• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

শ্রম বিক্রি করতে পারছেন না রংপুরের শ্রমজীবীরা

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

কাজ করার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বসে থাকলেও শ্রম বিক্রি করতে পারছেন না রংপুরের শ্রমজীবীরা। প্রতি বছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে রংপুর অঞ্চলে কাজের অভাব দেখা দেয়। কাজের আশায় এসব শ্রমজীবী মানুষ রংপুর নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশে বসে থাকেন। তারা প্রতিদিন ভোরে কাজের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে সাইকেলে, অটো রিকশায়, হেঁটে আসেন নগরীর শ্রম বিক্রির এলাকাগুলোতে। তবে অল্প কিছু মানুষের শ্রম বিক্রি হলেও বেশির ভাগের ভাগ্যে জোটে না কাজ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হয়।

নগরীর শাপলা চত্বর, বেতপট্টি, ধাপ, মেডিকেল মোড়, টার্মিনাল,গণেশপুর, লালবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রংপুর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের আশায় শ্রমিক হাটগুলোতে ভিড় করছেন। কাজের উপর হিসেবে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ডালি-কোদাল, ব্যাগ, খুনতিসহ বিভিন্ন উপকরণ।  

নগরীর বেতপট্টি এলাকায় শ্রমিক হটে শ্রম বিক্রি করতে আসা বাহারকাছনা এলাকার তফিকুল বলেন, কাজের জন্য আমি প্রতিদিন এখানে আসি। সপ্তাহে ৩-৪ দিন কাজে জোটে। গত ৪ দিন থেকে কোনো কাজ হাতে আসেনি।  প্রতি বছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কাজ কম থাকে। এ দুই মাস আমাদের কষ্ট করে চলতে হয়। কাজ পেলে খাই, না পেলে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। 

পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের হাউদার পার এলাকার এলাকার নুর আলম বলেন ,এখন ধান কাটা শুরু হয়নি, আলুও নেই। গ্রামে কোনো কাজ নেই। বসে থাকতে হয়। তাই কাজের আশায় প্রতিদিন শহরে আসি। ভাগ্য ভালো হলে কাজ জোটে না হলে নেই। কষ্টে সংসার চলছে। 

আব্দুল হক নামে আর এক শ্রমজীবী বলেন, যাদের কাজের প্রয়োজন তারা এসে ডেকে নিয়ে যায়। ৪০০ টাকার শ্রম এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। উপায় নেই। বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতে হবে।

শ্রমিকরা জানান, এখানে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই’শ শ্রমিক আসে। যার শ্রমিক প্রয়োজন তারা এসে দাম দর করে নিয়ে যায়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় ৬ লাখ মৌসুমী শ্রমিক রয়েছে। এসব শ্রমিক শহরে রিকশা, ভ্যান অথবা অন্য কোনো পেশা গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব মৌসুমী শ্রমিক ধানের মৌসুমে শুধু নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় গিয়ে ধান কাটা মাড়াই করে বাড়তি আয় করেন। 

অর্থনীতিবিদ রোকেয়া তাবাসুম মৌ জানান, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ভারী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই।  রংপুর অঞ্চলকে অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।  শিল্পে এ অঞ্চলে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। শুধু কৃষির উপর নির্ভরতার কারণেই কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এ কারণে শ্রমিক এবং দরিদ্রতার হার বাড়ছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দরিদ্রের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। এরমধ্যে রংপুর জেলাতেই ৪৪ শতাংশ। 

অর্থনীতিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, রংপুর বিভাগের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। ভারী কোনো কলকারখানা নেই। রংপুর বিভাগ শিল্পায়নে অনেক পিছিয়ে আছে। এখানে শিল্পায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে। গার্মেন্টস শিল্প হচ্ছে শ্রমঘন শিল্প, রংপুর বিভাগের শ্রম এক্ষেত্রে সহায়ক। এ অঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্প স্থাপন করা হলে এখানকার দরিদ্র জনসাধারণের আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে। 

রংপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মঞ্জরুল আজাদ বলেন, রংপুর অঞ্চলে বেকারত্ব দূর করতে গেলে কৃষি শিল্পের বাইরে ভারী, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প কারখানা তৈরি করতে হবে। নর্থবেঙ্গলের জন্য ৫ বছর বা ১০ বছর মেয়াদি একটি পলিসি নিতে হবে। যেটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। নর্থ বেঙ্গলকে এগিয়ে নিতে গেলে অবশ্যই নর্থবেঙ্গল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দরকার। তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব এবং সামাজিক বৈষম্য দূর হবে, বেকারত্ব কমে যাবে। এজন্য শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই।

Place your advertisement here
Place your advertisement here