• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

কারমাইকেলে দুর্লভ ‘কাইজেলিয়া’

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

রংপুর কারমাইকেল কলেজের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সামনে পড়বে একটি ছায়াঘেরা সড়ক। এরপর কিছুদূর হাঁটলে দর্শনার্থীদের চোখ আটকে যাবে একটি সাইনবোর্ডে। এতে মোটা অক্ষরে লেখা 'দাঁড়াও পথিকবর- আমার নাম কাইজেলিয়া।

এ কলেজে দুটি বড় কাইজেলিয়া রয়েছে। একটি গাছ প্রধান ফটক থেকে ৫০০ গজ দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিপরীতে। অপরটি কলেজ মসজিদের সামনে। ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ দেখতে আসা দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা কাইজেলিয়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে এর আত্মকথা শোনেন। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন, গাছের সঙ্গে ছবি তোলেন। এ গাছটির আদি নিবাস সেনেগালের দক্ষিণাঞ্চলে। আফ্রিকার বাইরে এটি খুবই দুর্লভ। পৃথিবীর বিরল প্রজাতির গাছের মধ্যে অন্যতম এটি।
 
কাইজেলিয়া তার আত্মকথায় বলেছে, আমি বিগনোনিয়াসিস গোত্রের। আমার বৈজ্ঞানিক নাম কাইজেলিয়া আফ্রিকানা। আমার বাস আফ্রিকা হলেও, এই কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে কতিপয় বৃক্ষপ্রেমিক আমাকে আনুমানিক ১৯২০ সালের দিকে এখানে রোপণ করেছিলেন। কারমাইকেল কলেজ ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও আমাকে দেখতে পাবে না। আমার উচ্চতা ২০-২৫ মিটার। ফুল হয় মেরুন অথবা কালচে লাল রঙের। ফল লম্বাটে ও গোলাকার। এর একেকটির ওজন ৫-১০ কেজি হয়। আমার ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রং, পাকলে বাদামি। এই ফল বিষাক্ত, তবে অত্যন্ত রোচক। এটি প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সিফিলিস, সর্পদংশনের ওষুধ, বাত, ছত্রাক দমন, চর্মরোগ, মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায়ও বহুল ব্যবহৃত হয়। এশিয়ায় আমি এখন বিলুপ্তপ্রায়। যদি তোমরা সঠিক পরিচর্যা না কর, তবে অচিরেই আমি নিঃশেষ হয়ে যাব। আমাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমাদেরই।

এ কলেজে দুটি বড় কাইজেলিয়া রয়েছে। একটি গাছ প্রধান ফটক থেকে ৫০০ গজ দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিপরীতে। অপরটি কলেজ মসজিদের সামনে। ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ দেখতে আসা দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা কাইজেলিয়ার ছায়ায় দাঁড়িয়ে এর আত্মকথা শোনেন। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন, গাছের সঙ্গে ছবি তোলেন।

গৌরবের এ গাছটিকে অমরত্ব দিতে কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা-সংস্কৃতি সংসদ (কাকাশিস)। প্রতি বছর এ সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কাইজেলিয়ার নামকে সবার সম্মুখে তুলে ধরছেন। এতে দিন দিন কাইজেলিয়াকে জানার আগ্রহ বাড়ছে কলেজের শিক্ষার্থীদের।

এ গাছের পরাগায়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হওয়ায় এতদিন এর চারা উদ্ভাবন করা যায়নি। তবে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সফল হয়েছেন এই কলেজের মালি বাটুল সিং। তিনি কাইজেলিয়ার ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা উদ্ভাবনের চেষ্টা করে সফল হন। তিনি গাছটির চারা উৎপাদন করে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন।

বাটুল সিং জানান, প্রায় এক যুগ ধরে সনাতন পদ্ধতিতেই বিলুপ্ত কাইজেলিয়ার চারা উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছেন। অবশেষে ২০১৫ সালের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি চারা উৎপাদন করতে সক্ষম হন। এ গাছের চারা কলেজের রসায়ন ভবন, উদ্ভিদবিজ্ঞান ভবনসহ ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি স্থানে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, রংপুর জেলা প্রশাসকের বাংলো, পুলিশ সুপারের বাংলো, পাটগ্রাম সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের মিঠাপুকুর পায়রাবন্দ রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে এর চারা সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি চান প্রতিটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি করে হলেও এ গাছের চারা রোপণ করে কাইজেলিয়াকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে।

সাবেক শিক্ষার্থী হাসনাইন আহমেদ নয়ন বলেন, কারমাইকেল কলেজের গৌরব-ঐতিহ্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে কাইজেলিয়া। কলেজে আসা-যাওয়ার পথে এ গাছের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন অন্তত দুইবার দেখা হয়। তাই ক্যাম্পাসে গাছের কথা উঠলেই প্রথমে উচ্চারিত হয় কাইজেলিয়ার নাম।

কাকাশিসের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুক বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল কৃষিবিজ্ঞানী টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বিলুপ্ত কাইজেলিয়ার বেশ কয়েকটি চারা উদ্ভাবন করেছিলেন। পরে চারাগুলোকে বাঁচানো যায়নি। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও বৃক্ষপ্রেমী দর্শনার্থীরা কারমাইকেল কলেজের কাইজেলিয়া গাছ দেখতে আসেন। তারা কাকাশিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দুর্লভ গাছকে সবার সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, কাইজেলিয়া বিরল প্রজাতির একটি ঔষুধি গাছ। বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে থাকায় এর চারা উৎপাদনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। প্রতিদিন ক্যাম্পাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ গাছ দেখতে আসেন পর্যটকরা। বৃক্ষপ্রেমীরা এর চারা সংগ্রহের জন্য মাঝে মাঝেই খোঁজ-খবর নেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যে জানা যায়, কাইজেলিয়ার তাজা ফল মানুষের জন্য বিষাক্ত। কিন্তু এটি শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে গাছের ছাল, ফুল ও ফলের নির্যাস ত্বকের যত্নে অনেক উপকারী। যেসব অঞ্চলে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে গাছটি চিরহরিৎ হয়। 

Place your advertisement here
Place your advertisement here