• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

হাতে ভর দিয়েই স্নাতক সম্পন্ন, এখন বাকি স্বপ্নপূরণ

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

জন্মের পর থেকেই তার একটি পা নেই। অন্যটি থেকেও অচল। হাত দিয়েই চলাফেরা। তবুও শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছেন অদম্য মেধাবি আম্বিয়া আক্তার শোভা। ইতোমধ্যে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বেশ দখল রয়েছে তার।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের আনিছার রহমান ও দুলালী বেগম দম্পতির এক মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে বড় শোভা। অভাবের সংসার হলেও তারা তিনজনই পড়াশোনা করছেন। বাবা আনিছার রহমান বাড়ির পাশেই শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক এবং মা গৃহিণী।

বাড়ির পাশেই শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শোভার লেখাপড়া শুরু। প্রতিদিন বাবার পিঠে চড়ে ক্লাস করে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পাশেই শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন শোভা। সেখানেও বাবার পিঠে, তারপর দু’হাতের তলায় স্যান্ডেল দিয়ে হেঁটে স্কুল-বাড়ি যাতায়াত করেন। অভাবের সংসারে খাবার জোটানো দায় হলেও শোভার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে ধার-দেনা করে মেয়েকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেন আনিছার। এভাবেই ২০১২ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৩.৩১ পেয়ে পাস করেন শোভা।

স্কুলে টিফিনের ফাঁকে গান গেয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করতেন। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বরাবরই পুরস্কার পেয়েছেন শোভা। সহপাঠীদের সহানুভূতিশীল মনোভাব আর শিক্ষকদের আন্তরিকতায় পথ চলতে উৎসাহ বাড়ে শোভার।

এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে খালাশপীর বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। বাড়ি থেকে রিকশা-ভ্যানে কলেজের গেট পর্যন্ত পৌঁছাতেন। পরে হাতে ভর করে মাঠ পেরিয়ে কমনরুম, ক্লাসরুম এবং সিঁড়ি বেয়ে ওপর তলায় ক্লাস করতে হয়েছে তাকে।

২০১৪ সালে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪ এবং ২০১৯ এ ডিগ্রি পাস করেন। কলেজেও ক্লাসের অবসরে গান গাইতেন। ভরাট গলায় ‘এই মাটির বুকে লুকিয়ে আছে, লক্ষ মুক্তি সেনা, দে না তোরা দে না’ কিংবা ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’সহ আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গান গেয়ে মুগ্ধ করতেন বন্ধুদের।

কষ্ট করে হাতের ওপর ভর দিয়ে চলাচল করলেও তার স্বপ্ন পূরণের কী হবে? এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খায় শোভা।

শোভা জানান, লেখাপড়া শিখে শিক্ষকতা করার স্বপ্ন তার। কিন্তু স্বপ্ন কি পূরণ হবে? সেই দুশ্চিতায় সান্ত্বনা পাওয়ার জন্যই গান করেন।

শোভা আরও জানান, দিনদিন শরীরের ওজন বাড়ছে। হাত দিয়ে বেশি হাঁটলে হাত খুব ব্যথা করে। মা রাত জেগে হাত টিপে দেন।

মা দুলালী বেগম বলেন, মেয়েটার (শোভা) পড়ালেখার প্রতি ভীষণ আগ্রহ থাকায় অন্যের সাহায্যে পড়িয়েছি। সে শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পায়।

বাবা আনিছার রহমান বলেন, আমার নিজের জমি নেই। অভাব হলেও মেয়েকে ডিগ্রি পাস করিয়েছি। এখন একটা ভালো চাকরি হলে মেয়েটার প্রচেষ্টা স্বার্থক হতো।

তিনি বলেন, দুই ছেলের মধ্যে সৌরভ আহমেদ বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে গণিতে সম্মান ৩য় বর্ষে এবং আহসান হাবিব সহিদ একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।

খালাশপীর বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোমিনুল ইসলাম বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী শোভাকে কলেজের বিভিন্ন স্তরে সহায়তা করেছি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সরকার প্রতিবন্ধীদের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আন্তরিক। ওদের জন্য আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে আমি শোভাকে সহায়তা দিয়েছি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here