্বর-কাশি হলে একা থাকবেন। সবাই ভ্যাকসিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন।’

ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক আবু হুরাইরা আতিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ, জসিম উদ্দীন, আরবি আক্তার প্রমুখ।

কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বলেন, ‘অতিদরিদ্র ও কর্মহীনদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গে শুভসংঘের সদস্যরা অনেক কষ্ট করে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। তাদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা রইল।’ করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তিনি উপকারভোগীদের প্রতি আহ্বান জানান। এখানে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন ফুলছড়ির ইউএনও আবু রায়হান দোলন, কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান রোকন প্রমুখ।

পা হারিয়ে এক দশক ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটেন মিজান উদ্দিন। পরিবারে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। খাদ্য সহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর সাহায্য পাইলাম। করোনার মধ্যে একলগে এত খাওয়া কেউ দেয় নাই। যে দিছে তারে যেন আল্লাহ ভালো করে।’ আরেক উপকারভোগী হাকিম মিয়াও নিজের খুশির কথা জানান।

ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদ আল হাসান বলেন, ‘এমন মানবিক কার্যক্রমের জন্য আমরা কালের কণ্ঠ শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে প্রত্যাশা করি।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সুন্দরগঞ্জ ডি ডাব্লিউ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম হাবীব সরকার, ওসি আব্দুল্লাহিল জামান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি নূর মোহাম্মদ রাফি, সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান সাগরসহ শুভসংঘের মাহবুব রহমান রনি, সাজ্জাদ হোসেন শাওন, নূর আলম মিয়া নূর, নূর নেওয়াজ আহমেদ মাহিন, ইফতেখার রহমান, অমিত দাস, মারুফ সরকার, মাইদুল ইসলাম মিম, গোলাম মাওলা বাধন, সোহেল রানা, আল মাহমুদ আসাদ, সুমন রায়, রম্য, রুবেল মিয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রান্ত, সোহাগ, রাহুল, পান্থ, অনিক, নিশান, রুবাই, আমিনুল, মুরাদ, পাপ্পু প্রমুখ।

ত্রাণ বিতরণের সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, গাইবান্ধা জেলার সভাপতি তৌহিদা মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস লতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল ইসলাম সাকিব, সাংগঠনিক সম্পাদক রওজাতুন্নাহার লাবণ্য, দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুর রহমান নয়ন, প্রচার সম্পাদক সারাফ সোহাইবা নিহা, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক উম্মে কুলছুম তালুকদার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক দেবী সাহা, নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রিসাত, সদস্য উম্মে সালমা বৃষ্টি, তানহা প্রমুখ।

Place your advertisement here
Place your advertisement here